অথবা, ১৯৪৭ সালের আইনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন হলো দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার গ্লানি মাথায় নিয়ে, তারা যে সংগ্রাম ও আন্দোলন পরিচালনা করে, সেই সকল আন্দোলন এর চূড়ান্ত ফলাফল হলো ১৯৪৭ সালের এ আইন।
পটভূমি : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয় এরপর ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা এবং ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা হয়। এদের আন্দোলনের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার তাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ১৯৪০ সাল থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করে। অবশেষে ১৯৪৭ সালে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ৩ জুন একটি পরিকল্পনা পেশ করে। যা পরবর্তীতে ভারত স্বাধীনতা আইনে পরিণত হয়।
ভারত স্বাধীনতা আইন : মাউন্ট ব্যাটেনের ৩ জুন পরিকল্পনা, ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয়ে তা আইনে পরিণত হয়। এ আইন এর মাধ্যমে ভারতে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি হয়।
ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব : ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এ আইন একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। নিচে এর গুরুত্ব দেওয়া হলো :
১. শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধান : ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধানের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং এর মাধ্যমে ভারতের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে এবং দেশ কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে এ সকল জটিল সমস্যার সমাধান হয়।
২. ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি : এ আইনের মাধ্যমে সুদীর্ঘ ১৯০ বছরের ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ভারত মুক্তি লাভ করে।
৩. ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম : ১৮৫৭ সালের প্রথম বিদ্রোহের পর থেকে প্রায় ৯০ বছরের বিভিন্ন আন্দোলন এর মাধ্যমে ভারতবাসী তাদের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত ও দাবিকৃত ২টি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান লাভ করে।
৪. দেশীয় রাজ্যগুলো স্বাধীন : এ আইন এর মাধ্যমে ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলো থেকে ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব লোপ পায়।
৫. গভর্নর ও গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা লোপ : এ আইন এর মাধ্যমে ভারতে গভর্নর ও গভর্নর জেনারেল এর স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা লোপ পায়, ফলে ভারত ও পাকিস্তানের সংসদীয় ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
৬. রক্তপাত ছাড়াই দুটি রাষ্ট্রের জন্ম : সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধ বা বিনা রক্তপাতে এ আইনের মাধ্যমে একটি বিশাল সাম্রাজ্যকে নির্দিষ্ট সীমানায় বিভক্ত করে ২টি রাষ্ট্রের সৃষ্টি করা হয়।
৭. ‘ভারত সম্রাট’ উপাধি লোপ : এ আইন এর মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোন আইনের, ভারতে আর প্রযোজ্য বা কার্যকারিতা থাকে না। ব্রিটিশ পালামেন্ট এর ‘ভারত সম্রাট’ উপাধি লোপ পায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভারতের শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ভারত স্বাধীনতা আইন একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।