অথবা, ১৯৫২-১৯৫৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির কিছুদিন পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করে। আর পূর্ব বাংলার বিভিন্ন আন্দোলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এ অঞ্চলের ছাত্রসমাজ।
১৯৫২-১৯৫৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দিক : নিচে ১৯৫২ – ১৯৫৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. ভাষা আন্দোলন : ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে সেখানে উপস্থিত ছাত্ররা এর প্রতিবাদ জানায়। ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করলে ছাত্ররা পুনরায় না না বলে এর প্রতিবাদ জানায় । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহূত সমাবেশে পুলিশের গুলিতে রফিক, শফিক, সালাম শহিদ হন।
২. পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন : ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সুফল পাওয়ার পর পূর্ব বাংলার ছাত্র নেতৃবৃন্দ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তবে এ আন্দোলন ফলপ্রসূ হয় দীর্ঘদিন পর। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মাধ্যমে এ আন্দোলন সাফল্য লাভ করে।
৩. সুষ্ঠু সংবিধান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য একটি সুষ্ঠু সংবিধান প্রণয়নের জন্য পূর্ব বাংলার ছাত্র নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। মূলত এ আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। দীর্ঘ নয় বছর পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ছাত্রদের এ
আন্দোলন সফল হয়।
৪. সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম : ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। এর মাত্র ২০ দিন পর আইয়ুব খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন এবং সামরিক শাসন অব্যাহত রাখেন। আইয়ুব খানের এ বেআইনি শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ছিল মূলত ভাষা আন্দোলন ও পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনকে কেন্দ্র করে। পূর্ব বাংলার ছাত্ররা তাদের অধিকাংশ ইস্যুতে আন্দোলন করে সাফল্য লাভ করেছিল।