ছাত্রদের ১১ দফা দাবির পটভূমি আলোচনা কর।

অথবা, ১১ দফা দাবির পটভূমি লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই শাসনতন্ত্রে পশ্চিম পাকিস্তানিদের কর্তৃত্ব সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় শাসনে তাদের সংখ্যাধিক্য সর্বাধিক ছিল। এ সময় প্রদেশের উপর কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ছিল অত্যধিক। ফলে প্রদেশে শোষণের চিত্র প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষকরে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের শোষণ তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় বাঙালির শোষণ-মুক্তির ইশতেহার প্রণয়ন করেন শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছয়দফা কর্মসূচি নামে পরিচিত। এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলন।
১১ দফা আন্দোলনের পটভূমি : পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী প্রাদেশিক গভর্নর জেনারেলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদ গঠন, দায়িত্ব বণ্টন ও কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করতেন। গভর্নর জেনারেল “The Pakistan Provincial Constitution (Third Amendment Order, 1948)” এর মাধ্যমে এ নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে ‘Public and Representative Offices Disqualification Act’ জারির মাধ্যমে প্রাদেশিক মন্ত্রীদের কার্যত পরাধীন করে রাখা হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসের সদস্যগণ ছিলেন পাকিস্তানি। তারা প্রদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের চাকরি নিয়ন্ত্রণ করতো কেন্দ্রীয় সরকার। সুতরাং তাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না; আবার কেন্দ্রকে সন্তুষ্ট করে তারা শক্তিশালী আমলায় পরিণত হয়। অর্থনৈতিক দিক থেকে কেন্দ্র প্রদেশের উপর নির্ভরশীল থাকলেও উন্নয়নের ব্যাপারে কেন্দ্রকে প্রাধান্য দিত। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় প্রদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। ফলে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি উঠতে থাকে এবং তা
জোরালো রূপ ধারণ করে। আর তাই শেখ মুজিবুর রহমান স্বায়ত্তশাসনের জন্য ছয়দফা আন্দোলনের সূচনা করেন। পাকিস্তান সরকার শুধু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দিক থেকে নয় সাংস্কৃতিক দিক থেকে বাঙালিদের অস্তিত্বে আঘাত হানে। তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররের সাহিত্য নিষিদ্ধ করে এবং রবীন্দ্র সংগীত প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করে। তারা ১৯৬৮ সালে বাংলা ভাষা সংস্কারের নামে সকল আঞ্চলিক ভাষাকে একত্রিত করে যৌথভাবে একটি মহান পাকিস্তানি ভাষা উদ্ভাবন করার প্রস্তাব করেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আবারও ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার প্রতিবাদ গড়ে উঠে। আগরতলা মামলা থেকে বাঙালির যে জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হয়েছিল সেটাও এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তখন রাজনৈতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত ছিল। ভাসানী এ সময় ঘেরাও কর্মসূচি আন্দোলনের ডাক দেন। তার সাথে যুক্ত হয় ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচি। ৬ দফা আন্দোলনের বিস্তারিত রূপই ১১ দফা কর্মসূচি। ৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে এ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বাঙালিদের আর্থ রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ৬ দফা আন্দোলনকে বৃহৎ পরিসরে ১১ দফা আন্দোলনে উপস্থাপন করা হয়। ৬ দফা আন্দোলন তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১১ দফা আন্দোলন ছিল বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ।