[ad_1]
✍️ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যসমূহের মধ্যে সনাতনী দ্রব্যের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।
উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলাদেশ কৃষিজাত দ্রব্য ও শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করে । দেশে উৎপাদিত দ্রব্যসমূহের মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য , চা , চামড়া , হিমায়িত মাছ , তৈরি পোশাক নীট ওয়ার এবং কাগজ প্রধান । এছাড়া আরো অনেক পণ্য রপ্তানি করা হয় । বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয় ।
ক . ১৯৮০ সালের পূর্ব যেসব দ্রব্য রপ্তানি করা হতো তাকে সনাতন দ্রব্য বলে ।
খ . এর পরবর্তী সময়ে সংযোজিত নতুন পণ্যসমূহকে অসনাতনী পণ্য বা অপ্রচলিত দ্রব্য বলে ।
নিম্নে দু’ধরনের দ্রব্যের বিবরণ দেয়া হলো :
ক . সনাতনী দ্রব্যসমূহ :
১. পাট ও মেসতা : বাংলাদেশ পাট ও মেসতা রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম । ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশ সকল পাটই কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করত । বর্তমানে পাট শিল্প গড়ে উঠার ফলে কাঁচা পাট রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছে । দেশে প্রতিবছর ৫০-৮০ লক্ষ বেল পাট উৎপাদিত হয় । দেশীয় চাহিদা মাত্র ৩০ লক্ষ বেল বাকি পাট কাঁচা অবস্থায় রপ্তানি করতে হয় । বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা রয়েছে ২৫ লক্ষ বেলের । তাই কোন বছরে যদি উৎপাদন ২৫ লক্ষ বেলের বেশি হয় তাহলে মূল্য বাড়া শুরু করে । ১৯৮৭-৮৮ সালে প্রতি বেল ১৩৩২ টাকা মূল্যে ১৩৪২ লক্ষ বেল পাট রপ্তানি করে ২১৪ কোটি টাকা আয় করে । ২০০৯-১০ সালে মোট রপ্তানি আয় ১৩৭২ কোটি টাকা । দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বাকি পাট রপ্তানি করা হয় ।
২. পাটজাত দ্রব্য : বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাটজাত দ্রব্য । মোট রপ্তানি আয়ের ৫ ভাগ আসে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি থেকে । বাংলাদেশ হেসিয়ান সেকিং , কাপের্ট ব্যাংকিং এবং ক্লোথ প্রভৃতি দ্রব্য রপ্তানি করা হয় । প্রতিবছর ৬ লক্ষ টনেরও বেশি পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করা হয় । ১৯৯০-৮৯ সালে মোট ৯৮৩ কোটি টাকা আয় করে । ২০০৯-১০ সালে মোট ৩৭৮০ কোটি টাকার দ্রব্য রপ্তানি করা হয় । উৎপাদন খরচ হ্রাস , দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দ্রব্যের গুণগত মান উন্নয়ন দ্বারা রপ্তানি বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে ।
৩. চামড়া এবং চামড়াজাত দ্রব্য : বাংলাদেশ উন্নতমানের ছাগলের চামড়া উৎপাদন করে , যা অত্যধিক ফ্যাশনমূলক দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয় । একই ভাবে গরুর চামড়ারও পর্যাপ্ত চাহিদা বিশ্ব বাজারে রয়েছে । বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি বর্গফুট চামড়া , ১৯৮২-৮৩ সালে রপ্তানি করে ৭৩৭ কোটি টাকা আয় করে । আধা পাকা চামড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয় । প্রতি বর্গফুটের মূল্য ছিল , ৭০-৮০ টাকা ২০০৯-১০ সালে চামড়া রপ্তানি করে দেশ প্রায় ১৬১০ কোটি টাকা আয় করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত দ্রব্যগুলোই সনাতনী রপ্তানি বলে বিবেচিত যা বর্তমানে অনেক হ্রাস পেয়েছে ।
✍️ বাংলাদেশের অসনাতনী বা অপ্রচলিত দ্রব্যের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রচলিত দ্রব্যের মত অপ্রচলিত দ্রব্যের তাৎপর্য কম না । অপ্রচলিত অনেক দ্রব্যই রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় ।
বাংলাদেশের অসনাতনী / অপ্রচলিত দ্রব্যেসমূহ : নিম্নে অপ্রচলিত দ্রব্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো :
১. তৈরি পোশাক : অপ্রচলিত পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক বর্তমান রপ্তানি বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে । বিশ্বের পঞ্চম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ । বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা বিশ্ব বাজারে ইউরোপ , আফ্রিকা , আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে যথেষ্ট রয়েছে । ফলে পোশাক শিল্প দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । ২২১৮ টি পোশাক শিল্পে প্যান্ট , শার্ট ও জ্যাকেট প্রভৃতি পণ্য রপ্তানি করা হয় । ২০০৯-১০ সালে মোট গার্মেন্টস্ রপ্তানি আয় হয় ৪২,২০০ কোটি টাকা । বাংলাদেশি পোশাক ক্রেতারা হলো USA ৬৩.১ % পশ্চিম জার্মানি ১০.১ % এবং ইতালি ২৫ % ।
২. শাকসবজি : সম্প্রতিকালে বাংলাদেশ শাকসবজি রপ্তানি করতে শুরু করেছে । মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ২৬ হাজার টন শাকসবজি রপ্তানি করে ১৯৯৫ সালে ১০ কোটি টাকা আয় করে । ১৯৯৪-৯৫ সালে ১৫ হাজার টন শাকসবজি রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২৭ মি . ডলার আয় করবে বলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় । ২০০৭-০৮ সালে ৭০০ কোটি টাকার শাকসবজি রপ্তানি করে ।
৩. নীটওয়ার : বাংলাদেশ হেশিয়ারী বা নীটওয়ার শিল্পের রপ্তানি বাণিজ্য ১৯৯০ সালে প্রথম অংশ নেই । বর্তমানে এ শিল্প ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ৪৫,৫৩০ কোটি টাকার নীটওয়ার রপ্তানি করে ।
৪. হস্তশিল্প দ্রব্য : বাংলাদেশ হস্তশিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ২০০৭-০৮ সালে মোট ৫.৬ কোটি টাকা রপ্তানি আয় করে । বাংলাদেশি হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা বিশ্ব বাজারে যথেষ্ট বেড়েছে , ভবিষ্যতে আরো বাড়বে ।
৫. নেপথা ও ফার্নেস তৈল : নেপথা ও ফার্নেস তৈল আমাদের একটি রপ্তানি দ্রব্য । ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড দেশে একমাত্র পেট্রাল শোধনাগার । এর বার্ষিক ৯ লক্ষ টন শোধন করার ক্ষমতা রয়েছে । ২০০৭-০৮ সালে ১০৫ কোটি টাকার নেপথা , বিটুমির ও ফার্নেস তৈল উৎপাদন করে ।
৬. জুতা : বাংলাদেশে বর্তমানে জুতা রপ্তানি করেছে । জুতা রপ্তানি আয় প্রতিবছর ২১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১৯৮০ কোটি টাকার জুতা রপ্তানি হচ্ছে ।
৭. অন্যান্য পণ্য : বাংলাদেশে অন্যান্য অনেকগুলো দ্রব্যই রপ্তানি করে , যা অতি অল্প রপ্তানি আয় প্রদান করে । এগুলো হলো অশোধিত সার , ঔষধ , চিটাগুড় , দিয়াশলায় , পার্টেক্স , রেয়ন , ছবি ও বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ।
উপসংহার : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপ্রচলিত দ্রব্যের অবদান অনস্বীকার্য ।
✍️ বাংলাদেশে বাণিজ্য ঘাটতির কারণসমূহ কী কী ?
উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে বাণিজ্য ঘাটতির বহুবিধ কারণ রয়েছে । উক্ত কারণগুলো ব্যাখ্যা করলেই তা সহজেই বুঝা যাবে ।
বাংলাদেশে বাণিজ্য ঘাটতির কারণসমূহ : নিম্নে বাণিজ্য ঘাটতির কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. বাণিজ্য শর্তে অবনতি : বাংলাদেশে বাণিজ্য শর্তে ক্রমাগত অবনতির কারণে প্রতিবছর বাণিজ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে । আমদানি দ্রব্যের দাম যে হারে বাড়ে রপ্তানি দ্রব্যের দামের সূচক তার চেয়ে কম হারে বাড়ার কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি লক্ষ্য করা যায় ।
২. অতিমাত্রায় জ্বালানি নির্ভর : বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্য উন্নতি সবচেয়ে বড় আমদানি নির্ভর করেছে বৈদেশিক তেলের বাজারের উপর । আমাদের সবচেয়ে বড় আমদানি দ্রব্য হলো জ্বালানি তেল । বিগত কয়েক বছরে তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে ।
৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা : অতীতে বাংলাদেশে হরতাল , সমাবেশ , মিছিল , পিকেটিং এবং কর্মবিরতির কারণে প্রায়ই উৎপাদন ও বণ্টন কার্যক্রম বন্ধ থাকত । ফলে রপ্তানির পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ।
৪. গুটি কয়েক রপ্তানি পণ্য : বাংলাদেশের রপ্তানিখাত খুবই নাজুক । গুটি কয়েক পণ্য যেমন গামেন্টেস , নীটওয়ার , চিংড়ি ও পাটজাত দ্রব্য আমাদের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য । বেশি আয় আসে যেমন- সফটওয়ার , গাড়ি , যন্ত্রপাতি , জ্বালানি তৈল , প্রযুক্তি এসব আমাদের রপ্তানি তালিকায় নেই আছে আমদানি তালিকায় । তাই বাণিজ্য ঘাটতি প্রকট ।
৫. আমদানি বেশি : বাংলাদেশের বাণিজ্যখাতে আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি । খাদ্য ঘাটতি , জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি , উন্নয়নের প্রয়োজনে মূলধন ও কাঁচামাল আমদানির ফলে আমাদের আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি । যা বাণিজ্য ঘাটতির অন্যতম কারণ ।
৬. প্রতিবেশী দেশের সাথে প্রতিকূলতা : বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির একটি অন্যতম কারণ হলো ভারতের সাথে ভারসাম্য বাণিজ্য । ভারত , বাংলাদেশ ১০.১ অনুপাত বাণিজ্য করছে । এতে বাংলাদেশে ক্রমাগত নাজুক অবস্থায় চলে যাচ্ছে ।
৭. আমদানিনীতি : বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে মুক্ত বাণিজ্যে পা দেয় । এরপর থেকে ক্রমাগত আমদানি বাণিজ্য উদারতা , শুল্ক মুক্তকরণ করেছে । ফলে বিদেশি পণ্য অবাধে আসছে এবং বাণিজ্য ঘাটতিও বাড়ছে ।
৮. দেশপ্রেমের অভাব : বাংলাদেশের মানুষ দেশীয় পণ্য ক্রয় করতে চায় না । বিদেশি পণ্য ক্রয় করতে চায় এমন মনমানসিকতা কাজ করে । বিদেশি পণ্যের প্রতি অতি ভক্তি আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি করেছে ।
উপসংহার : বাণিজ্য ঘাটতির উপর্যুক্ত কারণগুলো দূর করতে পারলেই আমরা বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত লাভ করতে পারবো ।
[ad_2]