[ad_1]
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ বর্ণনা কর ।
উত্তর ৷ ভুমিকা : মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা । স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং দেশে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ।
বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণ : নিয়ে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. অর্থের যোগান বৃদ্ধি : বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো অর্থের যোগান বৃদ্ধি । স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশে অর্থ সরবরাহের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । ১৯৭১ সালে দেশে মুদ্রা সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৩৩৩ কোটি টাকা । ২০০৬ সালে এসে দাঁড়ায় ৪৩,১৪৪ কোটি টাকা । সুতরাং অর্থের যোগান লাগামহীন বৃদ্ধি বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে দায়ী ।
২. উৎপাদন হ্রাস : বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো উৎপাদন হ্রাস । বস্তুত স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতির মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
৩. উদার ঋণনীতি : স্বাধীনতা লাভের পর দেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন ও পুনঃনির্মাণের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণদান যথেষ্ট উদার করা হয় । ১৯৭২ সালে দেশে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৫৪.২৭ কোটি টাকা , ২০০৭ সালের মার্চ পর্যন্ত উহা ১,৯৫,৮৩৫ কোটি টাকা হয় । এভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদার ঋণনীতির কারণে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ।
৪. খাদ্য ঘাটতি : দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি , বন্যা , খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় । এর ফলে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি পায় এবং দ্রব্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যায় ।
৫. আমদানি দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি : বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশকে বর্ধিত দামে দ্রব্য আমদানি করতে হয় । ফলে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায় ।
৬. উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি : কাঁচামালের উৎপাদন ব্যয় যন্ত্রপাতির অভাব , শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি , বিদ্যুৎ , কাগজ , নিউজপ্রিন্ট এবং পেট্রোল ও পেট্রোলজাত দ্রব্যের সরবরাহ মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে দেশে মূল্যস্তরও বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৭. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না । ফলে দ্রব্যমূল্য দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে ।
৮. মজুতদারি ও চোরাকারবারি : মজুতদার , চোরাকারবারি মুনাফাখোর , চোরাচালানি প্রভৃতি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজেদের হীন স্বার্থে দেশের অভ্যন্তরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাময়িক সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি করছে ।
৯. অতিরিক্ত পরোক্ষ কর : বাংলাদেশের রাজস্ব বাজেটের শতকরা ৮০ ভাগই আসে পরোক্ষ কর হতে । বাণিজ্য শুল্ক , আবগারি শুল্ক , মূল্য সংযোজন কর প্রভৃতি পরোক্ষ কর ধার্যের ফলে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য যথেষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হচ্ছে ।
১০. বেতন ও মজুরি বৃদ্ধি : স্বাধীনতার পর হতে আজ পর্যন্ত বহুবার কর্মকর্তা , কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে । কিন্তু দেশে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন সে অনুপাতে বাড়ে নি । ফলে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে ।
১১. রপ্তানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশে বর্তমানে লেনদেনের ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দূর করার উদ্দেশ্যে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে । ফলে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যের যোগানের তুলনায় চাহিদা বেশি হচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিচ্ছে ।
১২. টাকার অবমূল্যায়ন : স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বহুবার টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে । এর ফলে আমদানিকৃত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে এবং মূল্যত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ।
১৩. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি : স্বাধীনতার পর থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের জন্য সরকারকে প্রচুর ব্যয় করতে হচ্ছে দেশের জন্য এ কারণে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
১৪. অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি : আমাদের দেশে বিগত বছরগুলোতে অনুৎপাদনশীল খাতে প্রচুর ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এ কারণে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
১৫. সুষ্ঠু পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার অভাব : পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার অভাবে দ্রব্যসামগ্রী দ্রুত একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ করা সম্ভব হয় না ফলে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পেয়ে মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়ে থাকে ।
১৬. দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা , আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরিবেশ বজায় রয়েছে । এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং আমদানি পণ্যেরও মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে । এতে করে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হচ্ছে ।
উপসংহার : সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এ কথা বলা যায় যে , বাংলাদেশে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য দিন দিন বেড়েই চলছে এবং দেশে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে । তাই আমাদেরকে এখনই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
[ad_2]