অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অনিয়মিত বাহিনী কারা? বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনিয়মিত বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। অসীম সাহসিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের অনিয়মিত বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে সুশৃঙ্খল দক্ষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধে অনিয়মিত বাহিনী : নিয়মিত বাহিনীর বাইরের সদস্যদের সমন্বয়ে ও অংশগ্রহণে গড়ে উঠে অনিয়মিত বাহিনী । নিচে এ বাহিনী সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
১. মুক্তিযোদ্ধা : যুব, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও সকল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে অনিয়মিত বাহিনী গঠিত হয়। অনিয়মিত বাহনীকে গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করা হয়। অনিয়মিত বাহিনীর সরকারি নামকরণ করা হলো গণবাহিনী। এ বাহিনী ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুদ্ধে অংশ নেয়। এ বাহিনী মুক্তিবাহিনী নামে সমধিক পরিচিত ছিল। গণবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীকে অতর্কিত আক্রমণ করে নাস্তানাবুদ করে দিত।
২. আঞ্চলিক বাহিনী : আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন বাহিনী গড়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। এ সকল বাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাদেরিয়া বাহিনী। কাদেরিয়া বাহিনী জামালপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে। এছাড়া বাতেন বাহিনী, আফসার বাহিনী, হেমায়েত বাহিনী, আকবর বাহিনী, লতিফ মির্জা বাহিনী, হালিম বাহিনী এ সকল আঞ্চলিক বাহিনী নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি দুঃসাহসিকভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে ফেলে।
৩. মুজিব বাহিনী : মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত একটি বাহিনী হলো মুজিব বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের কর্মীদের নিয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়। প্রায় পাঁচ হাজার সদস্যের এ বাহিনীকে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং এর নেতৃত্বে ছিল ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমান্ড। এ বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও শেখ ফজলুল হক মনি। এ বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল উবানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেরাদুন পাহাড়ি এলাকায় এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ বাহিনী দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে দুর্বল করে তোলে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনিয়মিত বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি অনিয়মিত বাহিনী গেরিলা আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ফেলে।