১৯৬২ সালে সংঘটিত হওয়া সংবিধান বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে যা জান লিখ ।

অথবা, ১৯৬২ সালে সংঘটিত সংবিধান বিরোধী আন্দোলন উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানে জেনারেল আইয়ুব খানের শাসনামল ছিল ঘটনাবহুল। তার এক দশকের শাসনামলে গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ধ্বংসের বুনিয়াদ রচনা করে। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিন

জনগণের উপর সামরিক শাসনের স্টীম রোলার চালান। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য ১
মার্চ নিজের পছন্দমতো একটি সংবিধান জারি করেন। কিন্তু এ সংবিধান ছিল জনবিরোধী। এ সংবিধান পকিস্তানের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন । এ স্বৈরাচারী আইয়ুবী সংবিধানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে আন্দোলন গড়ে উঠে প্রাদেশিক
আইয়ুব খানের সংবিধান বিরোধী আন্দোলনসমূহ : গণতন্ত্রে অবজ্ঞা, গণসমর্থনের অভাব স্বায়ত্তশাসন উপপেক্ষিত, রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাচার, ভোটাধিকার হরণ প্রভৃতি জনবিরোধী বৈশিষ্ট্য বিরাজমান থাকায় জনগণ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। নিচে ইহা বর্ণনা করা হলো :
১. গণবিরোধী সংবিধান : আইয়ুব খান তার অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে ১৯৬২ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন। এ সংবিধানকে বলা হয় আইয়ুবী সংবিধান। পুরাতন সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান চালু করেন। এ
সংবিধান জনগণের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয় আইয়ুব খান। ফলে এ সংবিধানে জনগণের কোন সমর্থন ছিল না।
২. জনগণের দাবির প্রতি অশ্রদ্ধা : ১৯৬২ সালের আইয়ুবী সংবিধানে জনগণের দাবিদাওয়ার প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখানো হয়। জনসাধারণের মৌলিক অধিকার উপেক্ষা করা হয়। আইয়ুব খান নিজের ইচ্ছা ও অভিমতকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
৩. সর্বসাধারণের ভোটাধিকার হরণ : ১৯৬২ সালে প্রবর্তিত সংবিধানে জনগণের ভোটাধিকার সংরক্ষণ করা হয়। তিনি সর্বসাধারণের ভোটাধিকার হরণ করে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। যা গণতন্ত্র বিরোধী ছিল। তার নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তিনি প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার হরণ করেন।
৪. মৌলিক গণতন্ত্র নামে অভিনব ব্যবস্থা : মৌলিক গণতন্ত্র নামে এক অভিনব গণতন্ত্র ব্যবস্থা কায়েম করে সুবিধাবাদী শ্রেণি তৈরি করেন। যারা আইয়ুব খানের স্বার্থ সংরক্ষণ ছাড়া কিছুই বুঝতো না। শাসকগোষ্ঠী তল্পীবাহক হিসেবেই মৌলিক গণতন্ত্রী দলের নেতারা দায়িত্ব পালন করতেন।
৫. ছাত্র বিক্ষোভের শুরু : আইয়ুব খানের সংবিধানের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এ সংবিধানের বিরুদ্ধে সভা, বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। বহু ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে উক্ত সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে।
৬. প্রাদেশিক নির্বাচন বয়কটের চেষ্টা : ১৯৬২ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে এবং ৬ মে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন ধার্য ছিল। ছাত্র সমাজ উক্ত নির্বাচনকে বাতিল করার জন্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আহ্বান জানায়।
৭. গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের মুক্তি লাভ : সংবিধান বিরোধী আন্দোলনে বহু ছাত্র নেতা গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রচেষ্টায় গ্রেপ্তারকৃত ছাত্ররা মুক্তি লাভ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬২ সালের সংবিধান ছিল স্বৈরাচারী সংবিধান। গণবিরোধী এ সংবিধানে পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রথম সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এ আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির দাবি আদায়ের আন্দোলন তাই আন্দোলন জোরদার হয়েছিল। যা পরবর্তী আন্দোলনে সাহস জুগেয়েছিল। সুতরাং বলা যায় ১৯৬২ সালের সংবিধান বিরোধী আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয়।