অথবা, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের বিভিন্ন স্তর আলোচনা কর।
অথবা, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে কি জান।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি ১৯৬১ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে এ আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। ছাত্র লীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ছিল এ আন্দোলনের উদ্যোক্তা সংগঠন।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় : নিচে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায় আলোচনা করা হলো :
১. সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন : ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দী করাচি সফরে গেলে তাকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঞ্জুর কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সফরে এলে ছাত্ররা তাকে নাজেহাল করে। ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
ঘোষণা করে এবং বহু ছাত্র নেতাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় ধর্মঘট ও হরতাল অব্যাহতভাবে চলতে থাকে।
২. শাসনতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন : রাষ্ট্রের ছাত্র আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বের সূচনা ঘটে আইয়ুব খান প্রণীত শাসনতন্ত্রকে কেন্দ্র করে। ১৯৬২ সালে প্রণীত সংবিধানকে কেন্দ্র করে ছাত্ররা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে এবং গভর্নর মোনায়েম খানকে নাজেহাল করে। মোনায়েম খান কৌশলে বহু ছাত্র নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের উপর নির্যাতন চালায়। ২৫ জুন ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় নয় জন রাজনীতিবিদ সংবিধানকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেন যার ফলে আইয়ুব খান পরবর্তীতে ছাত্র নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হন।
৩. শরিফ কমিশন বিরোধী আন্দোলন : ১৯৬২ সালে শরিফ কমিশন প্রণীত শিক্ষানীতি প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায় এ কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ছাত্ররা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ছাত্রদের মধ্যে এ কমিশনের রিপোর্টের ব্যাপারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং তারা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন কয়েকটি পর্যায়ে সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৬৩ সালে যেসব ছাত্র স্নাতক পরিক্ষার্থী ছিল তাদের পরীক্ষা ব্যতীত ডিগ্রি প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। ফলে ছাত্র আন্দোলন ক্রমে স্তিমিত হয়ে পড়ে।