ধর্মীয় সহনশীলতা বলতে কী বুঝ?

অথবা, ধর্মীয় সহনশীলতা কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
কোনো দেশে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এবং অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সহনশীলতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। জনসাধারণের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা থাকলে সব ধর্মের মানুষ একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।
ধর্মীয় সহনশীলতা : ধর্ম এবং সংস্কৃতি পারস্পরিক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ধর্ম যেসর সংস্কৃতিকে সক্রিয়ভাবে প্রভাবিত করে, তেমনি সংস্কৃতি দ্বারাও ধর্ম প্রভাবিত হয়। এক্ষেত্রে ধর্মীয় সহনশীলতার গুরুত্ব রয়েছে। ধর্মীয় সহনশীলতা হলো নিজ ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও অন্য ধর্মকে মেনে নেওয়ার প্রবণতা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি সর্বতোভাবে প্রযোজ্য। বঙ্গদেশে এসে বহিরাগত সব ধর্মই খানিকটা বঙ্গীয় চেহারা নিয়েছে। বঙ্গদেশের হিন্দুধর্ম, বঙ্গীয় হিন্দুধর্ম, বৈষ্ণব ধর্ম, গোড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম, আছে দেবদেবীতে পার্থক্য। ধর্মীয় উৎসবগুলো স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। তেমনি ইসলাম ধর্মও বঙ্গদেশে এসে একটা বঙ্গীয় রূপ নিয়েছিল। প্রথমে সুন্নি ইসলামের তুলনায় সুফিবাদী ইসলামই বেশি জনপ্রিয় ছিল। সুফিবাদের সাথে স্থানীয় অদ্বৈতবাদ এবং যোগের সমন্বয় ঘটেছিল। ইসলাম ধর্মে সংগীত ও যন্ত্রসংগীত নিষিদ্ধ হলেও গ্রামের বাঙালি মুসলমানরা সংগীতকে যথেষ্ট লালন করেছিল। এছাড়া বঙ্গদেশে সহজিয়া, নাথযোগী, বাউল, মুরশিদি ইত্যাদি বহু ধর্ম সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এদের মধ্যে কলহ ও হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না। তারা পরস্পর মিলেমিশে পাশাপাশি বসবাস করত। পাশাপাশি বসবাসের এই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়াকেই ধর্মীয় সহনশীলতা বলা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, ধর্মীয় সহনশীলতা বলতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি বসবাস করার অবস্থাকে বুঝায়। এর মাধ্যমে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের ধর্মীয় ও সামাজিক আচার আচরণ, সংস্কৃতি ইত্যাদির উপর সহনশীল মনোভাব পোষণ করে।