অথবা, আগরতলা মামলার প্রতিক্রিয়া আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আইয়ুব খান আগরতলা মামলাকে নিয়েছিলেন তার দূরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে। তিনি চেয়েছিলেন এর মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে এবং পাকিস্তানের জনগণের কাছে শেখ মুজিবুর রহমান বিবেচিত হবেন ভিলেন হিসেবে। বলাবাহুল্য তার এ উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়।
আগরতলা মামলার ফলাফল : নিচে আগরতলা মামলার ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. পাকিস্তানি শাসকদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ : আগরতলা মামলা দায়ের করার সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উপলব্ধি করে তাদের কণ্ঠস্বর রোধ করার উদ্দেশ্য আগরতলা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাদের তীব্র ক্ষোভ জন্মে।
২. বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান : ১৯৬৬ সালের ছয়দফা দাবি উত্থাপনের সাথে সাথে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির এক ও অবিসংবাদিত নেতাতে পরিণত হন। সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই ছিল আইন। শেখ মুজিবুর রহমানের এক ইশারায় বাঙালিরা তাদের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতো না।
৩. পাকিস্তানি সরকারের দুর্বলতার প্রকাশ : আগরতলা মামলার মাধ্যমে পাকিস্তানি সরকারের দুর্বলতার প্রকাশ ঘটে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সবসময়ই ভয় পেত যে বাঙালিরা যেন ক্ষমতায় না আসে। কেননা তারা জানত বাঙালি ক্ষমতায় এলে তাদের শোষণের ইতিহাস সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে যাবে।
৪. বাঙালি সৈনিকদের যোগ্যতার প্রমাণ : আগরতলা মামলার মাধ্যমে এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে বাঙালি সৈন্যরা দেশ সেবার ব্যাপারে কতটা যোগ্য। কোন ধরনের বাধার ফলে বাঙালিরা যে পিছু হটে না তাও এ মামলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।
৫. আইয়ুব খানের পতন : ১৯৬৮ সালে দায়েরকৃত আগরতলা মামলার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে এক গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খান যে উদ্দেশ্যে আগরতলা মামলা দায়ের করেছিলেন তা সফল তো হয় নিই বরং এর ফল হয়েছিল উল্টো। কেননা এ মামলার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানের কারণে আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।