১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের তাৎপর্য মূল্যায়ন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৭০ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিশ্লেষকগণ মনে করেন এ নির্বাচনের ফলাফল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতি নির্ধারণ করেছিল।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব : নিচে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. বাঙালি স্বাতন্ত্র্যবাদের বিজয় : ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে বাঙালি স্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব হয়েছিল তার চূড়ান্ত
বিজয়ের প্লাটফর্ম তৈরি করেছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচন। কেননা এ নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারক বাহক দল আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করেছিল।
২. আঞ্চলিকতা : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল পূর্ব পাকিস্তান ভিত্তিক দল আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে কোন আসন লাভে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পিপিপি পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসন লাভে ব্যর্থ হয়। এ নির্বাচনে আঞ্চলিকতা তথা স্বাতন্ত্র্যবোধের ব্যাপক বিজয় হয়।
৩. স্বায়ত্তশাসনের দাবির বৈধতা প্রমাণ : বাঙালি জাতি দীর্ঘদিন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তকিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের এ দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের মাধ্যমে এ দাবির যথার্থতা প্রমাণিত হয়।
৪. আওয়ামী লীগের গুরুত্ব বৃদ্ধি : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্ব বৃদ্ধি করে এবং পরবর্তীতে যে কোন জাতীয় ইস্যুতে এ দলের নেতৃত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
৫. বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে প্রভাব : পূর্বতন ঘোষণা অনুযায়ী ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে এবং এক পর্যায়ে ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশের পরোক্ষ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছিল।