অর্থবা, মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের পদ্ধতিগুলো বিশ্লেষণ কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : তত্ত্বাবধান মাঠকর্মে একটি কৌশল হিসাবে বিবেচিত করা হয়। এটি শিক্ষার্থীর মাঠকর্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী হিসাবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার এক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয়।প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক তার অধীনস্থদের কার্যক্রম তদারকি করে থাকে।এসব কাজ তদারকি করতে গিয়ে কতিপয় পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।
মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের পদ্ধতি : নিম্নে মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
১. কর্মক্ষেত্র পরিদর্শন : তত্ত্বাবধানের অন্যতম পদ্ধতি হলো কর্মীর কর্মক্ষেত্র কাজ পরিদর্শন করা মাধ্যমে কাজের ধরন এবং নিয়মকানুন পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এ ধরনের পদ্ধতি অবলম্বনের ফলে কর্মীদের সাথে সম্পর্ক ও তাদের পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব।
২. কর্মসূচিতে তত্ত্বাবধায়কের উপস্থিতি : এ পদ্ধতিতে আলোচনা, ক্লাস, রক্ততা বা যে কোনো ধরনের কর্মীদের কর্মসূচিতে তত্ত্বাবধায়ক উপস্থিত হয়। তিনি কর্মীদের পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত হন।
৩. কাজের মান নিশ্চিতকরণ: প্রতিষ্ঠানের কাজের মান নির্ধারণ ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশন থাকে।এটি কাজের পথনির্দেশনা হিসাবে কাজ করে। তত্ত্বাবধানের উপায় হিসাবে এটি কাজ করে।
৪. অংশীদারিত্বের ধারণা দেয়; তত্ত্বাবধানের আর একটি উপায় হচ্ছে কর্মীদের আর্শিদারিত্বের ধারণা দেওয়া এবং বন্ধুভাবাপন্ন মনে করা। কর্মী যখন কিন্তু পারছেনা তখন তাকে তা শিখানোর জন্য নিজে সরাসরি কাজে অংশ গ্রহণ করা।
৫. বাজেট প্রণয়ন : বাজেট বলতে কাজের ও আর্থিক বাজেট বুঝায়। এক্ষেত্রে কাজ কতটুকু হবে এবং এ জন্য আর্থিক বাজেট কত হবে তা নির্ধারিত হয়। এজন্য কাজ এবং অর্থ সব কিছুই তত্ত্বাবধায়কের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬. কর্মপ্রক্রিয়া রেকর্ড ও রিপোর্ট করা : এ পদ্ধতি অনুযায়ী কর্ম প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত রেকর্ডিং ও রিপোর্টিং এর ব্যবস্থা থাকে।এতে করে তত্ত্বাবধান প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে তোলা যায়। এক্ষেত্রে কর্মপ্রক্রিয়া অনুধাবন ও আলোচনার ব্যবস্থা থাকে।
৭. কর্মী নিয়োগ অনুমোদন করা : তত্ত্বাবধানের একটি বিশেষ পদ্ধতি হলো কর্মীদের নিয়োগ অনুমোদন করা। এতে করে নিজস্ব যোগ্যতা ও চিন্তাধারার এক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।লোক নিয়োগের অনুমোদন ক্ষমতা ও কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে।
৮. কর্মীর সাক্ষাৎকার : কর্মীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তার কর্মসংক্রান্ত মনোভাব অনুধাবন ও পর্যালোচনা করা যায় এর ফলে কর্মীর ত্রুটিবিচ্যুতি, মনোভাব, উৎসাহ উদ্দীপনা প্রভৃতি জানা সম্ভব হয়। ফলে কর্মীর প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
৯. সন্তুষ্টি বিধান ও পুরস্কার প্রদান : এ পদ্ধতি অনুসারে কর্মীকে তার কাজের প্রতি সন্তুষ্টি বিধানের ব্যবস্থা করা হয়।তার উত্তম কাজের জন্য পদোন্নতি, ভাতা, পুরস্কার, পদক প্রভৃতি দেয়ার মাধ্যমে তত্ত্বাবধানকে ফলপ্রসূ করে তোলা হয়।
১০. আলোচনা ও কনফারেন্স : কর্মীদের সাথে নিয়মিত আলোচনা ও সম্মেলনের অংশ হিসাবে ব্যক্তিগত ও দলগত সভা এ পদ্ধতিতে করা হয়।এতে করে তত্ত্ববধায়ক ও কর্মীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এতে করে তত্ত্বাবধায়ক ও কর্মী মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জন ত্বরান্বিত হয়।
১১. পূর্ব অনুমোদন : পূর্ব অনুমোদন বলতে মাঠ পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়।একে আগাম পর্যালোচনাও বলা হয়। এ পদ্ধতি অনুসারে মাঠ পর্যায়ে সংস্থার নীতির বহির্ভূত কোন
ো উদ্যোগ গ্রহণ করলে পূর্বে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। এতে করে ভুল সংশোধন করা সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে Millet বলেন, এই পূর্ব অনুমোদন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ইউনিটের অভিপ্রায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লাভে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সমর্থ হয়।
১২. নির্দেশনা দান : নির্দেশনা দান তত্ত্বাবধানেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। তত্ত্বাবধায়ক কর্ম পর্যবেক্ষণ শেষে নির্দেশনা দান করবেন। এক্ষেত্রে কর্মীর কর্ম পরিবেশকে গুরুত্ব দিবেন এবং পাশাপাশি তাদের সমস্যা ও চাহিদা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
১৩. উপদেষ্টা ও নেতৃত্ব : তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা ও নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। এজন্য তিনি কখনো শিক্ষক,কখনো উপদেষ্টা, কখনো নেতা, কখনো পরামর্শদাতা, কখনো সাহায্যকারী, আবার কখনো নির্দেশকের ভূমিকা পালন করবেন। এর ফলে কর্মীদের সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়।
১৪. কর্মের মূল্যায়ন : তত্ত্ববধানের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা উপায়। এক্ষেত্রে কর্মীর কাজের মূল্যায়ন করা হয়। এতে করে তারা কাজে উৎসাহ পায়। তবে মূল্যায়নের অংশ হিসাবে খারাপ কাজের জন্য শাস্তিদানের ব্যবস্থা থাকে ফলে মূল্যায়ন ফলপ্রসূ ও কার্যকর হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত পদ্ধতি ছাড়াও তত্ত্বাবধানের আরো যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো হলো সারাস্থ ও নির্দেশক,কর্ম পরিকল্পনা, প্রশাসনিক অনুসরণ, তদারকিকরণ, প্রতিবেদন প্রভৃতি। এসব পদ্ধতিসমূহ অবলম্বনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক তার তত্ত্বাবধান কার্যক্রমকে সফল করে তোলেন।