১৯৬৬ সালের ছয়দফার পটভূমি আলোচনা কর ।

অথবা, ১৯৬৬ সালের ছয়দফার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আচার আচরণ, অর্থনৈতিক শোষণ, জাতিগত নিপীড়ন ও প্রশাসনিক বঞ্চনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীকে ক্রমান্বয়ে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত। এ যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির বাঁচার দাবি ছয়দফা উত্থাপন করেন।
ছয়দফার প্রেক্ষাপট : নিচে ছয়দফার প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক প্রেক্ষাপট : একই রাষ্ট্রের অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যকার ব্যবধান ছিল বিস্তর। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উত্থিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বাঙালি জাতিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ হতে মুক্তি লাভের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে। ফলে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেন।
২. রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট : ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন যুক্তফ্রন্ট নির্বাচিত হয় এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু স্বার্থবাদী পশ্চিম পাকিস্তানি গোষ্ঠী যুক্তফ্রন্টকে কৌশলে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে তাদের শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। বাঙালিদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ ও শোষণ ছয়দফার অন্যতম রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
৩. অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট : প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখানো হয়। পাকিস্তানের বৈদেশিক আয়ের ৭০ শতাংশ আসত পূর্ব পাকিস্তান হতে, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজকোষে জমা হতো মাত্র ২৫ শতাংশ। বাকি অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য খরচ করা হতো।
৪. ধর্মীয় প্রেক্ষাপট : পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তৃতীয় শ্রেণির মুসলমান, ভারতের দালাল, নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের জাত বলে তাদের প্রতি চরম অবহেলা দেখাতো। এরূপ ধর্মীয় অবজ্ঞা ছয়দফার অন্যতম ধর্মীয় প্রেক্ষাপট।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ছয়দফা দাবি উত্থাপনের পিছনে একটি বাস্তব প্রেক্ষাপট বিদ্যমান ছিল । নানা ধরনের শোষণ ও বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যেই শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেন।