[ad_1]
✍️বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের আমদানিনীতির গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যসমূহ কী কী ? বর্তমানে ট্যারিফ হ্রাসকরণে বর্তমান সরকারের গৃহীত কার্যক্রম কী কী ?
উত্তর : বর্তমান আমদানিনীতির গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যসমূহ হলো :
১. WTO ও এর আওতায় বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির ক্রমবিকাশের ধারায় যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তার আলোকে আমদানিনীতিকে আরো সহজ করা ।
২. পণ্যের আমদানির উপর ক্রমান্বয়ে বিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে শিল্পের উপাদান অধিকতর সহজলভ্য করা এবং প্রতিযোগিতা দক্ষতা বৃদ্ধি ।
৩. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারকল্পে অবাধ প্রযুক্তি আমদানির সুবিধা প্রদান ।
৪. রপ্তানি সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে সহজভিত্তিক আমদানি সুবিধা প্রদান করে দেশীয় রপ্তানিকে মজবুত করা ।
৫. গুণগত মান ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ।
৬. জনস্বার্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে আপদকালীন পণ্য আমদানি সম্পূর্ণ । গড় কয়েক বছর যাবৎ সরকারের আমদানিনীতির সুষম বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি নিমিত্তে বিশৃঙ্খলা ও বিক্ষিপ্ত ট্যারিফ ধাপ বহুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে এবং বর্তমানে সমগ্র ট্যারিফ কাঠামো একটি সুসমন্বিত রূপ লাভ করেছে । শুল্ক আইনের সিডিউলে বর্ণিত এম . এফ . এন হারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পৃথকভাবে শুল্ক আইনের ২০ ধারা অনুসারে প্রয়োগকৃত এম . এফ . এন হারের উপর শুল্ক সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে । বর্তমানে এম . এফ . এন ট্যারিফ হারের উপর ৩ প্রকার রেয়াতি শুল্ক হার কার্যকর রয়েছে । যথা :
১. বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক / আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আমদানি ।
২. রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহ নিবন্ধনসমূহ শিল্পের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি ।
৩. নির্দিষ্ট কাজের জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান , যেমন- গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি , ঔষধ , চামড়া ও যন্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাঁচামাল আমদানি । বর্তমানে এম . এফ . এন শুল্ক হারের পাশাপাশি নিম্নলিখিত পণ্যসমূহের ক্ষেত্রে শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে ।
ক . রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানীকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ ।
খ . নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানীকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ।
গ . ঔষধ শিল্প কর্তৃক আমদানীকৃত কাঁচামাল ।
ঘ . টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ।
ঙ . কৃষিখাতে ব্যহৃত উপকরণ ।
চ . কম্পিউটার এবং কম্পিউটারের আনুষ্ঠানিক যন্ত্রপাতি ।
ছ . চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা উপকরণ ।
জ . হাঁসমুরগি খামার কর্তৃক আমদানীকৃত যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ।
ঝ . কৃষিকাজে ব্যবহার্য কীটনাশক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবহৃত কাঁচামাল ।
✍️বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : রপ্তানি উন্নয়নে বর্তমান সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন । উক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে । বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ : বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়নে সরকারি পদক্ষেপসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে , বিশেষ করে রপ্তানিতে , বিশ্বব্যাপী চলমান আর্থিক সঙ্কটের প্রভাব পর্যালোচনা এবং সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার এবং সামগ্রিক ক্ষেত্রে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে । এসব প্যাকেজের আওতাধীন কোন কোন সুবিধার মেয়াদ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে শেষ হয়েছে এবং কোন কোন সুবিধা এখনো বিদ্যমান । এর সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে ।
রপ্তানি উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ :
১. দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ( ইডিএফ ) এর আকার ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার – এ উন্নীত করা হয়েছে ।
২. নতুন পণ্য ( যে কোন বাজারে বিটিএমএ মিল উৎপাদিত প্রত্যক্ষ সুতা ) রপ্তানি ও নতুন বাজার ( আমেরিকা , কানাডা ও ইইউ ব্যতীত অন্য যে কোন বাজারে যে কোন পণ্য ) প্রতিষ্ঠার জন্য রপ্তানি আয়ের ( এফওবি ) উপর বর্ধিত ভর্তুকি হিসেবে প্রথম বছরে ৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৪ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ২ শতাংশ হারে ৩ বছর পর্যন্ত বর্ধিত প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । বিটিএমএ এর জন্য এ সুবিধাটি যে কোন বাজারে প্রত্যক্ষ সুতা রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে ।
৩. বিভিন্ন ব্যাংকের প্রচলিত সার্ভিস চার্জ ও ফি এর ক্ষেত্রে বিদ্যমান বড় ধরনের পার্থক্য নিরসনকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সকল চার্জ ও ফিস এর হার যৌক্তিকীকরণের জন্য ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে ।
৪. রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল হতে একক ঋণগ্রহীতার ঋণের পরিমাণ ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে । এক্ষেত্রে সুদের হার HBOR + 2.5 % এ নির্ধারণ করা হয়েছে ।
৫. জাহাজ নির্মাণ শিল্প একটি সম্ভাবনার রপ্তানি খাত । রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করার নিমিত্তে সম্ভাবনার এ শিল্পকে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে ।
৬. Crust Healther শিল্পে ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে । সরকার কর্তৃক ক্ষুদ্র ও মাঝারি তৈরি পোশাক / বজ্রসামগ্রী ( এসএমই ) রপ্তানিকারকের কতিপয় শর্তাধীনে প্রদত্ত বিশেষ সুবিধার আওতায় অর্থবছরের জন্য বাছাইকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় মূল্য সংযোগ ( এফওবি মূল্যের ২৫ শতাংশ হারে ) এর ২ শতাংশ হারে ( ২০১০-২০১১ বিশেষ সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ।
৭. পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে শুল্ক বন্ড / ডিউটি ড্র – ব্যাক সুবিধা গৃহীত হলে ভর্তুকি সুবিধা না প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে ।
৮. সরকারি ও বেসরকারি খাতের পাটকলসমূহে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি বিল নেগোশিয়েশন / কানেকশনের পাশাপাশি টিটির মাধ্যমে প্রাপ্ত অগ্রিম মূল্যের বিপরীতে ভতুর্কি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ।
৯. আইটি / সফটওয়্যার ফার্মের অনুকূলে কতিপয় ফিস পরিশোধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়াই ১০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে । সুতরাং সরকারের উক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হওয়া একান্ত জরুরি ।
✍️ অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তি দাও ।
উত্তর ভূমিকা : অবাধ বাণিজ্য শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য । তাছাড়া অবধি বাণিজ্য আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রযোজ্য নয় ।
অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে যুক্তি : কোন দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর কোনপ্রকার সরকারি বিধিনিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা না হলে তাকে বলা হয় অবাধ বাণিজ্য । এ অবাধ বাণিজ্যের কারণে দেশে নানাপ্রকারের সুবিধা সৃষ্টি হতে পারে । নিম্নে অবাধ বাণিজ্যের পক্ষের যুক্তিগুলো তুলে ধরা হলো :
১. বৃহদায়ন উৎপাদন : অবাধ বাণিজ্য বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারণে পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে । এতে বৃহদায়তন উৎপাদন সম্ভব হয় । আর বৃহদায়তন উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হলে শিল্পের ভিতর ও বাইরে থেকে বেশকিছু সুবিধা ভোগ করা যায় ।
২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন : অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি , কাঁচামাল ইত্যাদি কম দামে সহজে সংগ্রহ করা যায় । এতে দেশের অভ্যন্তরে শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় যা একটি দেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে ।
৩. সন্তার আমদানি : মুক্ত বাণিজ্য বিভিন্ন দেশের ভোক্তাদের সস্তায় আমদানি দ্রব্য ভোগের সুযোগ করে দিয়ে তাদের ভোগ উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করতে পারে । মুক্ত বাণিজ্যের প্রবক্তারা মনে করেন দ্রব্য ও সেবার মূল্য হ্রাস শুধু চাহিদা বৃদ্ধি করে না , উৎপাদন বিশেষায়ন উপকরণের সুষ্ঠু ব্যবহার ও নিয়োগ বৃদ্ধি করে ।
৪. প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি : মুক্ত বা অবাধ বাণিজ্য দেশের ভিতরে কোন একচেটিয়া শক্তির দ্বারা ভোক্তাদের শোষণ থেকে মুক্তি দিয়ে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে । মুক্ত বাণিজ্যের অধীনে সবাই ইচ্ছামতো আমদানি রপ্তানির সুযোগ পায় বলে কোন একচেটিয়া শক্তি এককভাবে সুযোগ সুবিধা পেতে পারে না । এভাবে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায় ।
৫. সামাজিক উৎপাদন সর্বোচ্চ : অবাধ বাণিজ্য একটি সমাজের উৎপাদন সর্বোচ্চকরণে সহায়তা করে । মুক্ত বাণিজ্যের ফলে প্রতিটি দেশ শ্রম বিভাজনের ক্ষেত্রে পূর্ণ বিশেষায়ন করতে পারে । ফলে সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারে ।
৬. বাণিজ্য অসমতা দূর : মুক্ত বাণিজ্যে বিভিন্ন দেশের ভোক্তাদের সস্তায় আমদানি দ্রব্য ভোগের মাধ্যমে বাণিজ্যের অসমতা দূর করতে পারে । আর যেসব পণ্য উৎপাদন করতে আপেক্ষিকভাবে সুবিধা কম সে সব পণ্য উৎপাদন না করে অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে পারে ।
৭. মূল্য স্তরের সমতা : অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দ্রব্যমূল্যের মধ্যে সমতা অর্জিত হয় । উপাদানগুলোর মধ্যে অবাধ চলনশীলতার অভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি হয় তা অবাধ বাণিজ্যের দ্বারা সমতায় আসতে পারে । কেননা এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উপাদানগুলো অবাধে চলাচল করতে পারে ।
৮. অন্যান্য যুক্তি : উল্লিখিত যুক্তিগুলো ছাড়াও অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে আরো কিছু যুক্তি রয়েছে । নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :
ক . মুক্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ উন্নত দেশ থেকে সহজে উন্নত উৎপাদন কৌশল আমদানি করতে পারে ।
খ . মুক্ত বাণিজ্যের দ্বারা বাণিজ্যে লিপ্ত দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় ।
গ . আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা বাড়ে এবং বিশ্বশান্তি অর্জিত হয় ।
ঘ . মুক্ত বাণিজ্যের অধীনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মূলধনের প্রবাহ চলতে পারে ।
উপসংহার : উপরের কারণগুলোর জন্য অবাধ বাণিজ্য আমাদের দেশের জন্য সুবিধাজনক ।
[ad_2]