স্বদেশী আন্দোলন কী?

অথবা, স্বদেশী আন্দোলন বলতে কী বুঝ?
অথবা, স্বদেশী আন্দোলন কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ব্রিটিশ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে স্বদেশী আন্দোলন ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা। লর্ড কার্জনের সময় ব্রিটিশ সরকার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ বঙ্গভঙ্গ ছিল মুসলমানদের কাছে প্রাণের দাবি আর হিন্দুদের কাছে বিরাট আঘাত। এ বঙ্গভঙ্গকে তারা জাতীয়তাবাদী আঘাত বলে প্রচার করে। এজন্য তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের এক বৃহত্তর অংশকে আধুনিক জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে শামিল করতে সমর্থ হয়। এর ফলে সংঘটিত হয় স্বদেশী আন্দোলন। এ আন্দোলনকে ভারতীয়
জাতীয়তাবাদের প্রথম সুদীপ্ত ঘোষণা বলে উল্লেখ করা যায়।
স্বদেশী আন্দোলন : ব্রিটিশ সরকার প্রশাসনিক সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে বঙ্গবঙ্গ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করে। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতার দরুন ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে যে নতুন প্রস্তাব পেশ করে তা পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশি ক্ষতিকর ছিল। এমতাবস্থায় এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, সরকারের কাছে আবেদন, প্রস্তাব গ্রহণ, প্রতিবাদ জ্ঞাপন কোনো কিছুরই মূল্য নেই। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইংরেজ শাসনের অর্থনৈতিক আওতায় দেশবাসীর যে সর্বনাশ সাধিত হয়েছিল তাতে দেশ জুড়ে অসন্তোষ ক্রমশ যে প্রত্যক্ষ আন্দোলনের পথ সুগম করেছিল এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। উপরন্তু বঙ্গভঙ্গ ঐক্যবদ্ধ বাংলার মানুষের মধ্যে বিভেদের যে বীজ বপন করেছিল তাতে আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। এরই প্রেক্ষিতে শুরু হয় স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন। বয়কট ছিল নেতিবাচক এবং স্বদেশী ছিল ইতিবাচক আন্দোলন। বয়কট ও স্বদেশী এ দুই কর্মপন্থা অবলম্বন করে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন থেকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠে তাই সামগ্রিকভাবে স্বদেশী আন্দোলন নামে পরিচিত |
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মূলত বিংশ শতকের প্রথম দশকে ব্রিটিশ পণ্য বর্জন এবং দেশি পণ্য গ্রহণ করে বাংলার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য যে আন্দোলন গড়ে উঠে সাধারণভাবে সেটাই স্বদেশী আন্দোলন নামে পরিচিত।