অর্থনেতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন কার্যক্রম আলোচনা কর ।

[ad_1]

✍️অর্থনেতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন কার্যক্রম আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশে অকৃষিখাতে বিনিয়োগ , উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প , মূলত বেসরকারি খাতে বিস্তৃত । বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন ( বিসিক ) বেসরকারি পর্যায়ে ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে দায়িত্ব পালন করছে । এ লক্ষ্যে বিসিক কর্তৃক উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন সহায়ক সেবা ও সুযোগ সুবিধাদি প্রদান করা হচ্ছে । ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের কার্যক্রম : বিসিকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় ২০১০-১১ অর্থবছরের জানুয়ারি ১১ পর্যন্ত দেশে স্থাপিত মোট ১,২৫০ টি ক্ষুদ্র শিল্প ও ২,৪৮৫ টি কুটির শিল্পে উদ্যোক্তাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে বিনিয়োগকৃত ১২৮.৪৫ কোটি টাকাসহ মোট ২৭১.০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে । উল্লিখিত বিনিয়োগের মধ্যে এককভাবে উদ্যোক্তাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাপই বেশি ।

এছাড়া এ বিনিয়োগের ২৪.২৮ শতাংশ ব্যাংক , বিসিক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সহায়তা এবং ২৮.৩৩ শতাংশ উদ্যোক্তাদের ইক্যুইটি । উল্লিখিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে মোট ৩০,৯৩৭ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে , যার একটি বড় অংশ হচ্ছে নারী । শিল্পোদ্যোক্তাদেরকে অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সারা দেশে অবস্থিত বিসিকের ৭৪ টি শিল্প নগরীতে জানুয়ারি ১১ পর্যন্ত ৫,৫১৪ টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে ৯,৪৭৮ টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে । গত ( ২০০৯-১০ ) পর্যন্ত স্থাপিত শিল্প ইউনিটসমূহে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৪,১৯৯.৪৯ কোটি টাকা । গত অর্থবছরে এ সকল শিল্প কারখানাতে মোট ২৭,৩৬০.৫৪ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়েছিল , যার মধ্যে প্রায় ১৫,২০৩.৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে । এ সময়ে এ সকল শিল্প কারখানা থেকে সরকারি কোষাগারে প্রায় ১,৮৪৯.১৮ কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছে ।

২০১০-১১ অর্থবছরের জ্যানুয়ারি ১১ পর্যন্ত বিসিকের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট , নকশা কেন্দ্র , ১৫ টি নৈপুণ্য বিকাশ কেন্দ্র , ৬৪ টি শিল্পকেন্দ্র এবং অন্যান্য কার্যালয় ও প্রকল্পের আওতায় ৫,১১৬ জন উদ্যোক্তা , কারিগর , ব্যবস্থাপক ও অনুরূপ পর্যায়ের লোককে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে । ২০১০-১১ অর্থবছরে সমুদ্র তীরবর্তী কক্সবাজার চট্টগ্রাম , খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৭০ হাজার একর জমি লবণ চাষের আওতায় আনা হয়েছে । এ সময়ে প্রায় ৪৫ হাজার জন লবণ চাষি , লবণ চাষের সাথে সরাসরি জড়িত হয়েছেন । ২০১০-১১ লবণ মৌসুমের ফেব্রুয়ারি ১১ – পর্যন্ত ২.৪০ মেট্রিক টন লৰণ উৎপাদিত হয়েছে এবং ২৬৭ টি লবণ মিলে সমসংখ্যক আয়োডিন মিশ্রণ প্লান্ট ( এসআইসি ) সরবরাহ করা হয়েছে ।

এছাড়া লবণ মিল মালিকগণ তাঁদের নিজস্ব বিনিয়োগে ৩৯ টি এসআইপি স্থাপন করেছেন । ঢাকা মহানগরীর হাজারিবাগের ট্যানারি শিল্পসমূহকে পরিবেশ বান্ধব স্থানে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সাভার ও কেরানীগঞ্জে ২০০ একর আয়তনের একটি চামড়া শিল্প নগরী স্থাপন করা হয়েছে । এ শিল্প নগরীতে ২০৫ টি প্লান্ট ১৫৪ টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে । এসব শিল্প কারখানায় প্রায় ১ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায় । ২০১১-১২ অর্থবছরে উক্ত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯৫.০০ কোটি টাকা ।

ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিসিকের উদ্যোগে মুন্সীগঞ্জ জেলাধীন গজারিয়া উপজেলায় ২৩৩.৫০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০ একক জমিতে ওষুধ শিল্প পার্ক স্থাপিত হচ্ছে । এ শিল্প পার্কে ৪২ টি ইউনিটে প্রায় ২৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে । প্রকল্পটির অনুকূলে ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬০.০০ কোটি টাকা । বিসিক জামদানি শিল্প নগরীর আদলে তাঁত শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২৩৭.৭২ লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০০৯ থেকে জুন ২০১১ মেয়াদকালে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘ বেনারসি পল্লি উন্নয়ন রংপুর ‘ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্চি শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে ‘ বিসিক শতরঞ্চি শিল্প উন্নয়ন নিশবেতগঞ্জ , রংপুর ‘ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন উপর্যুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করছে ।

✍️বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিল্পোন্নয়নকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার কারণগুলো বর্ণনা কর ।

উত্তর : বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে শিল্পোন্নয়নকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার কারণগুলো নিম্নরূপ :

১. শিল্পের ক্ষেত্রে মূলধন গঠন ও মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে ক্রমে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব । অর্থাৎ শিল্পের ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা সৃষ্টিকারী উপকরণ নেই । আমরা জানি কৃষির ক্ষেত্রে ভূমির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা সম্ভব নয় । কিন্তু শিল্পের ক্ষেত্রে সেরূপ কোন সীমাবদ্ধতা নেই । এ কারণেই সকল উন্নত দেশ শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে । ইংল্যান্ড ও জাপানের মতো স্বল্প ভূমিসম্পন্ন দেশেই শুধু নয় , যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশাল ভূমির অধিকারী দেশেও শিল্পোন্নয়নই ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলমন্ত্র ।

২. ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে না । ভূমির সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশকে খাদ্য আমদানি করতেই হবে এবং তার জন্য শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানির মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধির সুযোগ সীমিত ।

৩. শিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদার আয় স্থিতিস্থাপকতা একের চেয়ে বেশি বিধায় ক্রমে শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার বিস্তৃত হচ্ছে । উন্নয়নের জন্য এ বিস্তৃত বাজার সুযোগ গ্রহণ করা আবশ্যক । পক্ষান্তরে , কৃষিজাত দ্রব্যের আয় স্থিতিস্থাপকতা সাধারণত একের চেয়ে কম বিধায় কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় আয় বৃদ্ধির সুযোগ সীমিত ।

৪. বাংলাদেশে ভূমি সম্পদ অতি সীমিত বিধায় কৃষিতে বাংলাদেশের আপেক্ষিক সুবিধা নেই । বরং বাংলাদেশে মানব সম্পদ প্রচুর বিধায় শ্রমনিবিড় শিল্পে বাংলাদেশের আপেক্ষিক সুবিধা আছে । তাই শিল্পোন্নয়নই হবে উন্নয়নের প্রধান উপায় ।

৫ . বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ বিধায় উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করতে হবে । আর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন শিল্পোন্নয়ন ।

৬ . উন্নত দেশগুলো ক্রমে জটিলতর প্রযুক্তির শিল্পে বিশেষায়ন করছে এবং সহজ প্রযুক্তির শিল্পক্ষেত্র নতুন শিল্পায়িত দেশগুলোর জন্য ছেড়ে দিচ্ছে । বাংলাদেশকে এ সুযোগ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষি উন্নয়নের ও শিল্পোন্নয়ন উভয়ই যদিও উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হবে শিল্পোন্নয়ন । কৃষি প্রদান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের অবকাশ নেই বরং বাংলাদেশকে একটি শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে দাঁড়াতে হবে । এদেশের বিকাশ জনসংখ্যা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি একমাত্র উপায় শিল্পোন্নয় । বাংলাদেশে আশির দশকে সার – সেচ – বীজ প্রযুক্তির প্রয়োগে কৃষি উন্নয়নের বা উৎপাদনে যে দর্শনীয় প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল তা ইতোমধ্যে স্তিমিত হয়ে এসেছে । সীমিত ভূমির কারণে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ইতোমধ্যে অনুভূত হচ্ছে । অতএব অদূর ভবিষ্যতে শিল্পোন্নয়ই হবে বাংলাদেশের আয় বৃদ্ধির একমাত্র উপায় ।

বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নের কৌশল হিসেবে বেসরকারিকরণ নীতির পক্ষে যুক্তি দাও ।

উত্তর ভূমিকা : ১৯৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়নের কৌশল হিসেবে বেসরকারিকরণ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে । ফলে ক্রমে পুঁজি প্রত্যাহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় খাতকে সংকুচিত করে বেসরকারি খাতের অগ্রণী ভূমিকার মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে । বেসরকারিকরণ নীতির পক্ষে যুক্তি : শিল্পখাতের এই বেসরকারিকরণ নীতির পক্ষে প্রধান যুক্তিগুলো নিয়ে বর্ণনা করা হলো ।

. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা : বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় সবকটি নিয়মিত বছরের পর বছর লোকসান দিয়েছে । ফলে সম্প্রতি প্রতি বছর সরকারকে গড়ে প্রায় ২ হাজার ৭ শত কোটি টাকা লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে । রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর এ অচল অবস্থা মারাত্মক অদক্ষতার পরিচয় বহন করে । অতএব রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরাষ্ট্রীয়করণ ও বেসরকারি খাতের উদ্যোগে শিল্পোন্নয়ন যুক্তিযুক্ত মনে করা হয় ।

২. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে আপেক্ষিক সুবিধার অভাব : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত অর্থনীতির আপেক্ষিক সুবিধার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় না । ফলে এগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না । পক্ষান্তরে , বেসরকারি খাতে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান আপেক্ষিক সুবিধার ভিত্তিতে স্থাপিত হয় । যেমন – বাংলাদেশে বেসরকারি খাতকে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করার পর দ্রুত তৈরি পোশাক শিল্পে প্রসার লাভ করছে । বাংলাদেশে সস্তা মহিলা শ্রমিক পাওয়া যায় বলে পোশাক শিল্পের আপেক্ষিক সুবিধা আছে । তাই আন্তর্জাতিক বাজারে এ শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।

৩. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত লোকবল : বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা ও লোকসানের অন্যতম প্রধান কারণ মাত্রাতিরিক্ত লোকবল । এগুলোতে শ্রমিকের তুলনায় দাপ্তরিক কর্মচারীর সংখ্যা বেশি । ফলে এ বিরাট বছরের বেতন দিতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় । পক্ষান্তরে , বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে অনেক কম লোকবল ব্যবহার করা হয় । তাই আশা করা যায় যে বেসরকারি খাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক দক্ষ হবে ।

৪. ব্যক্তি উদ্যোক্তার গতিশীলতা : ব্যক্তি উদ্যোক্তার যে উদ্যোগ নিপুণতা ও গতিশীলতা থাকে তা একজন সরকারি আমলার ক্ষেত্রে সাধারণত আশা করা যায় না । তাই বেসরকারি খাতকে নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা হলে শিল্পোন্নয়ন দ্রুত হবে বলে আশা করা যায় ।

৫. আমদানি বিকল্পনের পরিবর্তে রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন : বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় খাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানত আমদানি বিকল্পন নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । পক্ষান্তরে , বেসরকারি খাতে সাধারণত রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । সম্প্রতি পূর্ব এশীয় কিছু দেশে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের ফলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করা সম্ভব হয়েছে । অতএব বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে শিল্পায়ন হলে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার আশা করা যায় ।

৬. সরকারি চাকরিজীবীদের মানসিকতা : সরকারি চাকরিজীবীদের মন – মানসিকতা ব্যবসার জন্য উপযুক্ত নয় । ব্যবসায় জগতে শুধু দক্ষতার ভিত্তিতে একজন টিকে থাকতে পারে । কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের চাকরি ও পদোন্নতি দক্ষতার উপর ততটা নির্ভরশীল নয় । তাদের চাকরির নিশ্চয়তা অদক্ষার জন্ম দেয় । পক্ষান্তরে বেসরকারি খাতে প্রতি মুহূর্তে দক্ষতা দেখিয়ে চাকরি বজায় রাখতে হয় । তাই বেসরকারি খাতে দ্রুত শিল্পোন্নয়ন আশা করা যায় ।

৭. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরকার অহরহ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হস্তক্ষেপ করে থাকে । বাংলাদেশে দেখা গেছে রাষ্ট্রীয় খাতে সরকার শ্রমিকদের বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে । কিন্তু এ ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত স্বাভাবিকভাবেই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক দক্ষতার পরিপন্থী হয়ে থাকে । পক্ষান্তরে , ব্যক্তি খাতে শিল্পে প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাভক্ষতির নিরীখে শ্রমিকের সংখ্যা , বেতনভাতা ইত্যাদি নির্ণীত হয় । অতএব ব্যক্তি খাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বেশি থাকে ।

৮. সমাজদর্শন : বাংলাদেশে কোন সময়ই সমাজতন্ত্রের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয় নি । বরং এদেশে নব্বই – এর দশকের প্রথম দিকে সকল বড় রাজনৈতিক দল মুক্ত বাজার অর্থনীতির ম্যানিফেস্টো ঘোষণা করেছে । অতএব রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সংকোচন এবং বেসরকারিকরণ এদেশের সমাজদর্শনের সাথে সংগতিপূর্ণ ।

উপসংহার : বাংলাদেশে শিল্পখাতের বেসরকারিকরণের পক্ষে প্রধান যুক্তিগুলো উপরে বর্ণনা করা হলো । আশা করা যাচ্ছে যে উপযুক্ত কারণে বেসরকারিকরণের ফলে শিল্পখাতের উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ।

[ad_2]