বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান কোথায়? সংক্ষেপে এর সীমা আলোচনা কর।
অথবা, বাংলার চারপাশের সীমা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান এ ভূখণ্ডের গঠনগত ইতিহাস দ্বারা নির্ধারিত। অবস্থানগত দিক থেকে বাংলা ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ব পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। পূর্ব-পশ্চিম উত্তরের পাহাড় ও জঙ্গলাকীর্ণ উচ্চ ভূমি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর দ্বারা নির্ধারিত এমন বেষ্টনীর মধ্যেই বাংলার অবস্থান। বাংলার অবস্থান সম্পর্কে নীহাররঞ্জন রায় বলেন, “একদিকে সুউচ্চ পর্বত, দুই দিকে কঠিন শৈলভূমি আর একদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র, মাঝখানে সমভূমির সাম্য এটিই বাঙালির ভৌগোলিক ভাগ্য।”
বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান : আলোচ্যাংশে বাংলা বলতে ১৯৪৭ এর পূর্বের অখণ্ড বাংলাকে বুঝানো হচ্ছে। এ বাংলার মোট আয়তন ৮৪,৮৩২ বর্গমাইল। এর মধ্যে ৩০,৬৯১ বর্গমাইল পশ্চিমবঙ্গ এবং ৫৪,১৪১ বর্গমাইল বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে ছিল বলে ড. হারুনুর রশীদ মনে করেন।
বাংলার উত্তরের সীমা : বাংলা ভূখণ্ডের উত্তর দিকের সীমা নির্ধারণ করেছে হিমালয় পর্বতমালা, হিমালয় সৃষ্টি করেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বিভাজন। হিমালয়ের নিম্ন উপত্যকায় দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা। এ দুই জেলার পশ্চিমে নেপাল, পূর্বে ভুটান রাজ্য সীমা। এছাড়া বাংলার উত্তর-পূর্ব দিকের সীমা ব্রহ্মপুত্র নদী দ্বারা নির্ধারিত।
বাংলার পূর্ব সীমা : বাংলার পূর্ব দিকের সীমা নির্ধারণে পর্বত ও নদীর ভূমিকা অন্যতম। বাংলার পূর্ব সীমার উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ, মধ্যে গারো, খাসিয়া ও জৈন্তিয়া পাহাড়, দক্ষিণে লুসাই, চট্টগ্রাম ও আরাকান শৈলমালা ত্রিপুরা এবং চট্টগ্রাম শৈলশ্রেণি লুসাই জেলা এবং ব্রহ্মদেশ তথা বার্মা থেকে বাংলাকে পৃথক করেছে। একই সাথে এ দুটি শ্রীহট্ট তথা সিলেটকেও ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক করেছে। পূর্ব-দক্ষিণে পর্বতাঞ্চল হলেও বার্মার সাথে প্রাচীনকালে বাংলার যোগাযোগের পথ ছিল।
বাংলার পশ্চিমের সীমানা : বাংলা অঞ্চলের পশ্চিম সীমা আরো বেশি পাহাড় অরণ্য বেষ্টিত। এ সীমার গুরুত্ব কিছুটা এ কারণে বেশি। এ পথ ধরেই বাংলার প্রাণ সঞ্চারিণী গঙ্গা নদী দক্ষিণ-পূর্বাভিমুখী হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে। বাংলার পশ্চিম সীমার রাজমহল ও গঙ্গার দক্ষিণে রয়েছে জঙ্গলময়ভূমি সাঁওতাল পরগনার অবস্থান। হিউয়েন সাঙ একে বাজহুল বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া পশ্চিম সীমান্তে রাজমহল পর্বত হতে এক অনুচ্চ শৈলশ্রেণি এবং গৈরিক পার্বত্যভূমি দক্ষিণে সোজা প্রসারিত হয়ে একেবারে ময়ূরভঞ্জ বালেশ্বর কেওঞ্জুর স্পর্শ করে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ শৈলমালা ও গৈরিক মালভূমিই সাঁওতাল পরগনা, ছোট নাগপুর, মানভূম, সিংভূম এর অরণ্যময় পাহাড়ি উচ্চ ভূমি এবং বাংলার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পশ্চিম সীমা।
বাংলার দক্ষিণের সীমানা : বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অপর একটি প্রাকৃতিক গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার প্রকাশ। বঙ্গোপসাগরের তট ঘিরে রয়েছে মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগনা, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা-ত্রিপুরার দক্ষিণ প্রান্ত এবং নোয়াখালী, চট্টগ্রামের সমতট ভূমির সবুজ আস্তরণ। বাংলার অবস্থানগত চিত্র বর্ণনাকালে বারি এম মরিসন দক্ষিণাঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, নদী বিধৌত পলি দ্বারা গঠিত বাংলা এক বিশাল সমভূমি। এ বিস্তীর্ণ ও উর্বর ভূখণ্ড যেন একটি বিরাট পিরিচের মতো। এ পিরিচের দক্ষিণধার কিছুটা ঢালু, যেখান দিয়ে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনানদী বাহিত উর্বরা পলি একযোগে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা অঞ্চল অবস্থানগত দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব প্রান্তে।অবস্থিত এবং এ বাংলা চারদিকে প্রাকৃতিক বেষ্টনী দ্বারা আবদ্ ধ। তাই ভৌগোলিকভাবে বাংলাকে একটা অঞ্চল বলে ভূগোলবিদরা অবহিত করেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82-2/