স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র সম্পর্কে যা জান লিখ ।

অথবা, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের উৎসাহিত করা ও উজ্জীবিত করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। মুক্তযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র বিভিন্ন দেশাত্মবোধক নাটক, গান, গণসংগীত, জল্লাদের দরবার, চরমপত্র প্রচার করে সর্বত্র বাঙালিদের একত্রিত করতে সহায়ক ছিল।
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ অপরাহে চট্টগ্রামের জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম. এ. হান্নান চট্টগ্রাম বেতারের কালুরঘাট ট্রান্সমিটার থেকে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাটি পড়ে শোনাতে সক্ষম হন। কয়েকজন উদ্যোগী বেতারকর্মীর প্রচেষ্টায় সেদিনই সন্ধ্যাবেলায় বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের জন্ম হয়। ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত হওয়ার পর ৩০ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র
আক্রমণ করে। আক্রমণের পর এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার প্রথমে রায়গড় এরপরে আগরতলা নিয়ে যায় এবং ২৪ মে পর্যন্ত এখান থেকে অনুষ্ঠান প্রচার করে। ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র ভারতের কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং কলকাতা থেকে নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার করতে থাকে। আব্দুল মান্নান এম এন এ এর উপর মুজিবনগর সরকারের কলকাতাস্থ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র পরিচালনার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী ও সমর্থনকারী সকলকে উজ্জীবিত করা এবং উজ্জীবিত রাখা। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের ব্যাপারে সকলকে আশান্বিত করা ছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও অত্যাচারের খবর প্রকাশ করে বিশ্ব জনমত গঠন করত। আবার মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী যে সকল যুদ্ধে বিজয় লাভ করত তার খবর প্রচার করত। এছাড়া মুজিবনগর সরকারের নির্দেশ, ভাষণ, গান, নাটক, কথিকা, চরমপত্র প্রভৃতি প্রচার করত যা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখত। মিডিয়াম ওয়েভ ৩৬১.৪৪ মিটার ব্যান্ডে প্রতি সেকেন্ডে ৮৩০ কিলোসাইকেলে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র হতে অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো।
পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের অসাধারণ ভূমিকা দেশের জনগণকে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করে তুলেছিল । স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের ভূমিকাকে মুক্তিযুদ্ধের ১২নং সেক্টর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।