প্রশ্নঃ বাংলাদেশে সরকারি ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে সরকারি ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।

উত্তরঃ ভূমিকা : বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় সরকারি ঋণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই । বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম । মূলধন ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে আমরা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো কাজে লাগাতে পারছি না । কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় সরকারের রাজস্ব আয়ের দ্বারা উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্রমবর্ধমান ব্যয় সংকুলান করা সম্ভব নয় । ফলে সরকারকে বাধ্য হয়ে দেশ ও বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে হচ্ছে ।

সরকারি ঋণের গুরুত্ব : নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরকারি ঋণের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :

১. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার : আমাদের দেশে প্রচুর অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে । মূলধন ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে আমরা এগুলো কাজে লাগাতে পারছি না । ঋণের সাহায্যে এসব প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে । এরূপ ক্ষেত্রে সরকারি ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই । কারণ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব ঋণ আপনা আপনি শোধ হয়ে যাবে ।

২. কৃষি উন্নয়ন : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের কৃষি ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত । সরকারি ঋণের সাহায্যে আমাদের কৃষি আধুনিকীকরণ সম্ভব । এর ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারি ঋণ আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে না ।

৩. শিল্পোন্নয়ন : বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের গতি খুব মন্থর । মূলধনের অভাবে আমাদের শিল্পোন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে । সরকারি ঋণের সাহায্যে আমাদের শিল্পোন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যায় ।

৪. বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ : আমাদের রপ্তানির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম । শিল্পোন্নয়নের জন্য যন্ত্রপাতি যন্ত্রের খুচরা অংশ , শিল্পের কাঁচামাল ইত্যাদি আমাদেরকে আমদানি করতে হয় । এগুলো আমদানি করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রপ্তানির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয় । তাই সরকার বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে পারে ।

৫. কুটিরশিল্পের উন্নয়ন : আমাদের অর্থনীতিতে কুটিরশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ভারী শিল্পের তুলনায় কুটিরশিল্পে বিনিয়োগ ও প্রকৃত উৎপাদনের মধ্যে সময়ের ফাঁক খুবই কম । সুতরাং সরকারি ঋণের সঙ্গে যদি উৎপাদন বাড়ানো যায় তবে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা কমে ।

৬. দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকারি ঋণের প্রয়োজন রয়েছে । যেসব উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয় অত্যন্ত বেশি সেসব কাজের জন্য জনগণের কাছ থেকে কর আদায়ের চেয়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেশি যুক্তিযুক্ত । কারণ বিপুল পরিমাণ অর্থসংগ্রহ করতে হলে জনগণের উপর বেশি চাপ সৃষ্টি হতে পারে ।

৭. জনকল্যাণমূলক কাজ : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক কল্যাণকর কাজ যেমন- রাস্তাঘাট , হাসপাতাল , স্কুল ইত্যাদি নির্মাণ করার জন্য সরকারি ঋণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । করের মাধ্যমে এসব বিপুল পরিমাণ অর্থসংগ্রহ করা সম্ভব নয় ।

৮. আকস্মিক জরুরি প্রয়োজন : বন্যা , ঝড় , দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানার পর জরুরি অবস্থায় অতিরিক্ত সরকারি ব্যয় অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং সরকার ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় । কারণ কর আরোপ করে অর্থসংগ্রহ সময় সাপেক্ষ ।

৯. বাজেটের ঘাটতি পূরণ : সরকারের অনুমিত আয়ব্যয় বরাদ্দ কার্যত সবসময় সঠিক নাও হতে পারে । কোন বছর আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশিও হতে পারে । এরূপ বাজেট ঘাটতি পূরণ করার জন্য সরকারি ঋণ গ্রহণ করা খুবই যুক্তিযুক্ত । কারণ এরূপ বাজেট ঘাটতি নতুন করে কর আরোপ করে পূরণ করা সম্ভব নয় ।

১০. কর রাজস্বের স্বল্পতা : বাংলাদেশের জনগণ খুবই দরিদ্র এবং তাদের কর প্রদান ক্ষমতাও খুব কম । এরূপ অবস্থায় কর রাজস্বের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয়ভার বহন করতে গেলে দেশের জনগণের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে । তাই জনগণের সহ্য সীমার বাইরে কর আরোপ না করে , বরং ঋণ গ্রহণ করাই সরকারের পক্ষে যুক্তিগত ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে , বাংলাদেশের জন্য সরকারি ঋণের বিকল্প কিছু নেই । অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি ঋণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

[ad_2]