অথবা, ১৯৭২ সালের গণপরিষদ আদেশ কী?
উত্তরায় ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে পাকবাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণের পর গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণ মুজিবনগরে মিলিত হন এবং একটি গণপরিষদ গঠন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে আইনগত বৈধতা দান এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে গণপরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১১ জানুয়ারি সংবিধান প্রণয়নের জন্য অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন।
১৯৭২ সালের গণপরিষদ আদেশ : ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের ‘গণপরিষদ আদেশ’ জারি করেন। স্থায়ী সংবিধান তৈরির প্রথম পদক্ষেপ ছিল এ গণপরিষদ আদেশ। সরকারি ঘোষণায় বলা হয় যে, এ আদেশ ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে কার্যকরী হবে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত মোট সদস্য ছিলেন ৪৬৯ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেন এবং কয়েকজন অযোগ্য ঘোষিত হয়। ফলে ৪৩০ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য একটি স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব এ গণপরিষদের উপর দেওয়া হয়। গণপরিষদ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ও সফলতার সাথে দ্রুত একটি উত্তম সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন ছিল একটি প্রয়োজনীয় ও জটিল কাজ। বঙ্গবন্ধুর গণপরিষদ আদেশ জারির মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন ছিল প্রথম পদক্ষেপ। গণপরিষদ গঠিত হওয়ার পর দ্রুত সংবিধান কমিটি সংবিধান প্রণয়নে অগ্রসর হয় এবং অল্প সময়ে একটি উত্তম সংবিধান প্রণয়ন করে। সংবিধান প্রণয়নের জন্য বঙ্গবন্ধুর গণপরিষদ আদেশ ছিল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।