তুমি কী মনে কর ছয়দফা পাকিস্তানের ঐক্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ ছিল?

অথবা, তুমি কী মনে কর ছয়দফা পাকিস্তানের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ ছিল?
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি ছয়দফা দাবি উত্থাপিত হওয়ার পর পরই পাকিস্তানের বিভিন্ন মহল একে বিচ্ছিন্নতার দাবি ও এর উত্থাপনকারী শেখ মুজিবুর রহমানকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যা দিতে থাকে। এমনকি তারা ছয়দফাভিত্তিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
ছয়দফা পাকিস্তানের ঐক্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ কি না : ছয়দফার কোথাও পাকিস্তান ভাঙার কথা ছিল না বা পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার কথা ছিল না বা এর প্রণেতা শেখ মুজিবুর রহমান কখনো পাকিস্তান থেকে পৃথক হওয়ার ঘোষণা করেননি। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়েছিলেন যেটা পূর্বেই লাহোর প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
ইয়াহিয়া মন্ত্রিসভার সদস্য জি. ডব্লিউ. চৌধুরী মন্তব্য করেন “মুজিবের ছয়দফা পর্দার অন্তরালের বিচ্ছিন্নতার পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।” অবশ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবদুল ওদুদ ভূঁইয়া বলেছেন, “ছয়দফা দাবি কোনদিনই পাকিস্তান হতে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি ছিল না। এটা শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।” ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব
পাকিস্তানকে বঞ্চিত ও শোষণের প্রতিবাদস্বরূপ ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলায় স্বায়ত্তশাসনাধিকার সম্বলিত ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পাকিস্তানের শোষকশ্রেণি কোন অবস্থাতে ছয়দফা দাবি মানতে রাজি ছিল না। তাই ছয়দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে সরকার বাঙালিদের উপর কঠোর দমননীতি অনুসরণ করে। কিন্তু দুর্বার বাঙালি তাতে মাথা নত না করে ছয়দফাভিত্তিক গণআন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয় এবং শেষপর্যন্ত এ গণঅভ্যুত্থান সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্জন করে। তাই বলা যায় ছয়দফার মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ছয়দফা দাবির মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন। মোটেই এটা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঐক্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ ছিল না।