অথবা, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্দোলনে এ অঞ্চলের ছাত্র ও যুব
সমাজের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলো গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের পটভূমি : ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সমসাময়িক শিক্ষা ও রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। তাই এ আন্দোলনের পটভূমিকে শিক্ষা ও রাজনৈতিক এ দু’ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়।
১. শিক্ষা পটভূমি : ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন আইয়ুব বিরোধী শিক্ষা আন্দোলন নামে বিখ্যাত। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত শিক্ষানীতি এ অঞ্চলের ছাত্রসমাজকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিল। পাকিস্তান সরকার মনে করেছিল পূর্ব বাংলায় শিক্ষার অগ্রগতি রোধ করতে পারলে এ অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ স্তিমিত হবে এবং তাদের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশের ভিত্তি দীর্ঘকাল টিকে থাকবে। উল্লেখ্য ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে ১৯৬১-৬২ সাল পর্যন্ত শিক্ষাখাতে পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করার পরও সরকার ১৯৬২ সালের শেষদিকে পাকিস্তানের যে নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করে তাতে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার নিম্নগতিকে আরো ত্বরান্বিত করার কৌশল অনুসরণ করা হয়। ফলে এ অঞ্চলের ছাত্রসমাজ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে।
২. রাজনৈতিক পটভূমি : পাকিস্তান রাষ্ট্রে নামেমাত্র গণতন্ত্র চালু থাকলেও ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির সাথে সাথে তারও অবসান ঘটে। আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর পর সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন এবং রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করেন। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত রাজনীতির উপর এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। উল্লিখিত সময়ে
বাংলার ছাত্রসমাজ রাজনৈতিক নেতাদের শূন্যতা পূরণে এগিয়ে আসে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানিদের শিক্ষার প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব ও সামরিক শাসন জারির প্রেক্ষাপটেই ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল।