অর্থবা, পল্লি সমাজসেবার ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পল্লি সমাজসেবা কাকে বলে?
অথবা, গ্রামীণ সমাজসেবা বলতে কী বুঝ?
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি চালু হয় মূলত পাকিস্তান আমলে। তবে তা গ্রামীণ সমাজসেবা নামে ছিল না। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রশাসন (International Co-operation Administration-ICA) -এর সহায়তায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে V-AID (Village Agricultural Development) কর্মসূচি চালু করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে রাজনৈতিক কারণে এ কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া হয়। পাকিস্তান সরকার অবশ্য বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিক কর্মসূচির অধীনে গ্রামীণ জনসেবা কার্য অব্যাহত রাখে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১৯৭৪ সালে এদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পায়। মানুষ অনেক স্থানে না খেয়ে মারা যেতে থাকে। এরূপ অবস্থায় ১৯৭৪ সালে সরকার গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জন্য পল্লি সমাজসেবা/গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি (Rural Social Services-RSS) চালু করে। এ কর্মসূচি প্রণয়নে এ.এম মোজাম্মেল হক যথেষ্ট অবদান রাখেন। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১৯টি বৃহত্তর জেলার ১৯টি থানায় এ কর্মসূচি চালু করা হয়। এরপর তা ৪৪টি থানায় সম্প্রসারিত করা হয়। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৭) সরকার গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি খাতে ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখে। দ্বিতীয় পক্ষবার্ষিক পরিকল্পনার (১৯৮০-১৯৮৫) মাঝামাঝিতে গ্রামীণ সমাজসেবার পরিধি বৃদ্ধি করে ১০৪টি থানায় সম্প্রসারিত করা হয়।
১৯৮৪ সালে সরকার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করে থানাগুলোকে উপজেলায় রূপান্তর করে। এ সময় গ্রামীণ/পল্লি সমাজসেবার নাম পরিবর্তন করে উপজেলা সমাজসেবা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে ৪০০টি উপজেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৯২ সালে উপজেলা পদ্ধতি বাতিল হলে পুনরায় এর নাম হয় সমাজসেবা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালে থানাগুলোকে পুনরায় উপজেলায় রূপান্তরিত করেন। তখন থেকে অদ্যাবধি এর নাম উপজেলা সমাজসেবা। বর্তমানে দেশের ৪৮১ টি উপজেলাতেই উপজেলা সমাজসেবা কর্মসূচি চালু রয়েছে।
পল্লি সমাজসেবার ধারণা : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বহুমুখী কার্যক্রমের নাম হলো পল্লি সমাজসেবা বা গ্রামীণ সমাজসেবা। গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্গঠন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলাই এর উদ্দেশ্য।
সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘Social Welfare Service in Bangladesh’ শীর্ষক পুস্তিকায় নুরুল ইসলাম খান বলেন, “গ্রামীণ সমাজসেবা এমন এক ধরনের বহুমুখী ও সমন্বিত গ্রাম উন্নয়ন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে অবহেলিত ও অসুবিধাগ্রস্ত জনগণের সাংগঠনিক ক্ষমতা, নেতৃত্ব ও উন্নয়ন তৎপরতায় অংশগ্রহণ ইত্যাদির বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়। আর তাতে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের সুসম উন্নয়ন ও কল্যাণসাধন করা যায় এবং সেই সাথে মানব সম্পদের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভবপর হয়।”
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, পল্লি বা গ্রামীণ সমাজসেবা হলো পল্লির জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহীত একটি বহুমুখী সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম। যে কার্যক্রমের মাধ্যমে পল্লির জনসমষ্টির নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে তাদের সর্বাধিক কল্যাণের পথ প্রশস্ত করা যায়।