[ad_1]
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে ঋণ সেবা সমস্যা সমাধানের উপায় বর্ণনা কর ।
উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশ সরকারের ঋণ সেবার পরিমাণ বিপুল হওয়ার কারণে একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে । দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রায় এক – পঞ্চমাংশ ঋণ সেবার জন্য ব্যয় হয়ে গেলে নিজস্ব সম্পদ দ্বারা ব্যাপক বিনিয়োগ সম্ভব হয় না , বরং ঋণ সেবাতেই নতুন বৈদেশিক সাহায্য ব্যয় হয়ে যায় । এমতাবস্থায় ঋণ সেবার পরিমাণ হ্রাস করা প্রয়োজন । ঋণ সেবা সমস্যা সমাধানের উপায় : নিম্নে সরকারি ঋণ পরিশোধ এবং অধিক ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা হ্রাসের কিছু উপায় নির্দেশ করা হলো :
১. নিমজ্জমান তহবিল : এ পদ্ধতিতে সরকার প্রতি বছর রাজস্ব আয় থেকে কিছু অর্থ আলাদা করে রেখে একটি তহবিল গঠন করে । এ নিমজ্জমান তহবিল থেকে ক্রমে সরকারি ঋণ পরিশোধ করা যায় ।
২. ঋণ অস্বীকার : সরকারি ঋণ পরিশোধের সমস্যা সমাধানের একটি অর্থনৈতিক উপায় হচ্ছে ঋণ অস্বীকার করা । বস্তুত ঋণ অস্বীকার করা ঋণ পরিশোধের কোন পদ্ধতি নয় , যদিও এ উপায়ে ঋণের অবসান ঘটে । সাধারণত বৈপ্লবিক সরকার এ পদ্ধতি অবলম্বন করে । কিন্তু এ পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য নয় । এতে সরকারের উপর আস্থা নষ্ট হয় ।
৩. বাজেট উদ্বৃত্ত : সরকারের উন্নয়ন বাজেট নিজস্ব সম্পদ দ্বারা অর্থায়ন করার জন্য রাজস্ব বাজেটের উদ্বৃত্ত বাড়াতে হবে । সম্প্রতি রাজস্ব উদ্বৃত্ত কিছুটা বেড়েছে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ১ % তা দ্বারা অর্থায়ন করা হচ্ছে । ভবিষ্যতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে রাজস্ব উদ্বৃত্ত বাড়াতে হবে । বাংলাদেশের কর / জিডিপি অনুপাত এখনো নিম্নপর্যায়ে আছে বিধায় কর রাজস্ব বৃদ্ধির অবকাশ আছে । অন্যদিকে , সরকারের প্রতিরক্ষা ব্যয় হ্রাস , প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস , অপব্যয় রোধ ইত্যাদির মাধ্যমে অনুন্নয়ন ব্যয় কমাতে হবে । এভাবে নতুন সরকারি ঋণের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে এবং অনাদায়ী ঋণ পরিশোধ করতে হবে ।
৪. ঋণের রূপান্তর : এ পদ্ধতিতে উচ্চ সুদ হার সম্বলিত ঋণকে নিম্ন সুদ হারের ঋণে রূপান্তর করা হয় । যখন বাজারে সুদ হার হ্রাস পায় তখন ঐ হ্রাস প্রাপ্ত হারে অর্থ ধার করে সরকার পূর্ববর্তী উচ্চ সুদ হার সম্বলিত ঋণ পরিশোধ করতে পারে । এ পদ্ধতিতে ঋণের ভার লাঘব হয় । কিন্তু ঋণ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ হয় না । বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করার সুযোগ তেমন নেই ।
৫. মূলধন কর : মূলধনের উপর ধার্যকৃত করকে মূলধন কর বলা হয় । এ করকে হঠাৎ এককালীন ধার্য করতে হয় । অন্যথায় পুঁজিপতিগণ আগে টের পেলে পুঁজি বিদেশে পাচার করে । তাই আকস্মিকভাবে মূলধন কর আরোপ করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা যায় এবং বৈদেশিক ঋণ মিটানো যায় ।
উপসংহার : মোটকথা , অত্যধিক ঋণের বোঝা কমানো এবং ঋণ সেবা কমানোর কার্যকরী উপায় হচ্ছে সরকারি খাতে সঞ্চয় বা উদ্বৃত্ত বাড়ানো । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বন্ড ছেড়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণ করেছেন । কিন্তু তাতে বেসরকারি খাতে তহবিলের অভাব তথা ক্রাউডিং আউট সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বিধায় ব্যাপক হারে ঘাটতি পূরণের এ পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য নয় ।
[ad_2]