[ad_1]
✍️বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পোন্নয়নের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি দেশের জনগণের মাথাপিছু প্রকৃত আয়ের বৃদ্ধি ও তার উপযোগী অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন বুঝায় । অর্থনীতির এ কাঠামোগত পরিবর্তন বলতে সাধারণত কৃষির মতো প্রাথমিক উৎপাদন খাতের তুলনায় শিল্পখাতের প্রাধান্য বিস্তার এবং জি.ডি.পিতে ও কর্মসংস্থানে শিল্পখাতের অধিক অবদান বুঝায় । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এ দ্রুত শিল্পোন্নয়নই কার্যকরী উন্নয়ন কৌশল বলে স্বীকৃত হয়েছে ।
শিল্পোন্নয়নের গুরুত্ব : শিল্পোন্নয়নই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পোয়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের প্রধান কারণগুলো নিয়ে বর্ণনা করা হলো :
১. ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তি কর্মসংস্থানের উপায় : বাংলাদেশের শ্রমশক্তির আকার প্রায় ৬ কোটি এবং প্রতি বছর তা প্রায় ৪.৫ % হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । কৃষিখাতে বেশি প্রয়োজনাতিরিক্ত শ্রমশক্তি আছে এবং অনেকেই ছদ্মবেশী বেকার । এমতাবস্থায় দেশের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শ্রমশক্তির নিয়োগ কৃষিতে সম্ভবপর নয় । বরং কৃষিখাত থেকে অন্যত্র শ্রমশক্তি স্থানান্তর করা আবশ্যক । অতএব কৃষিখাতের বাইরে বিশেষত শিল্পখাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজনীয় ।
২. জাতীয় আয় বৃদ্ধির উৎস : যে কোন অর্থনীতিতে শিল্পখাত হয় সর্বাধিক গতিশীল । মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি পেলে শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পায় । কিন্তু কৃষিতে জমির সীমাবদ্ধতার কারণে প্রবৃদ্ধির হার বেশি বাড়ানো সম্ভব নয় । আমাদের কৃষিতে প্রযুক্তিক উৎকর্ষের সীমাবদ্ধতা অনুভূত হচ্ছে এবং শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ২ % এ নেমে এসেছে । শীঘ্রই বাংলাদেশের সীমিত পরিমাণ ভূমির সীমাবদ্ধতা কৃষিখাতের প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করে দেবে । ফলে শিল্পোন্নয়নই হবে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির প্রধান উপায় ।
৩. খাদ্য আমদানির জন্য শিল্পের উপর নির্ভরশীলতা : বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ২০ লক্ষ মেঃ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয় । ভবিষ্যতে এ খাদ্য ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে । দেশের খাদ্যের প্রয়োজন মিটানোর জন্য একমাত্র উপায় হবে শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানির বিনিময়ে খাদ্য আমদানি করা ।
৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শিল্পজাত পণ্যের প্রাধান্য : বর্তমানে বিশ্বের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিনিময়কৃত পণ্যের শিল্পজাত দ্রব্যই প্রধান । ১৯৯৫ সালে বিশ্ব বাজারে কেনাবেচা হয় ৪৮৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য এবং তার ৭৫ % ছিল শিল্পজাত দ্রব্য । অতএব অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিল্পায়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে স্থান করে নেয়া ।
৫. শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদায় আয় স্থিতিস্থাপকতা : শিল্পজাত দ্রব্যের আয় স্থিতিস্থাপকতা ১ – এর চেয়ে বেশি । তাই বিশ্বে আয় বৃদ্ধির সাথে শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার প্রসারিত হয় । পক্ষান্তরে , কৃষিজাত দ্রব্যের চাহিদায় আয় স্থিতিস্থাপকতা ১ এর চেয়ে কম । ফলে কৃষিজাত দ্রব্যের বাজার তেমন প্রসারিত হচ্ছে না । তাই বলা যায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পোন্নয়নই প্রকৃষ্ট উপায় ।
৬. অন্যান্য খাতের সাথে শিল্পখাতের অন্বয়ী প্রভাব : কৃষিখাত বা সার্ভিসখাত বিশেষভাবে শিল্পখাতের উপর নির্ভরশীল । সার , যন্ত্রপাতি , গাড়ি ইত্যাদি শিল্পখাতের উপর নির্ভরশীল । অতএব অন্যান্য খাতের সাথে শিল্পখাতের অন্বয়ী সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ । এ কারণে সমগ্র অর্থনীতি উন্নয়নের জন্য প্রথমে শিল্পোন্নয়ন প্রয়োজন ।
৭. লেনদেন ঘাটতি সংশোধন : বাংলাদেশ স্থায়ী লেনদেন ঘাটতিতে ভোগছে । এমতাবস্থায় বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাস অত্যন্ত প্রয়োজন । কিন্তু আমরা আমদানি বিকল্পন কৌশল অথবা রপ্তানিতাড়িত কৌশল যে কোন কৌশলই অবলম্বন করি না কেন , দ্রুত শিল্পোন্নয়নই হবে লেনদেন ঘাটতি সংশোধনের একমাত্র উপায় ।
৮. অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন : বাংলাদেশের তথা যে কোন স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন । বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জি.ডি.পিতে সার্ভিস খাতের অবদান প্রায় ৪৮ % এ বৃদ্ধি পেয়েছে । কিন্তু শিল্পখাতের অবদান এখনো প্রায় ১৬ % । তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দ্রুত শিল্পোন্নয়ন অত্যাবশক ।
৯. শিল্পে প্রযুক্তিক উৎকর্ষের অধিক অবকাশ : শিল্পখাতে নিত্যনতুন দ্রব্যের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের অফুরন্ত অবকাশ যেমন আছে তেমন অন্য কোন খাত নেই । এ কারণেই অন্যান্য উন্নত দেশের উন্নয়নের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে , অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে শিল্পায়নের কারণে । অতএব বাংলাদেশেরও শিল্পোন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা একান্ত আবশ্যক ।
উপসংহার : উপরের বর্ণনা অনুযায়ী বাংলাদেশ অতি সীমিত ভূমি সম্পদের অধিকারী এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্বের দেশ । তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একমাত্র উপায় দ্রুত শিল্পোন্নয়ন ।
[ad_2]