১৫ আগস্টের পর ঘটে যাওয়া ৪টি আদর্শিক পটপরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অথবা, ১৫ আগস্টের পর ঘটে যাওয়া আদর্শিক পটপরিবর্তন সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর ভূমিকা :
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডটি একজন বা কিছু ব্যক্তিকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল না, সে হত্যাকাণ্ডটির উদ্দেশ্য ছিল একটি আদর্শকে হত্যা করা। বঙ্গবন্ধু হত্যার উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঙালির মন থেকে মুছে ফেলা। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল বাংলােেদশর রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন।
৪টি আদর্শিক পটপরিবর্তনের বর্ণনা : নিচে ১৫ আগস্টের পর ঘটে যাওয়া ৪টি আদর্শিক পটপরিবর্তনের বর্ণনা করা হলো :
১. গণতান্ত্রিক চেতনা ধ্বংস : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে। সামরিক বাহিনী দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র নস্যাৎ করে। মানুষের ভোটদানের অধিকার, নির্বাচনের অধিকার লুণ্ঠন করে সেনাবাহিনী। বার বার সামরিক শক্তি দ্বারা এ দেশের গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হয়। সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করে।
২. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত : যে আদর্শ মূল্যবোধ ও চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পূর্ব বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে। ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, শ্রমিকদের আত্মত্যাগ, বঙ্গবন্ধুর অবদান, শহিদদের জীবন দান প্রভৃতি সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়।
৩. সংবিধানের পরিবর্তন : বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর সংবিধানের পরিবর্তন সাধন করে সামরিক সরকার। ১৯৭২ সালের সংবিধানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে “জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম” এ অভিধায় অভিহিত হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে অভিধাকে পরিবর্তন করে “জাতীয় স্বাধীনতার ঐতিহাসিক যুদ্ধ” এ অভিধায় পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার প্রতীক সংবিধানের চার মূলনীতি যথা : জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এর আমূল পরিবর্তন
সাধন করে।
৪. ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান : বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ঘটে। সামরিক সরকার ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটায়। জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব প্রদানের ফলে একাত্তরের ঘাতক দালাল বাহিনী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মূল্যবোধ ও চেতনাকে ধ্বংস করে। ফলে দীর্ঘকাল দেশে সামরিক শাসন বজায় থাকে। সামরিক বাহিনী দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছিল।