অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, স্থানীয় উন্নয়নে স্থানীয় সরকার কেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা তুলে ধর।
ভূমিকা : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার বলতে একটি দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকার জনসাধারণের প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত স্ব-স্ব এলাকার শাসনব্যবস্থাকে বুঝায়। বস্তুত স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয়ভাবে দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত সংস্থাগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে যে শাসন পরিচালনা করে তাকে স্থানীয়
জনসংখ্যা বিশাল ও বিপুল। কেন্দ্রীয় সরকারের একার পক্ষে দেশের সকল এলাকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভবপর নয়।
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা : আধুনিককালে জাতীয় রাষ্ট্রের আয়তন ও কাজেই স্থানীয় সমস্যাবলির যথাযথ সমাধানকল্পে স্থানীয় সংস্থার উপর দায়িত্ব প্রদান করে জাতীয় বিষয়গুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকতর মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয় সমস্যার যথাযথ সমাধানের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় ধারাবাহিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং স্থানীয় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ও জাতীয় প্রশাসনের উন্নতি দক্ষতা ও সংহতি বিকাশের ক্ষেত্রে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। স্থানীয় সমস্যার সমাধান, স্থানীয় প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে, স্থানীয় জনগণকে সচেতন, স্বাবলম্বী ও উদ্যোগী করা, সম্পদ সংগ্রহ ও বণ্টন, স্থানীয় এলাকার বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ, গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি, ভূমি সংস্কার, দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান ও মানব সম্পদের উন্নয়ন ও সদ্ব্যবহার সর্বোপরি উন্নয়নের সার্বিক প্রচেষ্টার সফলতা আসে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের মাধ্যমে। নিম্নে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. স্থানীয় এলাকার জনকল্যাণমুখী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার যেহেতু স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত সেহেতু তার স্থানীয় জনগণের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে এবং তা বাস্তবায়নও করতে পারে। কাজেই আমরা বলতে পারি স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. স্থানীয় জনগণের আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের বিকাশ : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করে। স্থানীয় জনসাধারণ নিজেদের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সহযোগিতাভিত্তিক আত্মশাসন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের শিক্ষা লাভ করে। তাছাড়া স্থানীয় সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে।
৩. বিধি ও উপবিধি তৈরি : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার তাদের কাজের সুবিধার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিধি ও উপবিধি তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে। কাজেই আমরা বলতে পারি যে সংস্থার বিধি-উপবিধি তৈরি করার ক্ষমতা আছে তার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
৪. নাগরিক চেতনার বিকাশ ও ব্যাপ্তি : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন অধিক সংখ্যক নাগরিককে অধিকতর পরিমাণে শাসনকার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ দান করে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও প্রশাসনিক আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় শাসন পরিচালনা কালে জনসাধারণের প্রতিনিধিবৃন্দ যে প্রশাসনিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা জাতীয় রাজনীতিতে প্রয়োগ করার
ব্যাপার
ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন পল্লি এলাকা হতে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত নেতৃত্বের সেতুবন্ধন রচনা করে জাতীয় রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করে। বস্তুত পক্ষে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে নাগরিক চেতনার বিকাশ ও ব্যাপ্তি ঘটে। ফলে স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়।
৫. কর্মচারী নিয়োগ : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার তার কাজের সুবিধার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করতে পারে। সীমিত হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের মত তারও কর্মচারী নিয়োগ করার ক্ষমতা আছে, কাজেই এর গুরুত্ব অনেক।
৬. গণতন্ত্রের সূতিকাগার : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারকে বলা হয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। গণতান্ত্রিক চর্চা প্রথমে এখানেই শুরু হয়। এখানেই জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। কাজেই এর গুরুত্ব অনেক।
৭. জাতীয় সরকারের বোঝা লাঘব করা : সাম্প্রতিককালে জাতীয় সরকারের কার্যাবলি প্রসারিত হচ্ছে। ফলে তাদের কাজের চাপও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের হাতে কিছু কাজ হস্তান্তর করার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের ভার লাঘব হয়। অপরদিকে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ও স্থানীয় সমস্যা সমাধানে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে।
৮. আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত : স্থানীয় প্রতিনিধিরাই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের দেখাশুনা করে, সিদ্ধান্ত নেয়। আমলারা থাকে তাদের অধীনস্থ। আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে তারা কাজ করতে পারে, ফলে জনগণের মঙ্গল বেশি হয়।
৯. জবাদিহিতা নিশ্চিত করা : স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়ে যেহেতু এই সরকার গঠিত হয় সেহেতু তারা স্থানীয় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তার দুর্নীতি বা অন্যভাবে কাজের ফাঁকি দেয়া বা অর্থের অপচয় করলে স্থানীয় জনগণ বুঝতে পারে। কাজেই তারা জনকল্যাণমুখী প্রকল্প নেয় এবং সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে।
১০. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : বর্তমান যুগে কেন্দ্রীয় সরকারের একার পক্ষে দেশে সব কাজ করা সম্ভব নয় । কাজেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের ভার কমানোর জন্যই এই সরকারের জন্ম। স্থানীয় পর্যায়ে সমস্যাগুলো এরা জানতে পারে এবং সুষ্ঠুভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে।
১১. সমন্বয়কারী : সমন্বয়কারী হিসেবেও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। কেননা কেন্দ্রীয় সরকার এবং জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রূপ এরা কাজ করে। এদের মাধ্যমেই জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা ও কার্যাবলি জানতে পারে।
১২. আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান : আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানে এই সরকারের বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের কার্যাবলি বৃদ্ধির সাথে আঞ্চলিক সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একার পক্ষে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয় । স্থানীয় সরকার সুষ্ঠুভাবে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করে জনগণের মঙ্গল তথা দেশের উন্নয়ন করে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমেই জনসাধারণ ব্যাপকভাবে রাজনীতির সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায় এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। এই ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে সার্থকভাবে রূপায়িত করার জন্য অপরিহার্য।