মুদ্রানীতি বা আর্থিক নীতি বলতে কী বুঝায় ?
উত্তর : সরল অর্থে , অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ও আর্থিক কর্তৃপক্ষ যেসব নীতিমালা গ্রহণ করে তাকে আর্থিক নীতি বলা হয় । অর্থাৎ অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ এবং ঋণের ব্যবস্থাপনা নীতিকে আর্থিক নীতি বলে । সরকার ও আর্থিক কর্তৃপক্ষ যেসব নীতিমালা গ্রহণ করে তার সমষ্টিকে আর্থিক নীতি বলা হয় ।
১. সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতি ,
২. সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি ও
৩. নিরপেক্ষ আর্থিক নীতি ।
১. অর্থনীতিতে অর্থ ও ঋণের যোগান বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত আর্থিক নীতিকে সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতি বলা হয় । এক্ষেত্রে অর্থনীতিতে আয় , উৎপাদন , কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় ।
২. অর্থনীতিতে অর্থ ও ঋণের যোগান কমানের জন্য গৃহীত আর্থিক নীতিকে সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি বলা হয় । এক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও আয় হ্রাস পায় , সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায় , দামস্তর হ্রাস পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
৩. যে ধরনের আর্থিক নীতি অর্থনীতিতে আয় , উৎপাদন , কর্মসংস্থান , বিনিয়োগ , সামগ্রিক চাহিদা প্রভৃতি প্রকৃত উপাদানকে প্রভাবিত করে না তাকে নিরপেক্ষ আর্থিক নীতি বলা হয় । মূলত পূর্ণ নিয়োগ স্তরে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নিরপেক্ষ আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হয় ।
বাংলাদেশে মুদ্রানীতির সীমাবদ্ধতা বর্ণনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মুদ্রানীতির কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা স্বাভাবিক । বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রানীতির সীমাবদ্ধতাগুলো নিম্নরূপ :
১. অ – আর্থিক খাত : উন্নয়নশীল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অ – আর্থিক খাত ভূমিকা পালন করে । বিনিময় প্রথা গ্রামীণ জীবনে এখনো পরিলক্ষিত হয় ।
অ – আর্থিক খাত ও আর্থিক খাতের মধ্যে সমন্বয়সাধন কঠিন । এমতাবস্থায় মুদ্রানীতি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হতে পারে না ।
২. অনুন্নত ও অসংগঠিত অর্থ বাজার : বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে অর্থ বাজার তেমন সংগঠিত নয় । দেশজ অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দানের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেই । তাছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরোপুরি আছে বলে মনে হয় না । উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রানীতির কার্যকারিতার পথে অর্থ বাজারের অনুন্নত অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায় ।
৩. সময়ের পশ্চাৎপদতা : মুদ্রানীতি সম্পর্কিত ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি , সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা যায় । প্রশাসনিক কালক্ষেপ মুদ্রানীতির কার্যকারিতাকে দুর্বল করে তোলে ।
৪. অলসভাবে রক্ষিত মুদ্রা : বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে জনগণের হাতে অলস জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কম নয় । অলসভাবে ফেলে রাখা অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয় না । ফলে প্রসারিত মুদ্রানীতির দ্বারা কাম্য অবস্থায় পৌঁছানো যায় না ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারলে আমাদের মুদ্রানীতি হবে উন্নতও স্বচ্ছ ।
শেয়ার ও বোনাস শেয়ার কী ?
উত্তর : শেয়ার : কোন কোম্পানি মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তার উদ্দিষ্ট প্রাথমিক মূলধনকে কতকগুলো পূর্ণ অংশে ভাগ করে জনগণের নিকট বিক্রি করে থাকে । এরূপ প্রত্যেকটি অংশকে এক একটি শেয়ার বলা হয়ে থাকে । যেমন- ১০ টাকা , ১০০ টাকা বা ১০০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ার হতে পারে ।
বোনাস : শেয়ার কোম্পানি যদি বণ্টনযোগ্য লাভের অর্থে নিজের ব্যবসায়ের প্রসার ঘটাতে চায় তবে সে তা রেখে দিতে পারে ডিভিডেন্টের পরিবর্তে শেয়ার মালিকদের নির্দিষ্ট অনুপাতে বোনাস শেয়ার প্রদান করতে পারে । এছাড়া কখনো কখনো কোম্পানি রিজার্ভের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে রিজার্ভকে ক্যাপিটালাইজ করার জন্য কোম্পানি তার শেয়ার মালিকদের বোনাস শেয়ার প্রদান করে থাকে ।
রাইট শেয়ার কাকে বলে ?
উত্তর : যে কোম্পানির শেয়ার ইতোমধ্যেই বাজারে আছে সে কোম্পানি যদি তার মূলধন আরো বাড়াতে চায় তাহলে সে প্রাইমারি শেয়ার মূল্যে আরো শেয়ার ইস্যু করতে পারে । এ শেয়ারকে রাইট শেয়ার বলে । রাইট শেয়ারের ক্ষেত্রে বর্তমান শেয়ার মালিকরা তাদের ধারণকৃত মোট শেয়ারের অনুপাতে রাইট শেয়ার লাভ করে থাকে । উল্লেখ্য রাইট শেয়ার প্রধানত বর্তমান মালিকরাই লাভ করে থাকে ।
শেয়ার বাজারের মূল্য সূচকের উত্থানপতনের কারণ কী কী ?
উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের মূল্য সূচকের উত্থানপতনের বহুবিধ কারণ রয়েছে । শেয়ার বাজারের মূল্য সূচকের উত্থানপতনের কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. বাণিজ্য চক্র : ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মন্দাভাবকে বাণিজ্য চক্র বলা হয় । ব্যবসায় তেজিভাব দেখা দিলে শেয়ার বাজারে তাদের দাম বাড়ে , সূচকের উত্থান ঘটে । আবার ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিলে শেয়ার বাজারে তাদের দাম কমে , সূচকের পতন ঘটে ।
২. সরকারি ঋণপত্রের সুদ : সরকার অধিক সুদের হার আরোপ করার কারণে শেয়ার বাজারের মূল্য উঠানামা করে । শেয়ার বাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করলে দরপতন ঘটে । আবার ঋণপত্রের সুদের হার কমালে দর বৃদ্ধি পায় ।
৩. লক ইন প্রথা তুলে দেয়া : ১৯৯৬ সালে শেয়ার বাজারে ধস নামার অন্যতম কারণ ছিল লক ইন প্রথা তুলে দেয়া । এর ফলে বেশকিছু বিদেশি কোম্পানি / বিনিয়োগকারী হঠাৎ করে ম্যানিপুলেশন করে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়ায় এবং পরে কমিয়ে দেয় ।
৪. ঋণ সুবিধা : শেয়ার ক্রয়ের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ সুবিধা প্রদান করলে শেয়ারের দাম বাড়ে । আবার ঋণ সুবিধা প্রত্যাহার করলে দাম হ্রাস পায় ।
৫. পুঁজির প্রবেশ ও প্রত্যাহার শেয়ার : বাজারে বিপুল পরিমাণে পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটলে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পায় । আবার পুঁজির অনুপ্রবেশ হ্রাস পেলে শেয়ারের দাম হ্রাস পায় ।
৬. ঋণপত্রের প্রচলন : সরকার ঋণপত্রের প্রচলন বৃদ্ধি করলে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ চাহিদা কমে , শেয়ারের দাম কমে । আবার সরকার ঋণপত্রের প্রচলন কমালে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধি পায় ।
৭. আইনের দুর্বলতা : স্টক এক্সচেঞ্জ আইনের দুর্বলতার কারণে মূল্য সূচক উঠানামা করে । আইনের দুর্বলতার কারণে অসৎ ব্যবসায়ীরা অপকৌশলের মাধ্যমে শেয়ার দাম বাড়িয়ে কমিয়ে অন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত কারণেই বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের মূল্য সূচক উঠানামা করে ।
শেয়ার বাজার উন্নয়নে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপগুলো বর্ণনা কর ।
উত্তর : শেয়ার বাজার উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার উন্নত হবে । বাংলাদেশে শেয়ার বাজার উন্নয়নে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ :
১. সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন : একটি দক্ষ , জবাবদিহিতামূলক পুঁজি বাজার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয় । ২০০০ সালে জাতীয় সংসদে কমিশনের একটি সংশোধনী বিল পাস করা হয় । কমিশন পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্ট আইনবিধি ও প্রবিধিমালা প্রণয়ন করে ।
২. প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা : পুঁজি বাজার সম্পর্কে সকলের ধারণা লাভের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে সরকার । প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় কমিশন মাসে দুটি করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে ।
৩. পুঁজি বাজার উন্নয়ন প্রকল্প : পুঁজি বাজারের সংস্কার , প্রাতিষ্ঠানিক ও জনসম্পদের উন্নয়ন এবং তদারকি আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এবং এডিবি এর অর্থায়নে ( Improvement Capital Market Government Programme ) নামক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ।
৪. সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সিস্টেম চালু : ১৯৯৯ সালে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সিস্টেম কোম্পানি গঠন করা হয়েছে । এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ , আই , সি , বি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক , ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ফরেন ইনভেস্টার চেম্বার অন্যতম ।
৫. গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা :
ক . শেয়ার বাজারে সেবা জেলা ও উপজেলা সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ।
খ . শেয়ার বাজার উন্নয়নে ব্যাপক প্রচার , গবেষণা ও অন লাইন সেবা বাড়ানো হয়েছে ।
গ . বোনাস শেয়ার এর উপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা হয়েছে ।
ঘ . শেয়ার বাজারের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।
ঙ . দায়ী কোম্পানিগুলোকে নেটিং সুবিধা না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
প্রাথমিক শেয়ার , মাধ্যমিক শেয়ার ও কার্বমার্কেট কী ?
উত্তর : প্রাথমিক শেয়ার : যে শেয়ার বাজারে প্রাথমিক শেয়ার ক্রয়বিক্রয় হয় তাকে প্রাথমিক শেয়ার বলে । কোন কোম্পানি বাজারে নতুন শেয়ার ছাড়লে তাকে প্রাথমিক শেয়ার বলে । এ শেয়ার বাজারে শেয়ার অবশ্যই অবলেখিত হতে হয় । বাংলাদেশে প্রধানত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা ICB এরূপ অবলেখনের কাজ করে । জনগণ প্রাথমিক শেয়ার ক্রয় না করলে অবলেখক ঐ শেয়ার গ্রহণ করে ।
মাধ্যমিক বা সেকেন্ডারি শেয়ার : প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু হবার পর শেয়ারের মালিক ব্রোকার হাইজের মাধ্যমে তা বিক্রয় করে দিতে পারে । প্রাথমিক শেয়ার ইস্যুর পর পরবর্তীতে শেয়ারের ক্রয়বিক্রয়কে সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক শেয়ার বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে সেকেন্ডারি শেয়ার বাজারই হলো শেয়ার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ।
কার্বমার্কেট বা ফুটপাতের শেয়ার বাজার : স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত ব্রোকার হাউজ বা ট্রেডিং ফ্লোরের বাইরে রাজপথের ফুটপাতে শেয়ার ক্রয়বিক্রয় হলে তাকে কার্বমার্কেট বা ফুটপাতের শেয়ার বাজার বলা হয় । বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে প্রতারণার ঘটনা ঘটবার পর ( বিশেষ আইন -১৯৯৬ ) করে কার্বমার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয় ।
সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রা কী ?
উত্তর : ব্যাংক বহির্ভূত অর্থ যা জনগণের হাতে নগদ হিসাবে থাকে এবং তফশিলি ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানতের সমষ্টিকে সংকীর্ণ মুদ্রা বা M বলে । M = CU + DD , যেখানে CU = জনগণের হাতে রক্ষিত মুদ্রা এবং DD বলতে ব্যাংকের চাহিদা আমানত ।
অন্যদিকে , বিস্তৃত মুদ্রা বলতে সংকীর্ণ মুদ্রা এবং ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের যোগফলকে বুঝায় । বিস্তৃত মুদ্রাকে My হিসেবে গণ্য করা হয় । M2 = My + TD । এখানে TD = তফশিলি ব্যাংকের মেয়াদি আমানত ।
অর্থের প্রচলন গতি কী ? বাংলাদেশে অর্থের প্রচলন গতির হ্রাস বৃদ্ধির ধারা বর্ণনা কর
উত্তর : অর্থের প্রচলন গতি বলতে দ্রব্য ও সেবা ক্রয়ের জন্য এক একক অর্থ কতবার ব্যবহৃত হয়েছে তা বুঝায় । ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ক্রয়বিক্রয় এবং আর্থিক লেনদেন সম্পাদনের জন্য কতবার অর্থের স্থানান্তর হয় তা বুঝানোর জন্য অর্থের প্রচলন গতি ব্যবহার করা হয় । সমীকরণের সাহায্যে V = এখানে V = অর্থের প্রচলন গতি , P = সাধারণ মূল্য , T = মোট লেনদেন এবং M = মোট অর্থের পরিমাণ । PT M মুদ্রার আয় প্রচলন গতি ২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষে ২.০৭ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ১.৯১ হয় । ২০১০-১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষ মুদ্রার আয় গতি সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ১. ৯২ হয় । বিগত কয়েক বছর ধরে মুদ্রার আয় গতি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে । ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে মুদ্রার আয় গতি হ্রাস পেয়ে ৬.১২ % হয় । ২০০৮-০৯ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে যথাক্রমে ৫.৪৯ ও ৮.০২ % হয় । বিগত কয়েক বছর ধরে মুদ্রার আয় গতির ক্রমহ্রাসমান ধারা অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান মুদ্রায়ন এবং আর্থিক গভীরতা নির্দেশ করে ।
নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রসারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ কী কী ?
উত্তর ৷ ভূমিকা : নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রসারের লক্ষ্যেও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । যেমন স্থাপন ।
সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ : পবিবো ( পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ড ) কর্তৃক ১৪ ( চৌদ্দ ) হাজার সোলার হোম সিস্টেম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের জন্য ২১.২০ kWp ( কিলোওয়াট পিক ) ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্যানেল স্থাপন । ইডকলের সহায়তায় বিভিন্ন এনজিও এর মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ জনপদে এ পর্যন্ত প্রায় ৯.০০ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন । দেশে সোলার প্যানেল নির্মাণের জন্য একাধিক কারখানা স্থাপনে ইডকলের প্রচেষ্টা গ্রহণ । মহুরী বাঁধ , ফেনী ও উপকূলবর্তী কুতুবদিয়া এলাকায় বায়ু চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ । বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাইলট প্রকল্প আইপিপি হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ ।
উপসংহার : নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রসারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এসব পদক্ষেপ বাস্তবিকই গ্রহণযোগ্য ।
আর্থিক নীতির সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর : আর্থিক বা মুদ্রানীতির সংজ্ঞা : মুদ্রানীতি এমন এক নীতি যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে । অধ্যাপক Paul Einzig এর মতে , আর্থিক এবং অনার্থিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত সবধরনের আর্থিক সিদ্ধান্ত এবং উপায় অথবা আর্থিক পদ্ধতি প্রভাবিত করে এমন সব অ – আর্থিক সিদ্ধান্ত এবং উপায়সমূহের সমন্বিত রূপকে মুদ্রানীতি বলা যায় । অধ্যাপক H. G. Johnson এর মতে , সাধারণ অর্থনৈতিক নীতির সাথে জড়িত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত মুদ্রার যোগানের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে মুদ্রানীতি বলা যায় । এ সংজ্ঞা কিছুটা সংকীর্ণ হলেও মুদ্রা বাজারের আলোকে এটিকে পল এইনজিগ এর সংজ্ঞা অপেক্ষা ভালো বলা যায় । অধ্যাপক এইনজিগ এর সংজ্ঞা ব্যাপক । এক্ষেত্রে আর্থিক নীতির আওতায় মূল্য ও মজুরি নিয়ন্ত্রণ , রপ্তানি ও আমদানি ইত্যাদি অনেক অ – আর্থিক ব্যবস্থা আছে । সত্যিকার অর্থে মুদ্রানীতি কতিপয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রকাশ করে । এদের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি অর্থের যোগান এবং পরোক্ষভাবে এর চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ।
পুঁজি বা মূলধন বাজারের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর : সংকীর্ণ অর্থে আর্থিক সম্পদের বাজারকে মূলধন বাজার বলা হয় । এখানে বিভিন্ন ঋণপত্র ক্রয় এবং বিক্রয় হয় । বাস্তবে মূলধন বাজার একাধিক পৃথক অথচ পরস্পর জড়িত বাজারের সমন্বিত রূপ বুঝায় । যেমন — স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারি ঋণপত্রের বাজার , করপোরেট বন্ড বাজার ইত্যাদির সমন্বয়ে বিস্তৃত অর্থে মূলধন বাজার গঠিত হয় । মূলধন বাজার বিনিয়োগ তহবিল গঠন এবং সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । সাধারণত বড় বড় বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দরকার । এ পরিমাণ তহবিল বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে পাওয়া সম্ভব নয় । কারণ এসব ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি ঋণদানে বেশি আগ্রহী । এজন্য দরকার এমন সব প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক যারা মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণদানে উৎসাহী I পারে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মূলধন বাজারে নিজেদের শেয়ার , বন্ড ইত্যাদি বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ এসব শেয়ার বিভিন্ন করপোরেশন , ব্যাংক , বীমা কোম্পানি , সরকার ও বেসরকারি ব্যক্তি ক্রয় করে ।
মূলধন বাজার ইক্যুইটি তহবিল সংগ্রহেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে । এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ তহবিলের একাংশ বহন করলে মূলধন বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বিশেষ ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান বাকি অংশের সংস্থান করতে পারে । কনসোর্টিয়াম গঠনের মাধ্যমে মূলধন বাজার বিনিয়োগ তহবিল সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের কার্যাবলি আলোচনা কর ।
উত্তর : বাংলাদেশে মুদ্রা বাজারের বিভিন্ন কাজ পরিলক্ষিত হয় । বিভিন্ন হাতিয়ারের সাহায্যে সংগঠিত মুদ্রা বাজারের কাজ পরিচালিত হয় । নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :
১. আমানত লেনদেন : মুদ্রা বাজারের সবচেয়ে সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক , বিভিন্ন ব্যক্তি , বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ধরনের আমানত সংগ্রহ করে এবং চাহিদা মাফিক তাদেরকে আমানত উত্তোলনের সুযোগ দেয় । উন্নয়ন ব্যাংকও এরূপ কাজে নিয়োজিত ।
২. ঋণ প্রদান : কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর সদস্য ব্যাংকগুলোকে উত্তম জামানতের বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ তহবিলের যোগান দেয় । সদস্য ব্যাংক প্রয়োজনে এরূপ গ্রহণ করে ।
৩. বিনিয়োগ কার্যক্রম : বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ট্রেজারি বিলসহ বিভিন্ন ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে । বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেদের তহবিলের এক অংশ ট্রেজারি বিল , সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয়পত্র এবং অপরাপর ঋণপত্রে বিনিয়োগ করে ।
৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিল ক্রয়বিক্রয়: বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক এবং অপরাপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি ৩০ দিন ও ৯০ দিনের বিল প্রবর্তন করে পাক্ষিক নিলামের ভিত্তিতে বিক্রয় করছে ।
৫. অসংগঠিত অংশের কার্যাবলি : মুদ্রা বাজারের অসংগঠিত অংশে ঋণদাতারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে উচ্চ সুদের হারে বিভিন্ন ধরনের ঋণদান করে । এরূপ বাজারে একজন ঋণগ্রহীতাকে কম পরিমাণে ঋণ প্রদান করা হয় ।
অর্থ ও মূলধন বাজারের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর : অর্থ ও মূলধন বাজারের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সময়ভিত্তিক পার্থক্য : অর্থ এবং মূলধন বাজারে ঋণ তহবিলের লেনদেন হয় । তবে এদের মধ্যে সময়ভিত্তিক পার্থক্য আছে । অর্থ বাজারে ট্রেজারি বিল , খোলাবাজারি ঋণপত্র , স্বল্পমেয়াদি ডিবেঞ্চার ইত্যাদি এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাহিদা ও যোগান নিয়ে কাজ করে । মূলধন বাজার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ তহবিলের চাহিদা ও যোগান নিয়ে কারবার হয় ।
২. সংগঠনগত পার্থক্য : অর্থ বাজারের সদস্য বাণিজ্যিক ব্যাংক , স্বীকৃতিকারী হাউস বিলের দালাল ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি তহবিল লেনদেন করে । অপরপক্ষে , শিল্প ব্যাংক , বিনিয়োগ ব্যাংক , বীমা কোম্পানি , শিল্প ঋণ সংস্থা নিয়ে মূলধন বাজার গঠিত ।
৩. তহবিলভিত্তিক পার্থক্য : মূলধন বাজারের প্রতিষ্ঠান নিজের ঋণপত্র ইস্যু করে মূলধনের সিংহভাগ সংগ্রহ করে । অন্যদিকে , অর্থ বাজারের সদস্যদের তহবিলের সিংহভাগ আসে ব্যক্তি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমা অর্থ থেকে ।
৪. ঋণ ঝুঁকি : মূলধন বাজারে ঋণপত্রের বিনিয়োগকারীরা দুই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয় আর্থিক ঝুঁকি এবং ঋণ ঝুঁকি । মুদ্রা বাজারে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত উত্তম ঋণপত্রের বিনিয়োগ করে ।
৫. সুদের হার : মূলধন বাজারের সুদের হারের চেয়ে মুদ্রা বাজারে সুদের হারের উঠানামা বেশি হয় । কারণ অর্থনীতিতে সুদের হারের সার্বিক কাঠামোর উঠানামা হলে দীর্ঘমেয়াদি সুদের হারের তুলনায় স্বল্পমেয়াদি সুদের হারের উঠানামা বেশি এবং দ্রুত হয় । প্র
বাংলাদেশে পুঁজি বা মূলধন বাজারের হাতিয়ারসমূহ কী কী ?
উত্তর : পুঁজি বাজারে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্রের লেনদেন হয় । ফলে এ বাজারে লেনদেনের হাতিয়ার মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ধরনের হয় । পুঁজি বাজারে লেনদেনের বেলায় নিম্নোক্ত হাতিয়ার ব্যবহার হতে দেখা যায় :
১. সরকারি বন্ড এবং ট্রেজারি নোট : এগুলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র যা মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক , সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠান , বীমা কোম্পানি , ব্যক্তি এবং অপরাপর প্রতিষ্ঠান ক্রয় করে । এ ধরনের বন্ডের মেয়াদ ৫ বছর হয় । অন্যদিকে , ট্রেজারি নোটের মেয়াদ কম ।
২. করপোরেট বন্ড : বিভিন্ন করপোরেশন এরূপ দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ইস্যু করে । এগুলো পুঁজি বাজারের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক হাতিয়ার । দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন করপোরেট সংস্থা এগুলো বিক্রয় করে ।
৩. মিউনিসিপাল বন্ড : উন্নত দেশে রাজ্য এবং স্থানীয় সরকার এরূপ বন্ড ইস্যু করে । রাস্তাঘাট ও বিল্ডিং নির্মাণসহ বিভিন্ন মূলধনী প্রকল্পের ব্যয় মিটানোর জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে এ ধরনের বন্ড ইস্যু করা হয় ।
৪. মর্টগেজ : স্থাবর সম্পত্তির উপর লিয়েনের আকারে জামানত রেখে এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রতিশ্ৰুতি হলো মর্টগেজ ।
৫. শেয়ার সার্টিফিকেট : পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বিভিন্ন মূল্যমানের শেয়ার ইস্যু করে বিনিয়োগ তহবিল সংগ্রহ করতে পারে । এ ধরনের শেয়ারের এক একটি লট কমপক্ষে পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশটি হয় ।
মুদ্রা গুণক কী কী উপাদানের উপর নির্ভরশীল ?
উত্তর : মুদ্রা গুণক হলো M = r ( 1 – c ) + c B অর্থের পরিমাণ এবং M =1 যেখানে C = কারেন্সি ও অর্থের অনুপাত ; M = মোটশক্তিশালী মুদ্রা বা আর্থিক ভিত্তি ।
১. আর্থিক উপাদানসমূহ :
( i ) ব্যাংক বহির্ভূত মুদ্রা বা জনগণের হাতে রক্ষিত নগদ মুদ্রা ,
( ii ) মুদ্রার মোট পরিমাণ ,
( iii ) বাণিজ্যিক ব্যাংকের নগদ রিজার্ভের অনুপাত ,
( iv ) ব্যাংক আমানত এবং
( v ) আর্থিক ভিত্তি ইত্যাদি ।
প্রথমত , অপরাপর বিষয় স্থির থাকলে ব্যাংক বহির্ভূত মুদ্রা কমলে বা বাড়লে এর মান কমবে বা বাড়বে । দ্বিতীয়ত , শক্তিশালী মুদ্রার পরিমাণ প্রদত্ত অবস্থায় মুদ্রার পরিমাণ বাড়লে বা কমলে মুদ্রা গুণকের মান বাড়বে বা কমবে ।
২. সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক উপাদান : সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন উপাদান জনগণের কারেন্সি অনুপাত বা ব্যাংকের নগদ রিজার্ভের অনুপাত পরিবর্তন করে মুদ্রা গুণকের মান পরিবর্তন করতে পারে ।
৩. প্রত্যাশিত উপাদান :
( i ) জনগণ যদি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত হয় , তবে তারা ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার বদলে নগদ অর্থ হাতে ধরে রাখবে ।
( ii ) ভবিষ্যৎ মূল্য সম্পর্কে জনগণের প্রত্যাশা মুদ্রা গুণকের মান পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে । যদি এ প্রত্যাশা ধনাত্মক হয় তবে C এর মান বাড়বে , ফলে M এর মান কমবে । বিপরীত অবস্থায় M এর মান বাড়বে ।
মুদ্রানীতি কিভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে ?
উত্তর : অর্থনীতির উপর মুদ্রানীতির প্রভাব সম্পর্কে দুটি মতবাদ আছে :
i . কেইনসীয় মতবাদ এবং ii . মুদ্রাবাদী মতবাদ ।
ক . কেইনসীয় মতবাদ : কেইনসীয় অর্থনীতিবিদরা তিনটি প্রতিক্রিয়ার আলোকে মুদ্রানীতির প্রভাব আলোচনা করেন ।
১. মূলধন ব্যয় প্রতিক্রিয়া : অর্থের যোগান বাড়লে মানুষ অতিরিক্ত অর্থ বন্ড ক্রয়ের জন্য ব্যয় করে । এক্ষেত্রে বন্ডের মূল্য বাড়বে ।
২. সম্পদ প্রতিক্রিয়া : মুদ্রার পরিবর্তন হলে সম্পদ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । এটি ভোক্তাদের আচরণ প্রভাবিত করে সামগ্রিক চাহিদার পরিবর্তন ঘটায় । ধরি অর্থের যোগান বাড়া হেতু সুদের হার কমলো ।
৩. ঋণের রেশনিং প্রতিক্রিয়া : ঋণের রেশনিং এর মাধ্যমে মুদ্রানীতি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে ।
খ . মুদ্রাবাদীদের মতবাদ : মুদ্রাবাদীরা মনে করেন মুদ্রানীতি অর্থের চাহিদা পরিবর্তন করে অর্থনীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে । তারা বলেন অর্থের যোগান সুদের হার নিম্নোক্তভাবে প্রভাবিত করে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে ।
১. তারল্য প্রভাব : এর দরুন সুদের হার স্বল্পমেয়াদে কমে ।
২. উৎপাদন প্রভাব : প্রাথমিকভাবে সুদের হার কমলে উৎপাদন এবং অর্থের চাহিদা বাড়লে দ্বিতীয় স্তরে সুদের হার বাড়বে ।
৩. মূল্য প্রত্যাশার প্রতিক্রিয়া : ঋণদাতারা মূল্য বাড়ার প্রত্যাশা করে আর্থিক সুদের চেয়ে প্রকৃত সুদের উপর গুরুত্বারোপ করবে । এজন্য তারা আর্থিক সুদের সাথে প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতির সমান আর্থিক প্রিমিয়াম যোগ করে সুদের হার বাড়াতে সচেষ্ট হবে ।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মূলধন বাজারের ভূমিকা আলোচনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : বিনিয়োগ তহবিলের অন্যতম প্রধান উৎস হলো শেয়ার , বন্ড , ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ইস্যু এবং বিক্রয় মূলধন বাজার এসব ঋণপত্রের লেনদেনে নিয়োজিত থাকে । বাংলাদেশের মতো কোন উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগকারীদের নিজের মূলধন স্বল্প ।
১. প্রকৃত সম্পদ ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মূলধন বাজারের বেশিরভাগ লেনদেন সংরক্ষিত ঋণপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ । এতৎসত্ত্বেও নতুনভাবে ইস্যুকৃত ঋণপত্রের লেনদেনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয় এবং হচ্ছে ।
২. সম্পদের দক্ষ কণ্ঠনে সহায়ক সম্পদ প্রচুর থাকলেই একটি দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় না । সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনই প্রধান বিষয় । উন্নয়নশীল দেশে সম্পদ কম থাকলেও যদি প্রাপ্ত সম্পদ দক্ষভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত হতে পারে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় , বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি সম্পদের দক্ষ বণ্টন ও ব্যবহারে মূলধন বাজার সক্রিয় সহযোগিতা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।
বাংলাদেশে মূলধন বা পুঁজি বাজারের বিভিন্ন উপাদানসমূহ কী কী ?
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের মূলধন বাজার এখনো উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । পুঁজি বাজারের যেসব মূল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা হলো প্রাথমিক শেয়ার ইস্যু , ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মাধ্যমিক বাজারের শেয়ার ক্রয়বিক্রয় ইত্যাদি ।
১. চাহিদা দিক : বাংলাদেশের পুঁজি বাজারের চাহিদার দিকে নিম্নোক্ত উপাদান কাজ করছে বলা যায় :
ক . ব্যক্তি : বিভিন্ন ব্যক্তি ঋণপত্রের প্রাথমিক দ্বিতীয় বাজারে উদ্বৃত্ত আয়ের একাংশ দ্বারা শেয়ার , ইউনিট সার্টিফিকেট , বন্ড এবং ডিবেঞ্চার ক্রয় করে । ব্যক্তির মধ্যে চাকরিজীবী এবং পেশাজীবী মানুষের সংখ্যা বেশি পরিলক্ষিত হয় ।
খ . বাণিজ্যিক ব্যাংক : পুঁজি বাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংক ডিবেঞ্চারে নিজেদের তহবিলের একাংশ বিনিয়োগ করে ।
গ . উন্নয়ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা , বাংলাদেশ পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা , শিল্প ব্যাংক , সাধারণ বীমা করপোরেশন ইত্যাদি প্রাথমিক এবং দ্বিতীয় ঋণপত্রের বাজারে তহবিল বিনিয়োগ করে ।
ঘ . বিদেশি বিনিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান: সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কারণে দেশের পুঁজি বাজারে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারী হিসেবে অংশও , হণ করতে দেখা যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত উপাদানসমূহ বাংলাদেশে পুঁজি বাজারে বিদ্যমান ।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশসমূহে মূলধন বাজারের উন্নতির পথে বাধাসমূহ কী কী ?
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মূলধন বাজার এখনো প্রাথমিক স্তরে আছে । এ বাজারে শেয়ার এবং অপরাপর ঋণপত্রের যোগান এখনো সীমিত বলা যায় । দেশের মূলধন বাজারের উন্নতির পথে যেসব বাধা কাজ করছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো :
১. প্রাথমিক ঋণপত্রের অনিয়মিত যোগান : মূলধন বাজারের প্রধান অংশ স্টক মার্কেট স্বাভাবিক অবস্থায় রাখার জন্য প্রাথমিক ঋণপত্রের যোগান যথেষ্ট থাকা উচিত । তা না হলে ঋণপত্রের সংকট দেখা দিবে ।
২. বিনিয়োগকারীদের অর্থসংস্থানে দুর্বলতা : মূলধন বাজারে যেসব প্রতিষ্ঠান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক , বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা , বাংলাদেশ পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা , সাধারণ বীমা করপোরেশন ও মার্চেন্ট ব্যাংক প্রধান ।
৩. স্টক এক্সচেঞ্জের নীতি নির্ধারণ এবং ব্যবস্থাপনায় স্ববিরোধিতা : বিশ্বের অনেক দেশে পুঁজি বাজারে নীতি • নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি আলাদা থাকে । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন সরকার থেকে মনোনীত ব্যক্তি ।
৪. তথ্য ব্যবস্থায় দুর্বলতা : প্রতিনিয়ত তথ্য পাওয়া গেলে মূলধন বাজারে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সুবিধা হয় । এস . ই . সি বিনিয়োগকারীদের তথ্য সরবরাহের জন্য প্রতি তিন মাস অন্তর একটি এবং বছরে একটি বড় আকারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল ।
৫. এস . ই . সি এর দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা : সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব হলো তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও স্টক এক্সচেঞ্জসমূহের নিয়মিত মনিটর করা ।
৬. শেয়ার ইস্যুকারী এবং ব্রোকারদের ম্যানিপুলেশন : বাংলাদেশে একশ্রেণীর অসাধু দালাল এবং কিছু শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানি অশুভ আঁতাত করে মাঝেমধ্যে শেয়ার বাজারে ম্যানিপুলেশনের আশ্রয় নেয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত বাধাসমূহ বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে বিদ্যমান । উক্ত সমস্যাসমূহ দূর করে পুঁজি বাজারকে উন্নত করা সম্ভব ।
আধা অর্থ বা মুদ্রা কী ?
উত্তর : আধা অর্থ বা মুদ্রা : এমন অনেক সম্পদ আছে যাদের মধ্যে অর্থের বেশকিছু গুণাগুণ আছে । এদেরকে আধা অর্থ বলা হয় । উদাহরণ হিসেবে মেয়াদি আমানত , স্বল্পমেয়াদি সরকারি ঋণপত্র , সঞ্চয়ী এবং ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের আমানতি দায় ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায় । এছাড়া মিউচ্যুয়াল সঞ্চয়ী ব্যাংক , ক্রেডিট ইউনিয়ন এবং অপরাপর অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ী আমানত প্রায় অর্থের আওতায় আসে । এসব আমানত যথেষ্ট তরল , এদেরকে সহজে ও স্বল্পব্যয়ে নগদ অর্থে রূপান্তর করা সম্ভব । এসব সম্পদ সুদ অর্জন করে । এরা মূল্যের সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে । এজন্য আর্থিক পোর্টফলিওতে এসব আধা অর্থকে অর্থের বিকল্প সম্পদ বলা যায় । সুতরাং আধা অর্থ বলতে এমন সব সম্পদ বুঝায় যেগুলো মোটামুটি তরল এবং সুদ অর্জন করে অথচ নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে । |
মুদ্রা বা অর্থ সরবরাহের উপাদানসমূহ কী কী ?
উত্তর : মুদ্রা বা অর্থ সরবরাহের উপাদানসমূহ : অর্থ সরবরাহের মূল উপাদান হলো :
১. জনগণের হাতের মুদ্রা তথা ব্যাংক বহির্ভূত মুদ্রা ,
২. ব্যাংকের চাহিদা আমানত এবং
৩. ব্যাংকের মেয়াদি আমানত ।
১. জনগণের হাতের মুদ্রা : সাধারণত সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কারেন্সি নোট ইস্যু করে । কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি মূল্যের কাগজি নোট ইস্যু করে । সরকার কম মূল্যের নোট এবং ধাতব মুদ্রা ইস্যু করে ।
২. চাহিদা আমানত : চাহিদা আমানত বলতে গ্রাহকরা চাহিবামাত্র ব্যাংক পরিশোধ করতে বাধ্য এমন আমানত বুঝায় । এ ধরনের আমানত যারা ব্যাংকে রাখে তারা যে কোন সময় একে নগদ অর্থে রূপান্তর এবং লেনদেনের কাজে ব্যবহার করতে পারে । এ হিসাবে রাখা প্রায় নগদ অর্থের মতো ।
৩. মেয়াদি বা সময় আমানত : সাধারণ অর্থে মেয়াদি আমানত অর্থ সরবরাহের একটি উপাদান নয় । বিস্তৃত অর্থে এটি সরবরাহের একটি উপাদান ।
অ – ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান কী ?
উত্তর : অ – ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান একটি মধ্যবর্তী আর্থিক প্রতিষ্ঠান । অ- ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে এমন প্রতিষ্ঠান বুঝায় যেগুলো জনগণ থেকে মূলত মেয়াদি আমানত বা প্রায় অর্থসংগ্রহ করে এবং সদস্য বা গ্রাহকদেরকে বন্ধকি বা অপরাপর ধরনের ঋণ সরবরাহ করে । যেমন — লিজিং কোম্পানি , বিল্ডিং সোসাইটি ইত্যাদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কিছু দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে ।
অধ্যাপক G. J. Gurley এবং E. Shaw এবং G. Clayton এর মতে , এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ মুদ্রার যোগান নয় বরং মুদ্রার গতিবেগ প্রভাবিত করতে পারে । এরা ঋণের এক উল্লেখযোগ্য অংশ সরবরাহ করে । এতে দেশে মুদ্রার গতিবেগ বাড়বে । ফলে অর্থের চাহিদা বাড়বে । এতে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা ব্যাহত হবে । অনেক সময় ঋণ তহবিলের অভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের ঋণ চাহিদা মিটাতে পারে না । ফলে তারা ব্যাংক নয় এমন মধ্যবর্তী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণের জন্য যায় । Radcliffe কমিটির রিপোর্ট ( যা মূলত কেইনসীয় চিন্তাধারার সাথে সংগতিপূর্ণ ) অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান অর্থ এবং প্রায় অর্থ সরবরাহ করে । এ দুই উপাদান একে অপরের ঘনিষ্ঠ বিকল্প । জনগণের অর্থের চাহিদা বাণিজ্যিক ব্যাংক মিটাতে না পারলে তারা অ – আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ চাহিদা বাড়ায় । এতে মুদ্রার প্রচলন গতি বাড়ে । ফলে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা অনেকটা ব্যাহত হয় ।
শক্তিশালী মুদ্রা ও প্রকৃত ( সাধারণ ) মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর : শক্তিশালী মুদ্রা ও প্রকৃতি ( সাধারণ ) মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য : শক্তিশালী মুদ্রা বলতে মোট কারেন্সি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত অপরাপর ব্যাংকের রিজার্ভ এ দুয়ের যোগফল বুঝায় ।
B = C + R যেখানে B = আর্থিক ভিত্তি / শক্তিশালী মুদ্রা ।
C = ব্যাংক বহির্ভূত কারেন্সির পরিমাণ বা জনগণের হাতের মুদ্রা ।
R = কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত অপরাপর ব্যাংকের রিজার্ভ । পক্ষান্তরে , যে মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে দেশে প্রচলন এবং ব্যবহার হয় তাকে প্রকৃত বা সাধারণ মুদ্রা বলে ।
M = C + D যেখানে M = প্রকৃত / সাধারণ মুদ্রা ।
C = ব্যাংক বহির্ভূত কারেন্সি / জনগণের হাতের মুদ্রা ।
D = ব্যাংকের চাহিদা আমানত ।
উপর্যুক্ত সংজ্ঞা থেকে এ দুই ধরনের মুদ্রার মধ্যে নিম্নোলিখিত পার্থক্য দেখানো যায় :
১. শক্তিশালী মুদ্রার মধ্যে ব্যাংক আমানত নেই । অর্থাৎ ব্যাংক মুদ্রা নেই । সাধারণ মুদ্রার মধ্যে ব্যাংকের চাহিদা আমানত তথা ব্যাংক মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত থাকে ।
২. শক্তিশালী মুদ্রা একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক সৃষ্টি করতে পারে । ব্যাংক নিজের উপর দায় সৃষ্টি করে এরূপ মুদ্রা প্রচলন করতে পারে ।
৩. অপরাপর বিষয়সমূহ স্থির থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংক বহুগুণ চাহিদা আমানত অসীমভাবে সৃষ্টি করতে পারে । কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক অসীমভাবে শক্তিশালী মুদ্রা সৃষ্টি করতে পারে না ।
৪. শক্তিশালী মুদ্রা হলো বিহীত মুদ্রা । সাধারণ / প্রকৃত মুদ্রার একাংশ বিহিত মুদ্রা হলেও অপর অংশ চাহিদা আমানত হলো ঐচ্ছিক মুদ্রা ।
আধুনিক অর্থনীতিতে মুদ্রার ভূমিকা কী ?
উত্তর ৷ ভূমিকা : আধুনিক অর্থনীতিতে মুদ্রা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধনাত্মক ভূমিকা পালন করলেও কিছু ক্ষেত্রে ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে । নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :
মুদ্রার ধনাত্মক ভূমিকা : নিম্নোক্ত উপায়ে মুদ্রা আধুনিক অর্থনীতিতে ধনাত্মক ভূমিকা পালন করে :
১. বিনিময়ের মাধ্যম : বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার প্রচলন হওয়ায় আধুনিক অর্থনীতিতে দ্রব্য বিনিময়ের অসুবিধা দূর হয় । মানুষ তার রুচি , অভ্যাস ও চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্যের লেনদেন অল্প সময়ে সহজে করতে পারছে ।
২. মূল্যের সংরক্ষক : বাস্তবে বিভিন্ন সম্পদের মাধ্যমে মানুষ ক্রয় ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে । অর্থ , বন্ড , স্টক এবং অপরাপর আর্থিক সম্পদ হলো ক্রয় ক্ষমতা ধরে রাখার বিভিন্ন মাধ্যম ।
৩. স্থগিত লেনদেনের মান নির্ধারক : অর্থ ভবিষ্যৎ লেনদেন মিটানোর মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে । আধুনিক অর্থনীতিতে ঋণগ্রহণ ও পরিশোধের জন্য অর্থ ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় ।
৪. দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন ও কটন : আধুনিক সমাজে অর্থের ভূমিকা অনেক এবং সুদূরপ্রসারী । বর্তমান যুগে অর্থ বৃহদায়তন উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে ।
৫. ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার : পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে উৎপাদক এবং ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম । কারণ উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রম বিভাগ এবং বিশেষীকরণ অর্থ পাওয়ার উপর অনেকটা নির্ভরশীল ।
৬. ভোগ , বিনিয়োগ , আয় ও নিয়োগ নির্ধারণ : আধুনিক অর্থনীতিতে ভোগ এবং বিনিয়োগ নির্ধারণে অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । অর্থের প্রসার এবং সংকোচন দ্রব্যের চাহিদা বাড়াতে এবং কমাতে পারে ।
উপসংহার : আধুনিক অর্থনীতিতে মুদ্রার ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
শেয়ার বাজারের সংজ্ঞা দাও ।
উত্তর : শেয়ার বাজারের ধারণা বা সংজ্ঞা : মূলধন বাজারের যে অংশে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইস্যু এবং ক্রয় ও বিক্রয় হয় তাকে শেয়ার বাজার বলে । শেয়ার বাজার দুই অংশে ভাগ করা যায় । প্রাথমিক শেয়ার বাজার এবং দ্বিতীয় শেয়ার বাজার । যে বাজারে নতুন শেয়ার ইস্যু করা হয় তাকে প্রাথমিক শেয়ার বাজার বলা হয় । আগে ইস্যুকৃত বিভিন্ন শেয়ারের লেনদেন যে বাজারে সম্পাদন হয় তাকে দ্বিতীয় শেয়ার বাজার বলে । প্রাথমিক বাজারে নতুন শেয়ার ক্রয় করলে ক্রেতা নগদ অর্থের বদলে সম্পদ অর্জন করে যা একমাত্র দ্বিতীয় বাজারে বিক্রয় করে নগদ অর্থে পুনরায় রূপান্তর করতে পারে । তাছাড়া প্রাথমিক বাজারে শেয়ার ক্রয়জনিত কোন ঝুঁকি দ্বিতীয় বাজার ন্যূনতম রাখতে সহায়তা করে ।
বাংলাদেশে মূলধন বাজারের বৈশিষ্ট্য কী কী ?
উত্তর : মূলধন বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ : মূলধন বাজারের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য আছে :
১. দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তহবিল নিয়ে কারবার : মূলধন বাজার সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দানযোগ্য তহবিল নিয়ে কাজকর্ম চালায় ।
২. দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র : মূলধন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র ক্রয়বিক্রয় হয় । সরকারি বন্ড , বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার , ডিবেঞ্চার ইত্যাদি এরূপ বাজারে লেনদেন হয় ।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো : মূলধন বাজারে সরকার ছাড়াও শিল্প ব্যাংক , বিনিয়োগ ব্যাংক , বীমা কোম্পানি , পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা , স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি নিয়োজিত থাকে ।
৪. স্টক এক্সচে : স্টক এক্সচেঞ্জ হলো মূলধন বাজারের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ । এখানে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি , সরকার এবং আধা – সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণপত্রের লেনদেন হয় ।
৫. সময় পরিধি : সময় বিবেচনা করলে মূলধন বাজারের কাঠামো দুই ধরনের হয় । স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ।
৬. বাজার কাঠালো : মূলধন বাজার দুই অংশে ভাগ করা যায় । প্রাথমিক বাজার এবং গৌণ / মাধ্যমিক বাজার । প্রাথমিক বাজারে নতুন ঋণপত্র ইস্যু হয় ।
৭. ইক্যুইটি তহৰিল : নতুন উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ তহবিলের একাংশ বহন করবে । এ শর্তাধীনে বিশেষায়িত ব্যাংক এবং অপরাপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাকী তহবিলের সংস্থান করে ।
শেয়ার বাজার এবং মূলধন বাজারের মধ্যে পার্থক্য কী ?
উত্তর : শেয়ার বাজার এবং মূলধন বাঙ্গারের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য দেখানো যায় :
১. সংজ্ঞাগত : যে বাজারে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইস্যু , জয় ও বিক্রয় হয় তাকে শেয়ার বাজার ফলে । অপরপক্ষে , যে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র এবং ঋণ দানযোগ্য তহবিল নিয়ে কাজকর্ম চলে তাকে মূলধন বাজার বলে ।
২. হাতিয়ার : শেয়ার বাজারে শুধুমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয় । মূলধন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র ক্রয়বিক্রয় হয় ।
৩. কাঠামোগত কারণ : মূলধন বাজারের কাঠামো দুই ধরনের হয় । যথা : স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি । অপরপক্ষে , শেয়ার বাজারও দুই অংশে বিভক্ত যেমন- প্রাথমিক শেয়ার বাজার এবং দ্বিতীয় / গৌণ শেয়ার বাজার ।
৪. মূলধনের যোগান : মূলধন বাজার বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকরী যা চলিত মূলধন এবং স্থায়ী মূলধনের যোগান দেয় । কিন্তু শেয়ার বাজার শুধুমাত্র স্থায়ী মূলধনের উৎস হিসেবে কাজ করে ।
৫. বাজারের পরিধি : মূলধন বাজারের পরিধি বৃহত্তর । কিন্তু শেয়ার বাজার এর একটি অংশমাত্র ।
৬. ইক্যুইটি তহবিল : মূলধন বাজার ইক্যুইটি তহবিলের সংস্থান করে । কিন্তু শেয়ার বাজার এ ধরনের কোন তহবিল সৃষ্টি করে না ।
৭. ঋণ তহবিলের সময় পরিধি : মূলধন বাজার প্রধানত মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তহবিলের উৎস হিসেবে কাজ করে । কিন্তু শেয়ার বাজার মূলত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তহবিলের যোগান দেয় ।
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে মন্দার কারণ কী কী ?
উত্তর : বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে মন্দার কারণসমূহ : নিম্নোক্ত কারণে শেয়ার বাজারে মন্দা পরিলক্ষিত হয় :
১. প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম : সাধারণত শেয়ার বাজারে মন্দার অন্যতম প্রধান কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের অভাব । সাধারণত সংকট দেখা দিলে অ – ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজির যোগান বাড়িয়ে বাজার গতিশীল রাখে ।
২. ব্যবস্থাপনা : অনেক দেশে শেয়ার বাজারে নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবস্থাপনা আলাদা থাকে । অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন সরকারের মনোনীত ব্যক্তি ।
৩. অনিয়মিত তথ্য : প্রতিনিয়ত তথ্য পাওয়া গেলে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সুবিধা হয় । এস . ই . সি বিনিয়োগকারীদের তথ্য সরবরাহের জন্য প্রতিতিন মাস অন্তর একটি এবং বছরে একটি বড় আকারের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল ।
৪. অজ্ঞ আচরণ : একশ্রেণীর অসাধু ব্রোকার এবং কিছু শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানি অশুভ আঁতাত করে মাঝে মাঝেই শেয়ার বাজারে ম্যানিপুলেশনের আশ্রয় নেয় ।
৫. এস . ই . সি এর দুর্বলতা : সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও স্টক এক্সচেঞ্জসমূহের কাজ নিয়মিত মনিটর করা ।
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের মন্দা উত্তরণে তোমার সুপারিশ কী ?
উত্তর : বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের মন্দা উত্তরণে সুপারিশ : শেয়ার বাজারকে গতিশীল করার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেয়া যায় :
প্রথমত , স্টক এক্সচেঞ্জের নীতি নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনা পৃথক করার জন্য এদের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হবে । অর্থাৎ কমিশন স্টক এক্সচেঞ্জসমূহের নীতি নির্ধারণ করে দেবে ।
দ্বিতীয়ত , স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সাথে কর্তৃপক্ষের সমঝোতা এবং সহায়ক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে ।
তৃতীয়ত , সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে পেশাজীবী এবং দক্ষ লোক নিয়োগ করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে ।
চতুর্থত , প্রসপেক্টাসে উল্লেখ থাকতে হবে উদ্যোক্তা কোম্পানির শেয়ার কতটুকু এবং উক্ত কোম্পানির বাণিজ্যিক কাজ শুরুর ২ বছরের মধ্যে কোন শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না । একে শেয়ার লক ইন পদ্ধতি বলে ।
পঞ্চমত , স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্য নন ব্রোকার হবেন । সদস্যরা সরকারি – বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি হতে হবে ।
ষষ্ঠত , এক্সচেঞ্জ কমিশন তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির তথ্য কম্পিউটারাইজ করে লাইব্রেরি গঠনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করবে যাতে সব বিনিয়োগকারীর কাছে তথ্য সহজলভ্য হয় ।
সপ্তমত , শেয়ার বাজার সম্পর্কে প্রশিক্ষণের জন্য একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে ।
অষ্টমত , আধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে ।
নবমত , এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট ট্যাক্স অ – তালিকাভুক্ত কোম্পানি চেয়ে ১০ % থেকে ১৫ % কম সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য চালু করা যেতে পারে ।
বাংলাদেশের পুঁজি বাজারের কাঠামো বর্ণনা কর ।
উত্তর : বাংলাদেশের পুঁজি বাজারের কাঠামো নিম্নরূপ :
১. বাংলাদেশ পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা : পুঁজি বাজারের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা নিম্নোক্ত কাজ সম্পাদন করে :
ক . শেয়ারের পাবলিক ইস্যুর অবলেখন এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে ব্রিজিং ঋণের ব্যবস্থাকরণ ।
খ . করপোরেট বন্ড বা ঋণপত্র ক্রয়ের মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য প্রদান ।
গ . সরকারের বিনিয়োগ নীতিতে অংশগ্রহণ ।
ঘ . বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত গ্রহণ ।
ঙ . মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ইউনিট সার্টিফিকেট ইস্যু ।
চ . বিনিয়োগকারীদের হিসাব খোলা ও রক্ষা করা ।
২. বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা : বাংলাদেশের মূলধন বাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা নিম্নোক্ত কাজ সম্পাদন করে :
ক . আর্থিক সহায়তা ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা প্রদান যাতে করে দেশে শিল্পখাতে পুঁজি বিনিয়োগের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় ।
খ . বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক জনগণ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সংগ্রহ করে ।
৩. স্টক এক্সচেঞ্জ : ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য বিপণন সৃষ্টি করা । যেসব কোম্পানি এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত তাদের শেয়ার যে কোন সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জে ক্রয়বিক্রয় করা যায় ।
বাংলাদেশে পুঁজি বা মূলধন গঠনে শেয়ার বাজারের ভূমিকা কী ?
উত্তর ৷ ভূমিকা : শেয়ার বাজার হলো ঋণপত্রের একটি মধ্যবর্তী বাজার । এখানে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার , ডিবেঞ্চার , বন্ড ইত্যাদি ক্রয়বিক্রয় হয় । বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ কার্যরত রয়েছে । এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ স্বাধীনতার আগে স্থাপিত হয় । অপরটি হলো চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ যা সাম্প্রতিক কালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । মূলত এ দুই প্রতিষ্ঠান শেয়ার বাজারের মাধ্যমে পুঁজি গঠনে ভূমিকা পালন করে ।
১. প্রথমত , বিনিয়োগে আবদ্ধ মূলধনের হস্তান্তর যোগ্যতা এবং তারল্যের নিশ্চয়তা বিধান স্টক এক্সচেঞ্জ করছে । কারণ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ ঋণপত্র লেনদেনের অবিচ্ছিন্ন বাজার হিসেবে কাজ করছে ।
২. দ্বিতীয়ত , স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যক্তি , ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান করপোরেশন ইত্যাদির সঞ্চয় বিভিন্ন করপোরেট ঋণপত্রে বিনিয়োগে সহায়তা করে তাদের জন্য লাভজনক অর্থায়ন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৩. তৃতীয়ত , স্টক এক্সচেঞ্জসমূহ দেশের বিভিন্ন শিল্প / ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল বণ্টনে সহায়তা করে ।
৪. চতুর্থত , স্টক এক্সচেঞ্জগুলো সরাসরি ঋণদানে নিয়োজিত না থাকলেও পরোক্ষভাবে শিল্পখাতে অর্থসংস্থানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজেদের কাছে রক্ষিত ঋণপত্রাদি স্টক মার্কেটের দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করে জরুরি সময়ে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে ।
উপসংহার : সবশেষে বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঋণপত্র বিনিয়োগকারীরা ক্রয় করে । স্টক মার্কেট অবিচ্ছিন্ন , ঋণপত্রের বাজারজাতকরণ এবং তারল্যের নিশ্চয়তা বিধান করে ।
বাংলাদেশের মতো অনুন্নত মুদ্রা বাজারের ত্রুটিসমূহ কী কী ?
উত্তর : অনুন্নত অর্থ বাজারের নিম্নোক্ত ত্রুটি আছে :
১. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাংগঠনিক এবং আইনগত দুর্বলতা : অনুন্নত অর্থ বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে । তবে এর সাংগঠনিক ও আইনগত ভিত্তি দুর্বল । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত অধিকারের মধ্যে ফাঁক আছে । অনেক দেশে অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ।
২. শক্তিশালী এবং পারস্পরিক ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত উপবাজারের অনুপস্থিতি : অনুন্নত অর্থ বাজারে উপবাজার যেমন – বিল বাজার , তলবি ঋণ বাজার , ঋণপত্রের বাজার ইত্যাদি উন্নত নয় । এদের সংবেদনশীলতা কম । কিছু অনুন্নত দেশে এসব বাজার নেই বললেই চলে ।
৩. পরনির্ভরশীলতা : অনুন্নত অর্থ বাজার আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য বিদেশি ব্যাংক এবং প্রতিনিধিদের উপর নির্ভরশীল । দেশে কোন উন্নত মানের আর্থিক কেন্দ্র না থাকায় এ নির্ভরশীলতার সৃষ্টি হয় ।
8. • দ্বৈত প্রকৃতির অর্থ বাজার : অনুন্নত অর্থ বাজার দ্বৈত প্রকৃতির । অর্থ বাজারের দুই অংশ আছে , সংগঠিত অংশ যেখানে কেন্দ্রীয় এবং অন্যান্য ব্যাংক কার্যরত । অসংগঠিত অংশ যেখানে গ্রাম্য মহাজন , স্বর্ণকার ইত্যাদি লোক আর্থিক লেনদেনে নিয়োজিত ।
৫. আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যোগাযোগ কম : অনুন্নত অর্থ বাজারের সাথে বিশ্বের উন্নত অর্থ বাজারের যোগাযোগ নিবিড় নয় । এখানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন আর্থিক কেন্দ্র নেই । যেমন- বাংলাদেশের অর্থ বাজারে লন্ডনের মতো কোন সংবেদনশীল অংশ নেই ।
সংকীর্ণ ও ব্যাপক মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য দেখাও ।
উত্তর : আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল । সংকীর্ণ এবং বিস্তৃত অর্থে অর্থ সরবরাহের ধারণা প্রকাশ করে । সংকীর্ণ অর্থ বলতে জনগণের হাতের নগদ অর্থ এবং তফশিলি ব্যাংকের চাহিদা আমানতের সমষ্টি বুঝায় । M = Cu + DD ; যেখানে My = সংকীর্ণ অর্থ , Cu = জনগণের হাতের অর্থ এবং DD = ব্যাংকের চাহিদা আমানত । বিস্তৃত অর্থ , সংকীর্ণ অর্থ এবং ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের যোগফল : M2 = M + TD = CU + DD + TD যেখানে TD = তফশিলি ব্যাংকের মেয়াদি আমানত । তারল্যের ভিত্তিতে সংকীর্ণ এবং ব্যাপক অর্থের মধ্যে পার্থক্য আছে । ব্যাপক অর্থ , সংকীর্ণ অর্থ এবং মেয়াদি আমানতের যোগফল । মেয়াদি আমানত যে কোন সময় লেনদেনের কাজে ব্যবহার করা যায় না । কারণ একে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না ।
কালো টাকা কী ?
উত্তর : কোন দেশে কাগজি নোট অথবা ধাতব মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যম এবং মূল্যের সংরক্ষণ হিসেবে ব্যবহার হয় । কিন্তু এ মুদ্রার যে অংশ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না হয়ে লুকায়িত মজুদের আকারে থাকে তাকে কালো মুদ্রা বা কালো টাকা বলা হয় । এক কথায় কোন ব্যক্তি তার কাছে থাকা টাকার যে অংশ অনৈতিকভাবে মজুদ রাখে অথবা কোন অবৈধ কাজ কারবারে বিনিয়োগ করে তখন ঐ অংশকে কালো টাকা বলা হয় । কালো টাকা নিম্নোক্তভাবে সৃষ্টি হয় : গোপন ব্যবসায় বাণিজ্য থেকে অর্জিত অর্থ যা আয়করের আওতায় আসে না । চোরাকারবার থেকে অর্জিত অর্থ চোরাচালানিরা গুপ্তভাবে সংরক্ষণ করে । উৎকোচ অথবা ঘুষ গ্রহণ । মাদক দ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রি থেকে অর্জিত টাকা । * মুদ্রার কালোবাজারি থেকে অর্জিত অতিরিক্ত টাকা ।
বাংলাদেশে আর্থিক নীতির গুরুত্ব , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ?
উত্তর : কতকগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে সরকার আর্থিক নীতি গ্রহণ করে । নিম্নে আর্থিক নীতির গুরুত্ব , লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করা হলো :
১. বিনিয়োগ ও নিয়োগ বৃদ্ধি : অর্থনীতিতে বেকারত্ব দূরীকরণে বিনিয়োগের ভূমিকা অনস্বীকার্য । তাই বিনিয়োগ কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার জন্য তথা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য আর্থিক নীতির প্রয়োগ একটি স্বীকৃত মাধ্যম ।
২. তারল্যতা নিয়ন্ত্রণ : অর্থ বাজারে অর্থের তারল্য বৃদ্ধি কিংবা সংকট দেখা দিলে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় । অর্থের তারল্যতা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় বজায় রাখতে আর্থিক নীতির আশ্রয় নেয়া হয় ।
৩. দামন্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা : দামস্তরের অনাকাঙ্ক্ষিত উঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা তথা অর্থের অভ্যন্তরীণ মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা আর্থিক নীতির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য । দামস্তর অতিমাত্রায় উঠানামা করলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচন তথা বেকারত্ব বা মন্দা দেখা দেয় ।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করা : সরকারের যে কোন নীতির ন্যায় আর্থিক নীতিরও অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো এবং প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা ।
৫. ঋণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ : আর্থিক নীতি দেশের ঋণ সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করে । ঋণের অনাবশ্যক সম্প্রসারণ কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় সংকোচন দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনে ।
৬. অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ : অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অর্থের সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আর্থিক নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।
৭. অর্থের বাহ্যিক মূল্য নিয়ন্ত্রণ : বৈদেশিক মুদ্রার সাথে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার অতিমাত্রায় উঠানামা করলে তা আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে । কাজেই আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রার সাথে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা জরুরি । এক্ষেত্রে আর্থিক নীতির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক নীতির ভূমিকা উল্লেখ কর ।
উত্তর : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক নীতি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । নিম্নে আর্থিক নীতির ভূমিকা তুলে ধরা হলো :
১. ভোগ বৃদ্ধি : সরকার আর্থিক নীতির অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে পণ্য ঋণ প্রদানের অনুমতি দিয়ে থাকে । এর ফলে উন্নত ভোগ্যপণ্যের ভোগ বাড়ে , উৎপাদন বাড়ে ও জনকল্যাণ বৃদ্ধি পায় ।
২. ঋণ নিয়ন্ত্রণ : আর্থিক নীতি প্রয়োগ করে ঋণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় । ঋণের অনাবশ্যক সম্প্রসারণ কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় সংকোচন অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা ও বিপর্যয় ডেকে আনে ।
৩. তারল্য সংকট মোকাবিলা : বাংলাদেশের অর্থ বাজারে প্রায়ই তারল্য সংকট দেখা দেয় । এর ফলে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় । অর্থের তারল্যতা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় বজায় রাখার জন্য আর্থিক নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৪. বেকারত্ব দূরীকরণ : বেকারত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি দীর্ঘদিনের স্থায়ী সমস্যা । সরকার সহজে আর্থিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সুদের হার কমিয়ে ঋণ ও অর্থের সরবরাহ বাড়িয়ে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে পারে ।
৫. অর্থের বাহ্যিক মূল্য নিয়ন্ত্রণ : আর্থিক নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার সাথে দেশীয় মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা যায় । এর ফলে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে ।
৬. প্রবৃদ্ধি অর্জন : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে আর্থিক নীতি পরিচালিত হয় ।
৭. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা । সরকার সংকোচনমূলক আর্থিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ঋণ ও অর্থের সরবরাহ কমিয়ে রেখে মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ।
৮. অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ : আর্থিক নীতি অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
বাংলাদেশে আর্থিক নীতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর ।
অথবা , বাংলাদেশে আর্থিক নীতি কেন ব্যর্থ হয় ?
উত্তর : বাংলাদেশের বাস্তবতায় আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে । এর ফলে আর্থিক নীতি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে পড়ে । নিয়ে আর্থিক নীতি কার্যকারিতার সীমাবদ্ধতাসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. অবকাঠামোগত দুর্বলতা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকারের আর্থিক খাতে অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে আর্থিক নীতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না ।
২. সমন্বয়হীনতা : বাংলাদেশ ব্যাংক , বাণিজ্যিক ব্যাংক , বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান , সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ইত্যাদি অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয়ের অভাব রয়েছে ।
৩. ঋণ নিয়ন্ত্রণ সমস্যা : বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা খুবই সীমিত । এ অবস্থায় আর্থিক নীতি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হতে বাধ্য ।
৪. তারল্য সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতা : বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের তারল্য সংকট নিরসনে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ।
৫. অসংগঠিত অর্থ বাজার : বাংলাদেশের অর্থ বাজার ও মূলধন বাজার এখনো সংগঠিত নয় । এ অবস্থায় আর্থিক নীতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না ।
৬. কালো টাকা : বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুলাংশে কালো টাকা বা অবৈধ অর্থ দ্বারা পরিচালিত হয় । এ কারণে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক নীতি অকার্যকর হয়ে পড়ে ।
৭. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ অপরাপর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই । এ অবস্থায় সরকার কর্তৃক গৃহীত আর্থিক নীতি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে পড়ে ।
৮. অর্থের বাহ্যিক মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা : সর্বোপরি বিদেশি মুদ্রার সাথে দেশি মুদ্রার বাহ্যিক মূল্য স্থিতিশীল রাখা আর্থিক নীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব হয় না ।
[ad_2]