অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের কারণ কী ছিল?
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। পাকিস্তান সরকার দীর্ঘদিন ধরে যে অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, নিপীড়ন চালিয়ে আসছিল তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন হলো মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালি ছাত্র, জনতা, সৈনিক, ইপিআর, আনসার, পুলিশ এবং ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমণে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার
বাহিনী পরাজিত হয় এবং বাঙালিরা বিজয় লাভ করে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে বাঙালিদের বিজয় লাভের কারণ : নিচে বাঙালিদের বিজয়ের ৫টি কারণ উল্লেখ করা হলো :
১. প্রবাসী সরকার গঠন ও যুদ্ধ পরিচালনা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং এ সরকারের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা। ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি এবং ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ হয়। শপথ গ্রহণের পর এ সরকার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান, শরণার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক জনমত গঠন করে, যা দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন লাভ করে। ফলে বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত হয়।
২. বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সমর্থন : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সারা বিশ্বকে প্রভাবিত করে। বিভিন্ন দেশের জনগণ, সরকার, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনমত গঠন করেছিল যা বাংলাদেশের বিজয়ের অন্যতম কারণ।
৩. মনস্তাত্ত্বিক কারণ : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করে পরিস্থিতির কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে না পারায় কার্যত তাদের মনোবল ও নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বিশ্রাম না পাওয়া, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় অপারেশনে যাবার ব্যাপারে তাদের অনেকেরই মনের দিক থেকে সায় ছিল না।
৪. গেরিলা যুদ্ধের সফলতা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনী অবিশ্বাস্য সাফল্য লাভ করে। অতর্কিত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা ও জখম করা ছিল তাদের কাজ। গেরিলা বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর নৈতিক মনোবল ভেঙে দেয়।
৫. যৌথবাহিনীর উন্নত রণকৌশল : যৌথবাহিনীর উন্নত রণকৌশল এবং আক্রমণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দিশেহারা হয়ে যায়। শক্তিশালী ভারতীয় বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। মাত্র ১৩ দিনের মধ্যেই পর্যুদস্ত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় ছিল সুনিশ্চিত। পূর্ব বাংলার সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে মুক্তি ও স্বাধীনতার স্পৃহা এতই তীব্র ছিল যে, শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দমন করতে পারেনি। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে যৌথবাহিনীর নিকট পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।