আইয়ুব খান প্রণীত মৌলিক গণতন্ত্রের সমালোচনা কর।

অথবা, মৌলিক গণতন্ত্রের সমালোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পাকিস্তানে আইয়ুব খানের শাসনব্যবস্থার অন্যতম দিক ছিল মৌলিক গণতন্ত্র। আইয়ুব খান তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য মৌলিক গণতন্ত্র নামক যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করেন সেটি দেশের জন্য স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়েছে এবং একই সঙ্গে তার পতনের কারণও ছিল মৌলিক গণতন্ত্র।
মৌলিক গণতন্ত্র : আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে সামরিক শাসনের আওতায় মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। চারস্তর বিশিষ্ট এ কাঠামোতে মোট ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচিত হয়। এ মৌলিক গণতন্ত্রীরা দেশের রাষ্ট্রপতিসহ জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচিত করতেন। আইয়ুব খান প্রণীত মৌলিক গণতন্ত্র নীতির সমালোচনা :
১. অভিজাত তন্ত্রের বিকাশ : আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র চালু করে পাকিস্তানে অভিজাততন্ত্রের বিকাশ ঘটায়। সর্বসাধারণের ভোটাধিকার তিনি হরণ করেন।
২. সুবিধাভোগী শ্রেণি সৃষ্টি : আইয়ুব খানের তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রের ফলে পাকিস্তানে সুবিধাভোগী শ্রেণির জন্ম হয়। মৌলিক গণতন্ত্রীরা বিভিন্নভাবে সুবিধা ভোগ করতো।
৩. অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ : আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র ছিল অগণতান্ত্রিক। এ গণতন্ত্রে সকল নাগরিকের ভোটাধিকারের অধিকার ছিল না।
৪. নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা : আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করে এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। এখানে প্রকৃত গণতন্ত্রকে বানচাল করে উপর থেকে নিয়ন্ত্রিত বিশেষ ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
৫. জনগণের ভোটাধিকার হরণ : আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র ছিল প্রকৃত গণতন্ত্রের বিরোধী। মৌলিক গণতন্ত্রে মৌলিক গণতন্ত্রীগণ জনগণের ন্যায়সংগত ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছিল। এর ফলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাপ্রাপ্ত হয়।
৬. দুর্নীতির অবাধ প্রবাহ : আইয়ুব খান প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্র, দুর্নীতির দ্বার উন্মুক্ত করে। পরোক্ষ নির্বাচনে দুর্নীতি অবাধ প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
৭. সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত : আইয়ুব খান প্রণীত মৌলিক গণতন্ত্র সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করেছিল । মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খানের প্রবর্তিত গণতন্ত্র ছিল অভিনব গণতন্ত্র। এ মৌলিক গণতন্ত্রে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। দুর্নীতির অবাধ বিস্তার ঘটে। শাসনব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছার পরিবর্তে মৌলিক গণতন্ত্রীদের স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয়। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ ব্যবস্থার অবসান হয়।