বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয় এর কারণ হচ্ছে একের অধিক জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণ আমাদের বাঙালি জাতির মধ্যে রয়েছে। যেহেতু একাধিক জাতির সংমিশ্রণ এই জাতির মধ্যে রয়েছে সেহেতু বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয়ে থাকে। আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে কেউ কালো, কেউ ফর্সা, কেউ আকৃতিতে লম্বা এবং কেউবা খাটো হয়ে থাকেন।
বাঙালি একক কোনো নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠী নয়৷ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ-বিরোধ সমন্বয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণে যারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার হার্বাট রিজলি, পণ্ডিত বিরজাশঙ্কর গুহ, রমাপ্রসাদ চন্দ্র প্রমুখ। পণ্ডিতদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হলো বাঙালি একটি নতুন মিশ্র জাতি। ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রথম যে জনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে তারা নিগ্রোয়েড বা অস্ট্রলেয়েড গ্রেণির অন্তর্গত ৷ ধীরে ধীরে এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রাবিড়, আলপিয়ান, মঙ্গোলয়েড, নার্ডিক, আরব জাতি প্রভৃতি ৷ আর্যরা বাংলায় আসে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আগেই ৷ এরপরেও মিশ্রণ অব্যাহত থাকে। অনেকগুলো জাতির সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গঠিত 1 এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলিম অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।
১… অনার্য-আর্য নরগােষ্ঠী = বাঙালির আদি মানব বা পুরুষদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ৷ যথা : ক… প্রাক আর্য বা অনার্য নরগােষ্ঠী ও খ. আর্য নরগােষ্ঠী ৷
আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলাদেশে অনার্য নরগােষ্ঠীর বাস ছিল। তারাই বাংলার আদি নরগোষ্ঠী ৷ আর্যদের আগমনে সে জীবন উৎকর্ষিত হয়ে উঠে।
আর বাংলার এ অনার্যনরগােষ্ঠীর উৎপত্তি হয় অস্টিক, দ্রাবিড়, আলপীয়, মােঙ্গলীয় এবং নেগ্রিটো ও আরো কয়েকটি জাতির মিশ্রণে ৷ …
২. দ্রাবিড় = মাথা লম্বা, নাক চওড়া ও উন্নত, চুল কাংলা-বাদামি, গায়ের রং কালো থেকে বাদামি, উচ্চতা খাটো, ঠোঁট পুরু, মুখ গহ্বর বড়, মুখাবয়ব তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট। সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা দ্রাবিড় ভাষাভাষী আলপাইন গোত্রের এই নরগােষ্ঠী মূলত ভূমধ্যসাগরীয়।
৩… মঙ্গোলয়েড = গায়ের রং পীতাভ থেকে বাদামি, চুল কালো ও ঋজু, মাথার আকৃতি গোল, নাক চ্যাপ্টা, চোখের পাতা সামনের দিকে ঝোলানো। এ জনগোষ্ঠী দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে এ অঞ্চলে এসেছে। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে এদের মূল বসবাস ৷
8… নার্ডিক = বাঙালি নৃমিশ্রণে অন্য জাতির নাম নার্ডিক। তারা রেদপন্থি আর্য ছিল l ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির উজ্জীবনে এদের অবদান অনেক বেশি ৷ বেদ রচনার পর এদের উৎপত্তি হয়। বাংলা, গুজরটি ও মারাঠায় এদের অবস্থান পাওয়া যায়। এরা ভারতে এসে বন্য পশুদের পােষ মানিয়ে গৃহপালিত জীবে পরিণত করে। এরা ঘোড়া, মেষ, শুকর প্রভৃতি পশু পালন করত ৷ এ জনগোষ্ঠী বাঙালি জাতি গঠনে গুরুতুপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫… নেগ্রিটো = খর্বাকৃতি, কৃষ্ণবর্ণ, কেশ ঊর্ণাবৎ, বেটে, ঠোঁট পুরু ও ঊল্টানাে এবং নাক অতি চ্যাপ্টা। এরা বাংলার জনগোষ্ঠীর প্রথম স্তর। সুন্দরবন, যশোরের বাশঝোড়, ময়মনসিংহ এবং নিম্নবঙ্গের জনের মধ্যে এর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
৬… আস্টিক বা অস্ট্রালয়েড = মাথার গড়ন লম্বা, নাক চওড়া, গায়ের রং মিশমিশে কালো, উচ্চতা বেঁটে কিংবা মধ্যকাকার ৷ এরা ভেড্ডিড ও নিষাদ নামেও পরিচিত | বাঙালির মধ্যে এ জনগোষ্ঠীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ৷ ধারণা করা হয় ৫/৬ হাজার বছর আগে এরা এ অঞ্চলে আসে ৷ র্সাওতাল, কােল, ভীল, মুণ্ডা, ভূমিজ, মালপাহাড়ি, বাউড়ি, চণ্ডাল প্রভৃতি আদি অস্ট্রেলীয়দের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৷ কুড়ি, পণ, পণ্ডা প্রভৃতি হিসাব, চােঙ্গা, পেট করাত, দা, লাউ, লেবু, কলা প্রভৃতি অস্ট্রিক ভাষার শব্দ।
৭. আরব জাতি : সপ্তম ও অষ্টম শতকে আরব জাতি বাংলায় আগমন করে ৷ পরবর্তীতে তুর্কি, আফগান, হাবশি, ইরানি, মোগল মুসলমানরা বাংলায় বসতি স্থাপন করে।
৮. ইউরোপীয় জাতি = ১৬ শতকে ইউরোপীয়রা এখানে এসে বাঙালি জাতি গঠনে অবদান রাখে। এরপর ইংরেজরা বাংলায় আগমন করে বাঙালির নৃমিশ্রণে ভূমিকা রাখে।
৯. আলপাইন = আলপাইন সম্প্রদায় দ্রাবিড়দের পরে ভারতে প্রবেশ করে। বাঙালি, গুজরাটি, মারাঠি ওড়িশি জাতির পূর্বপূরুষদের অনেকেই আলপাইন গোষ্ঠীর লোক ছিল আলপাইনদের কোন কালে দল রাঢ়, সূক্ষ্ম, বঙ্গ, পুণ্ডে প্রভৃতি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে ৷ এরা বিহার, উড়িষ্যা হয়ে কাশী এবং পূর্ব আসামের কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ৷ এদের থেকে বাঙালি জাতির বড় একটা অংশ আসে।
১০… আয় পরবর্ত ধারা = আর্য জাতি ছাড়াও তাদের পরে আলো অনেক জাতি এ অঞ্চলে আগমন করে। তাদের সংমিশ্রণেও বাঙালি জাতি গঠনে সহায়তা করে ৷ পারস্যের তুর্কিস্তান থেকে সাবা জাতির লোকের ভারতে আগমন করে। ভারতে আসার পর তারা
ভারতের পূৰ্বাঞ্চল ও বাংলায় বসতি স্থাপন করে ৷
এভাবে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, আলপীয় জনগোষ্ঠীর সাথে আর্য, মােঙ্গল, আরব ও তুরকীদের সংমিশ্রণে
বাঙালি জাতির উদ্ভব হয় এবং বাঙালি একটি সংকর জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
উত্তর = বাঙালি একক কোনো নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠী নয়৷ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিশ্রণ-বিরোধ সমন্বয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণে যারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার হার্বাট রিজলি, পণ্ডিত বিরজাশঙ্কর গুহ, রমাপ্রসাদ চন্দ্র প্রমুখ। পণ্ডিতদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হলো বাঙালি একটি নতুন মিশ্র জাতি। ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রথম যে জনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে তারা নিগ্রোয়েড বা অস্ট্রলেয়েড গ্রেণির অন্তর্গত ৷ ধীরে ধীরে এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রাবিড়, আলপিয়ান, মঙ্গোলয়েড, নার্ডিক, আরব জাতি প্রভৃতি ৷ আর্যরা বাংলায় আসে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আগেই ৷ এরপরেও মিশ্রণ অব্যাহত থাকে। অনেকগুলো জাতির সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গঠিত 1 এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলিম অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।
১… অনার্য-আর্য নরগােষ্ঠী = বাঙালির আদি মানব বা পুরুষদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ৷ যথা : ক… প্রাক আর্য বা অনার্য নরগােষ্ঠী ও খ. আর্য নরগােষ্ঠী ৷
আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলাদেশে অনার্য নরগােষ্ঠীর বাস ছিল। তারাই বাংলার আদি নরগোষ্ঠী ৷ আর্যদের আগমনে সে জীবন উৎকর্ষিত হয়ে উঠে।