পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে মূল্যায়ন কর।
অথবা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বরূপ সংক্ষেপে মূল্যায়ন কর।
এবং উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুটি অংশ অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান একই কাঁঠামোতে মাত্র ২৪ বছর টিকে থাকে। ১৯৭১ সালে এ রাষ্ট্রের পূর্ব অংশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে যেসব সমস্যাবলি বিদ্যমান ছিল তা এ রাষ্ট্রের
বৈশিষ্ট্য আলোচনা করলেই আমাদের নিকট স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য : নিচে পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য তথা ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. ইসলামি প্রজাতন্ত্র : পাকিস্তান সৃষ্টির লক্ষ্যে কায়েদে আজম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতিতত্ত্ব ঘোষণা করেন। এ তত্ত্বের আলোকেই পরবর্তীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চল নিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। যদিও মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতেন না তথাপি পাকিস্তান রাষ্ট্রকে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেন।
২. ভাষা ও সংস্কৃতি : পাকিস্তানে বিভিন্ন জাতির বসবাস ছিল। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ছিল বাঙালি যাদের ভাষা ছিল বাংলা। তদানীন্তন পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষীর আনুপাতিক হার ছিল নিম্নরূপ :

৩. সমাজ কাঠামো : পাকিস্তানে পশ্চিম অংশের লোকজন সাধারণত পাহাড়ি ও রুক্ষ অঞ্চলে বসবাস করতো। ফলে তাদের সমাজ কাঠামো ঐ ভাবে গড়ে উঠেছিল। অন্যদিকে বাঙালিরা সাধারণত সমতল অঞ্চলে বসবাস করতো। ফলে তাদের সমাজ কাঠামো সমতলের সমাজ ও সংস্কৃতির অঞ্চলে গঠিত ছিল ।
৪. সামরিক বেসামরিক আমলাদের দৌরাত্ম্য : পূর্ব পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক কাঠামো ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা সদা তৎপর ছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বেসামরিক আমলাদের ডেকে এনে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত করেন। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সামরিক বেসামরিক আমলাদের দৌরাত্ম্য ছিল অতি সাধারণ ঘটনা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হাজার মাইলের ব্যবধানে দুটি অংশের সমন্বয়ে পাকিস্তান ছিল একটি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রাষ্ট্রটির ভাঙন ত্বরান্বিত করেছিল।