[ad_1]
✍️ OIC ভুক্ত দেশসমূহের অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : OIC ভুক্ত দেশসমূহের অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট সম্পন্ন হয় । ইতোমধ্যে ২৬ টি সদস্য দেশ এ ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিতে স্বাক্ষর এবং ২০০৪ সালে অনুসমর্থন করেছে । ইতোমধ্যে PTS – OIC এর আওতায় গঠিত ট্রেড নেগোসিয়েশন কমিটি ( টিএনসি ) প্রথম দফা বাণিজ্য আলোচনা সম্পন্ন করেছে । প্রথম দফা আলোচনায় সদস্য দেশসমূহ Protocol on the preferential tariff scheme for the TPS – OIC ( PRETAS ) চূড়ান্ত করেছে । বাংলাদেশসহ ১১ টি দেশ প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে ।
অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি : প্রটোকল অনুযায়ী শুল্ক হ্রাস বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিম্নরূপ :
ক . চুক্তিভুক্ত প্রতিটি দেশ মোট ট্যারিফ লাইনের ৭ শতাংশ পণ্য শুল্ক হ্রাস প্রক্রিয়ার আওতায় আনবে । তবে কোন দেশের মোট ট্যারিফ লাইনের ৯০ শতাংশ অথবা তদূর্ধ্ব পণ্যের বেস রেট যদি ০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশের মধ্যে থাকে তাহলে তারা মোট ট্যারিফ লাইনের ১ শতাংশ পণ্য শুল্ক হ্রাস প্রক্রিয়ার আওতায় আনবে ।
খ . সদস্য দেশসমূহের শুল্ক হ্রাস প্রক্রিয়া নিম্নরূপ : ১. যেসব পণ্যের শুল্ক হার ২৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে সে সব পণ্যের শুল্ক হার ২৫ শতাংশ । ২. যেসব পণ্যের শুল্ক হার ১৫ শতাংশের ঊর্ধ্বে থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সে সব পণ্যের শুল্ক হার ৫ শতাংশ এবং ৩. যেসব পণ্যের শুল্ক হার ১০ শতাংশের ঊর্ধ্বে থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সে সব পণ্যের শুল্ক হার ১০ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে ।
গ . স্বল্পোন্নত দেশসমূহ ছয় বছরের মধ্যে এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহ চার বছরের মধ্যে এ শুল্ক হ্রাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে ।
ঘ . এখানে সেচ্ছায় ফাস্ট ট্র্যাক প্রক্রিয়ায় শুল্ক কমানোর ব্যবস্থাও রয়েছে ।
ঙ . ১. শুল্ক হ্রাসের আওতায় পণ্যের ক্ষেত্রে কোন নতুন শুল্ক আরোপ করা যাবে না ।
২. প্যারা ট্যারিফ ও নন – ট্যারিফ বাধাসমূহ দূরীকরণ / কমানোর ব্যবস্থা করা হবে ।
চ . PRETAS কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে এ শুল্ক হ্রাস প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা হবে । ১ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখ থেকে শুল্ক হ্রাস কর্মসূচি কার্যকর হবে বলে আশা করা হলেও এখনো তা হয় নি I
উপসংহার : OIC ভুক্ত দেশসমূহে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের ফলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ।
✍️ বাংলাদেশে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ( WTO ) প্রভাব আলোচনা কর ।
উত্তর। ভূমিকা : বাংলাদেশের উপর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি । WTO এর প্রভাব নিয়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. স্থানীয় শিল্প হুমকির সম্মুখীন : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী বিশ্ব বাণিজ্য উন্মুক্ত রূপ লাভ করেছে । বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পুঁজির স্বল্পতা রয়েছে । বাণিজ্য উন্মুক্ত হওয়ায় উন্নত বিশ্বের পুঁজি অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে । বিদেশি বিশাল পুঁজির সাথে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাগুলোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না ।
২. কৃষিতে প্রভাব : WTO এর নীতিমালা অনুযায়ী কৃষি উপকরণে সরকারি ভর্তুকি হ্রাস করতে হবে । ফলে সার , বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্য বৃদ্ধি পাবে । এতে করে আমাদের কৃষি ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়াবে ।
৩. ঔষধ শিল্পে প্রভাব : WTO ‘ র মেধাস্বত্ব আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ নিজস্ব প্যাটেন্ট আইন অনুযায়ী অনেক ঔষধ আর উৎপাদন করতে পারে না । এতে করে ঔষধের মূল্য বৃদ্ধিসহ মানুষের চিকিৎসা সুবিধা ব্যাহত হবে ।
৪. বিদেশি পণ্যের বাজারে পরিণত হচ্ছে : WTO এর জন্য বাজার উন্মুক্তকরণ হওয়ায় আমাদের বাজারে অবাধে বিদেশি পণ্য প্রবেশ করছে । এর ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ও বাণিজ্য ভারসাম্য দিন দিন প্রকট হচ্ছে ।
৫. নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধি : বাণিজ্য উন্মুক্ত হওয়ায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বেশকিছু শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এতে করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে । এসব কর্মসংস্থানের একটা বড় অংশ এখন নারীরা নিয়োজিত হচ্ছে ।
৬. বিনোদন শিল্প প্রতিযোগিতার সম্মুখীন : বাজার উন্মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ বিদেশি বিনোদন পণ্য যেমন সিনেমা গানের সিডি ক্যাসেট অবাধে প্রবেশ করছে । উন্নত বিশ্বের এসব বিনোদন পণ্যের সাথে আমাদের সিনেমা গান প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না । তাই আমাদের বিনোদন শিল্প ধ্বংসের সম্মুখীন ।
৭. পোশাক শিল্প প্রতিযোগিতার সম্মুখীন : ২০০৫ সাল থেকে WTO এর নীতি কার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য MEN ও কোটা সুবিধা হয়ে গেছে । এছাড়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পর্যাপ্ত Back ward Linkage Industry নেই । তাই দেশের পোশাক শিল্প ব্যাপক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছে ।
৮. বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি : বিদেশি পণ্যসামগ্রী অবাধে প্রবেশ করায় এ দেশগুলোর শিল্প কারখানা একের পর এক বন্ধ হয়ে যাবে । ফলে এসব দেশে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাবে ।
৯. উদার বাণিজ্য নীতির নামে বৈষম্য বাণিজ্য নীতির : অবাধ বাণিজ্য এবং অবাধ বাজার সকলের জন্যই উপকারী এমন কথা সবসময় ঘোষণা করে বেড়ায় WTO কিন্তু এ ধারণা সত্য নয় । WTO এর উদার বাণিজ্য নীতির কারণে দরিদ্র দেশগুলোর শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না । একদিকে উন্নত দেশগুলোর সস্তা পণ্য অবাধে দরিদ্র দেশগুলোতে বেশি আমদানিতে মার খাচ্ছে । দরিদ্র দেশগুলো তাদের পণ্য উন্নত দেশগুলো বাজারে দিতে পারছে না । কারণ সেখান আছে শুল্ক ও শুল্কজনিত নানা বাধা । আবার শিল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শিল্পজাত দ্রব্যের উপর শুল্ক শতকরা ১০ শতাংশ এর নিচে রাখার জন্য বাধ্য করছে । এভাবে শক্তিশালী অর্থনীতির সাথে দুর্বল অর্থনীতির মধ্যকার প্রতিযোগিতায় দুর্বল পক্ষ অবধারিতভাবে পরাভূত হচ্ছে । এ অসম প্রতিযোগিতার ফলে ০ এর দশকে ধনী দেশগুলোর সাথে দরিদ্র দেশগুলোর জীবন মান ও সমৃদ্ধির ব্যবধান আরো বাড়ছে । এমনকি UNCTAD এর Trade and development report এ বলা হয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ৭০ এর দশকের চেয়েও কম হয়েছে ৯০ এর দশকে । যেখানে WTO ‘ র কাজ হচ্ছে দেশে দেশে বাণিজ্য সংঘাত মিটানো সেখানে তাদের প্রণয়নকৃত নীতির ফলে এ সংঘাত উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
উপসংহার : OIC র ইতিবাচক প্রভাব যেমন বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য তেমনি নেতিবাচক প্রভাবও উল্লেখযোগ্য ।
✍️ SAFTA চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য কতটুকু সার্থক বলে তুমি মনে কর ।
উত্তর। ভূমিকা : SAFTA চুক্তি অনুসারে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশ লাভবান হওয়ার কথা ছিল বাস্তবে তা কতটুকু হয়েছে নিম্নের আলোচনা থেকে জানা যাবে । সাফটা চুক্তিকে অনুকূলে নিয়ে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তান তার রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে এ দুটি দেশের সাথে তার যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে , তা কমানোর উদ্যোগ নিতে পারে । বাংলাদেশ ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাংলাদেশের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ । এ বাণিজ্য সম্পর্ক ভারতের অনুকূলে ।
বাংলাদেশ ভারতে যা রপ্তানি করে , আমদানি করে তার থেকে এগার গুণ বেশি । এটি সরকারিভাবে বৈধ আমদানি রপ্তানি হিসেবে । এ বাইরে চোরাই পথে প্রচুর ভারতীয় পণ্য আসে । চোরাই পথের পণ্যের হিসাব যদি ধরা হয় , তাহলে ঘাটতির পরিমাণ আরো সাতগুণ বাড়বে প্রতিবছর । চোরাই পথে দুই থেকে আড়ায় হাজার কোটি টাকার পণ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে । বাংলাদেশ এ ঘাটতির জন্য ভারতকে দায়ী করেছে । স্বাধীনতার পর থেকে এরশাদ সরকারের পতনের পূর্বে পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি ধি – পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হয় ।
চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও আমদানি শুল্ক রেয়াত কোনটাই ভারত রক্ষা করে নি । উপরন্তু ভারত কর্তৃক বরাবরই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বর্ধিত হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে । এতে এদেশের পণ্য আমদানিতে ভারতীয় আমদানিকারকরা শুধু নিরুৎসাহিতই হচ্ছে না । এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে ।
পাকিস্তানের সাথেও বাংলাদেশের একই সমস্যা । পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এখন একশ কোটি টাকারও বেশি । আর এ ঘাটতি দুটি দেশের সাথে আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় । বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য পাকিস্তানে রপ্তানি করে , আমদানি করে তার দ্বিগুণ । গত দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির এ প্রবণতা চলছে । এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাফটা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে । বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের বাজারে অবাধ প্রবেশের দাবি করে আসছে । ভারতে যেহেতু বাংলাদেশি পণ্যের একটি বিরাট বাজার রয়েছে ।
সেহেতু এ ধরনের সুযোগ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ব্যাপক সুযোগ বয়ে আনবে বলে ধারণা করা হয় । কিন্তু এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে বাংলাদেশ কিন্তু ইতোমধ্যে ভারতের একটি বাজারে পরিণত হয়ে রয়েছে । সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশকে কঠোর হয়ে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে । তবে বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত হলো বাংলাদেশ যদি সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সাফটা সুযোগ সুবিধা দিতে পারে তবে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ভূমিকা বয়ে আনবে । সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় সাফটা সফলভাবে কার্যকরী হলে বাংলাদেশের নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো পেতে পারে ।
১. ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্য হ্রাস পাবে ।
২. বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি বাজার বৃদ্ধি পাবে ।
৩. নেপাল , ভুটান ও মালদ্বীপে বাংলাদেশের পণ্যের বিশাল বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হবে ।
৪. সামগ্রী রপ্তানি বাজার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে ও
৫. বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে রাজনৈতিক সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি SAFTA প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ তেমন কোন লাভ পায় নি ।
[ad_2]