অথবা, ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করেছে?
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন ১৮৮৫ এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন ১৮৫৫ এর ভূমিকা লিখ।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন ১৮৮৫ এর ভূমিকা উল্লেখ কর।
ভূমিকা : ঊনবিংশ শতাব্দীর শেখাধে ভারতবর্ষে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৮৭০-১৮৮০ সালের মধ্যে কয়েকটি প্রদেশে যাতায়াত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি স্থানীয় সমস্যার সমাধানের জন্য স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় কমিটি জনসাধারণকে স্থানীয় সমস্যার ব্যাপারে শাসনকার্যে অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন ১৮৮৫ ।
এর গুরুত্ব : ১৮৬২ সালে লর্ড রিপন সর্ব প্রথম এদেশে ঐতিহাসিক রেজুলেশন বা প্রস্তাবনা ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন লর্ড রিপনের সংস্কার প্রস্তাব দ্বারা পূর্বে ১৮৮৩ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলায়। বিধান সভায় একটি বিল উত্থাপন করা হয় ১৮৮৪ সালের ৩১ মা সরকার এক বিলে গ্রাম এলাকার উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়।১৮৮৪ সালের ৩১ মার্চ সরকার এক প্রস্তাবনার মাধ্যমে বিলটি গ্রহণ করেন । অতঃপর ১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসে বঙ্গীয় স্বায়তশাসন আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই আইনের মাদ্ধমে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকারের তিনটি স্তর করা হয়। যেমন-
১. ইউনিয়ন কমিটি ২.লোকাল বোর্ড ৩. জেলা বোর্ড
১. ইউনিয়ন কমিটি : স্বায়ত্তশাসনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল ইউনিয়ন কমিটি। কয়েকটি গ্রামের সমন্বয়ে একটি ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি এর এখতিয়ারভুক্ত ছিল। এর সদস্য সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৫ জন এবং ঊর্ধ্বে ৯ জন। এরা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত গ্রামবাসীদের ভোটে নির্বাচিত হতেন ।
২. লোকাল বোর্ড : ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম লোকাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে মহকুমা পর্যায়ে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের গোড়াপত্তন হয়। লোকাল বোর্ড এর সদস্য সংখ্যা কত হবে তা সরকার নির্ধারণ করে দিতেন। তবে এর সংখ্যা ৬ এর কম নয় এবং ৩০ এর বেশি নয়, এর মধ্যে রাখা হতো। এরা মূলত জনকল্যাণকর কিছু দায়িত্ব সম্পাদন করতো। যেমন- ব্রিজ, কালভার্ট মেরামত ও সংরক্ষণ, কাঁচা রাস্তা তৈরি ও সংস্কার, প্রাইমারি স্কুল, মক্তব, টোল ইত্যাদি সবকিছুর জন্য জেলা বোর্ড যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করতো, তা দিয়েই সম্পন্ন করতে হতো। আর্থিক দিক দিয়ে লোকাল বোর্ডের স্বাধীনতা প্রায় ছিল না বললেই চলে। লোকাল বোর্ডের প্রধান সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ছিলেন মহকুমা প্রশাসক।
৩. জেলা বোর্ড : ১৮৮৫ সালের বঙ্গ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইনের অধীনে প্রতিটি জেলার জন্য ছিল জেলা বোর্ড। জেলা বোর্ডের সদস্য কত হবে তা সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংখ্যা নির্ধারণ করতেন। তবে এর সংখ্যা কখনই ৯ জনের কম হবে না। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন বোর্ডের সভাপতি। নিত্য দিনের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য জেলা বোর্ডের কমিটি ব্যবস্থা ছিল। কমিটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, শিক্ষা কমিটি, জনস্বাস্থ্য কমিটি, নির্মাণ কমিটি ইত্যাদি। জেলা বোর্ড বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য নিজস্ব তহবিল গঠন করতে পারত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৮৫ সালের এই আইনে যথার্থভাবে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। কেননা এ আইনে গঠিত সংস্থাগুলোর সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি আদৌ গণতান্ত্রিক ছিল না তথাপি বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় এ আইনের গুরুত্ব অত্যধিক।