১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর রণকৌশল সম্পর্কে যা যান লিখ ।

অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর রণকৌশল সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পরপর যুদ্ধকে পরিকল্পিত ও সংগঠিত করার জন্য কর্নেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। মুক্তিবাহিনীর রণনীতি গ্রহণ ছিল মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মুক্তিবাহিনী যে রণনীতি গ্রহণ করে তা মুক্তিযুদ্ধে সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মুক্তিবাহিনীর রণনীতি : মুজিবনগর সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতিটির জন্য একজন নিয়মিত সামরিক বাহিনীর সদস্য নিযুক্ত করা হয়। প্রতিটি সেক্টরে নিয়মিত বাহিনীর সাথে অনিয়মিত বাহিনীর সমন্বয়সাধন করা হয়। এছাড়া গঠন করা হয় তিনটি ফোর্স যা জেড ফোর্স, কে ফোর্স ও এস ফোর্স নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধে যে রণনীতি গ্রহণ করা হয় তার মূল লক্ষ্য হলো যত কম ক্ষতি স্বীকার করে যত অধিকসংখ্যক শত্রু সৈন্য হত্যা করা যায়। মুক্তিবাহিনীর লক্ষ্য ছিল শত্রু সৈন্যকে আক্রমণের পর আক্রমণ করে তাদের সদা ব্যস্ত রাখা। পাকিস্তানি বাহিনীকে ক্লান্ত করে তোলা, মনোবল নষ্ট করা এবং এক পর্যায়ে ক্লান্ত শত্রুকে সমূলে উৎখাত করা। প্রথম দিকে নিয়মিত পদ্ধতিতে যুদ্ধ পরিলক্ষিত হয় কিন্তু নিয়মিত বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কম হওয়ায় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়মিত ও গেরিলা পদ্ধিতে যুদ্ধ চালানোর ফলে জুন মাস থেকে ব্যাপক ভিত্তিতে যুদ্ধ চালানো সম্ভব হয়। শত্রুর শক্তিশালী ঘাঁটিকে বিচ্ছিন্ন করে তাকে সামনে ব্যস্ত রেখে পিছনে বা অন্যদিক দিয়ে ধ্বংস করার কৌশল গৃহীত হয়। অন্যদিকে, যেখানে অধিক শক্তি প্রয়োজন হয় সেখানে যৌথবাহিনী যুদ্ধ করে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ অনেকটা বিপ্লবী চেগুয়েভারার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে রণকৌশল নীতি গ্রহণ করা হয় তা ছিল যুদ্ধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত বাহিনী দ্বারা অস্ত্র সজ্জিত হয়ে সম্মুখে হামলা চালানো। অনিয়মিত বাহিনী দ্বারা অতর্কিত ও গেরিলা আক্রমণ করে শক্তিশালী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নাস্তানাবুদ করে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়, যা যুদ্ধে বিজয় অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।