অথবা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে সমাজকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি দুঃস্থ মানবতার কল্যাণে কাজ করে। এই এজেন্সিতে সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম অনুশীলনে প্রেরণ করা হয়।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রসমূহ
মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে যেসব কার্যাবলিতে ভূমিকা রাখতে পারে তা নিম্নরূপ :
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ : প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য রেডক্রিসেন্ট সমিতি বাংলাদেশের উপকূল ও দ্বীপাঞ্চলের লোকজনদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ৫০০টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করে। দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০০ জন করে লোক আশ্রয় নিতে পারে। দুর্যোগকালীন সময় ছাড়া বছরের স্বাভাবিক সময়ে এই আশ্রয়গুলোতে শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও সমাজ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগপরবর্তী ও দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষকে তাদের করণীয় সম্পর্কে সচেতন করতে পারে। তাছাড়া স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনেও তারা কাজ করতে পারে যারা দুর্যোগে মানুষকে তথ্য প্রদান, উদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজে সহায়তা করতে পারে।
২. জরুরি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি : রেডক্রিসেন্ট সমিতি দুর্যোগকালে জরুরি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পরিচালিত করে।মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্য কার্যক্রম : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্য কার্যক্রমগুলো হলো :
i. ঢাকার রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল, হলিফ্যামিলি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় নার্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন;
ii. মা ও শিশুদের জন্য মাতৃসদন ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন;
iii. শহরভিত্তিক মাতৃসদন হাসপাতাল স্থাপন;
iv. গ্রাম ও শহরভিত্তিক ৪৭১ শয্যাবিশিষ্ট ৫টি জেনারেল হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা।
মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উপর্যুক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগে সহায়তা করতে পারে।
৪. রক্তদান কর্মসূচি : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সমিতির একটি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হলো মুমূর্ষু রোগীদের জীবন রক্ষায় রক্তদান কর্মসূচি। “রক্ত দিন জীবন বাঁচান”- এ স্লোগানের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জনগণকে বিনামূল্যে রক্তদানে জনগণকে উৎসাহিত করে। মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এ ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করতে পারে।
৪. ধাত্রীবিদ্যা ও ধাই প্রশিক্ষণ : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মাতৃসদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এই মাতৃসদন কেন্দ্রের মাধ্যমে সোসাইটি ধাত্রীবিদ্যা ও ধাই সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। সুস্থভাবে সন্তনি জন্মদানের ক্ষেত্রে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারে।
৫. এতিম পুনর্বাসন কর্মসূচি : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এতিমখানা পরিচালনা করে এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, লালনপালন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে থাকে।মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এ ধ
রনের কর্মসূচিতে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারে।
৬. যুব রেডক্রিসেন্ট কার্যক্রম : দেশের কিশোর ও যুবসমাজকে মানবসেবার আদর্শে উৎসাহ প্রদান করে তাদেরকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই এ কর্মসূচির লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সোসাইটি প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যুব রেডক্রিসেন্ট গঠন করেছে। মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এ সমিতি গঠনে সহায়তা করতে পারে।
৭. ন্যূনতম খাদ্য সংস্থান : দুঃস্থ, অসহায় ও উদ্বাস্তু পরিবারের খাদ্য ও শিশু খাদ্য বিতরণ এ কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য।সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এ খাদ্য বিতরণ করা হয়। মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এ কর্মসূচি আরো বিজ্ঞান ভিত্তিতে পরিচালনায় সহাযতা করতে পারে।
৮. ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এদেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চালু করেছে। মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এই কর্মসূচিকে বেগবান করতে সাহায্য করতে পারে।
৯. যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মহিলা কর্মসূচি : বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সমিতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মহিলাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ঢাকায় একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে হাতে বোনার কাজ, নকশা তৈরির কাজ ও টাইপ রাইটিং কাজ শেখানো হয়।মাঠকর্ম অনুশীলনকারী বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এ কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করা ছাড়াও মাঠকর্ম অনুশীলনকারীরা দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এদেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও তারা এই সমিতির কাজে অংশীদার হতে পারে।বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক বা অন্য কোন কারণে নিখোঁজ ব্যক্তির অনুসন্ধান, বন্দি দেশি বিদেশিদের অনুসন্ধান, খোঁজখবর, যোগাযোগ এবং সহায়তা প্রদানে রেডক্রিসেন্ট সমিতি কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রেও মাঠকর্ম অনুশীলনকারীরা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।