অথবা, গণপরিষদের ১ম অধিবেশন বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব হওয়ার পর সংগত কারণেই একটি সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা সর্বাগ্রে অনুভূত হয়। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠনের অব্যবহিত পরই আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান প্রণয়নের কাজে উদ্যোগী হন। নিচে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন : ১৯৭০ সালের জাতীয় ও ১৯৭১ সালে প্রাদেশিক পরিষদে বাংলাদেশ থেকে যে সকল সদস্য নির্বাচিত হন তাঁরা সম্মিলিতভাবে গণপরিষদের সদস্য বলে বিবেচিত হবেন। ৪৬৯ জন সদস্যের মধ্যে অযোগ্যতা ও অন্যান্য কারণে কিছু সদস্য অযোগ্য ঘোষিত হয় এবং ৪৩০ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ সাংবিধানিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদ গঠিত হয় এবং ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। প্রথম অধিবেশনে শাহ আবদুল হামিদ ও মোহাম্মদউল্লাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যথাক্রমে গণপরিষদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দিনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি নির্বাচন করা হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জুনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট করতে বলা হয়। খসড়া সংবিধান কমিটি সর্বমোট ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হয়। কমিটির প্রথম বৈঠকের প্রস্তাব অনুযায়ী বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে খসড়া সর্ববিধান সম্পর্কে প্রস্তাব চাওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জুনের বৈঠকে সংবিধানের একটি প্রাথমিক খসড়া অনুমোদিত হয়। যেহেতু বাংলাদেশে সংবিধানের সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে বলে স্থির করা হয়েছিল, সেহেতু ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন দেশ সফর করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কমিটির সভাপতি ১১ জুন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন এবং খসড়া সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ১১ অক্টোবর কমিটি সর্বশেষ আলোচনা করেন এবং ঐদিন সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ খসড়া চূড়ান্ত ভাবে গৃহীত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন। এ অধিবেশনে সংবিধান কমিটি গঠন, সংবিধানের খসড়া প্রণয়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। প্রথম অধিবেশনে সংবিধান প্রণয়নের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। এ অধিবেশনে সংবিধানের খসড়া চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।