অথবা, ২৫ মার্চ রাতে কোন প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন?
উত্তরা৷ ভূমিকা : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চই ছিল মূলত স্বাধীনতার ঘোষণা। সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতা ঘোষণায় একমত না হতে পেরে আওয়ামী লীগ ৭ মার্চ পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। এতে বাঙালি জাতি মানসিকভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমতাবস্থায় পাক বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে অতর্কিত নিরীহ বাঙালির উপর হামলা চালায়। এমতাবস্থায় ২৫ মার্চ রাত অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করে অতঃপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও গ্রেফতার : আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জয়ী হলেও পশ্চিম পাকিস্তানি ক্ষমতালোভী ইয়াহিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করতে তালবাহানা শুরু করে। তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় ও ৭ মার্চের ভাষণ ও সবশেষ ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। অতঃপর পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ও পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। এর প্রেক্ষাপট নিচে আলোচনা করা হলো :
১. ৭ মার্চের ভাষণ : রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
২. অসহযোগ আন্দোলন : কার্যত ১ মার্চ হতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সরকারি-বেসরকারি, সচিবালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক, বিমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে।
৩. মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বৈঠক : অবস্থা উপলব্ধি করে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা শুরু করে তখনো অসহযোগ প্রত্যাহার হয়নি। ১৯ মার্চ ভুট্টো আলোচনায় যোগ দেন। ঐকমত্যে ব্যর্থ হয়ে ইয়াহিয়া ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা ত্যাগ করে। তারপরই শুরু হয় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড অপারেশন সার্চলাইট ।
৪. ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট : ২৫ মার্চ রাত এগারোটায় শুরু হয় অপারেশন সার্চলাইট কর্মকাণ্ড। অতর্কিত ঘুমন্ত নিরীহ জাতির উপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও EPR এর উপর গণহত্যা চালায়।
৫. স্বাধীনতা ঘোষণা : ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকবাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালি হত্যায় মত্ত হয়ে উঠে তখন প্রায় রাত দেড়টা অর্থাৎ ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এটাই হয়তো আমার শেষ কথা। আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন। তার এ কথা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৬. জাতির পিতা গ্রেফতার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই বঙ্গবন্ধুকে তার ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়ি হতে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নেওয়া হয় ও অকল্পনীয় অত্যাচার চালানো হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ পরোক্ষভাবে ও ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে প্রত্যক্ষভাবে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সে সময় থেকেই বাঙালি জাতি সর্বত্র মোকাবিলার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর বাঙালি জাতি তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। যার অগ্রনায়ক ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।