অথবা, ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের তাৎপর্য আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল যুক্ত পাকিস্তানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ আন্দোলন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ শুধু তাদের ন্যায়সংগত দাবিই আদায় করেনি বরং আইয়ুব শাহীর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল । তাই বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনায় এ আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচনার দাবি রাখে।
১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব : নিচে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন : ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পরপরই সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ও রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করেন। এমতাবস্থায় ছাত্ররা আন্দোলন করে এটা প্রমাণ করে দেয় যে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বেশিদিন চলবে না।
২. সংগঠিত আন্দোলন : ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা সংগঠন ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্রভৃতি ছাত্র সংগঠন। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠে যা পরবর্তী আন্দোলনগুলোতে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে সাহায্য করেছিল।
৩. স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান শক্তি : এ আন্দোলনের মাধ্যমে পরবর্তীকালীন সকল আন্দোলনের প্রধান শক্তি হিসেবে রূপান্তরিত হয় বাংলার ছাত্রসমাজ। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চালিকাশক্তিই ছিল বাংলার ছাত্রসমাজ।
৪. আইয়ুব খানের প্রথম পরাজয় : ১৯৬২ সালের ছাত্রদের দাবির মুখে আইয়ুব খান শরিফ কমিশনের রিপোর্ট প্রত্যাহারে বাধ্য হন। যেটা লৌহমানব আইয়ুব খানের কোন বিষয়ে প্রথম পরাজয় ছিল।
৫. এগারো দফার ভিত্তি : ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এগারো দফা আন্দোলনের ভিত্তিস্বরূপ। এ আন্দোলনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও এগারো দফা দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল পরবর্তীকালীন সময়কার সকল ছাত্র আন্দোলনের ভিত্তিস্বরূপ । এ আন্দোলনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই পরবর্তীকালীন সকল আন্দোলনে ছাত্ররা নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিল।