অথবা, সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, সংবিধানের উপকারিতা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : “Constitution is that body of rules which regulates the ends for which the powers of the government is exercised.”
সংবিধান হল যেকোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, যা অন্যান্য আইন ও সরকারকে পরিচালনা করে এবং পরিচালনা করে। প্রতিটি স্বাধীন দেশের জন্য সংবিধান অপরিহার্য। আর একটি ভালো সংবিধানের মাধ্যমেই জনগণের ইচ্ছা প্রকাশ করা হয় এবং শাসক ও শাসিতদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারিত হয়। সংবিধানের সুবিধা: একটি ভালো এবং কার্যকর সংবিধান যেকোনো রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সংবিধানের
শাসনে সংবিধানের সুবিধার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় নিচে আলোচনা করা হলো:
১. দেশের মৌলিক পরিচয়ঃ নিজ দেশের পরিচয় জানা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।সেক্ষেত্রে সংবিধান এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।
২. জাতীয় চেতনা অর্জন: সংবিধানে একটি জাতির মৌলিক আদর্শ, লক্ষ্য এবং আদর্শ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।এই মূল্যবোধগুলি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে একটি জাতি হিসাবে নিজেকে অন্য জাতির থেকে চিহ্নিত করার জন্য। চিনতে পারে, যা তাকে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। ফলে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ: দেশের জনগণের মৌলিক অধিকারগুলি বিশেষভাবে সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। এমনকি কীভাবে অধিকার সংরক্ষণ করা যায় তার নির্দেশিকাও রয়েছে।
৪. জরুরী বিধান: রাষ্ট্র যখন সঙ্কটে, যুদ্ধকালীন সময়ে রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে সংবিধানে রাষ্ট্রের কর্তব্য কী, কী কী আইন বলবৎ হবে, নাগরিকদের কী অধিকার খর্ব করা হবে বা বাতিল করা হবে সে সম্পর্কে একটি নির্দেশিকা প্রদান করে।
৫. বৈদেশিক নীতির নির্দেশিকা: সংবিধানে অন্যান্য দেশের সাথে দেশের সম্পর্ক কেমন হবে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শাস্তি, নিরাপত্তা, সংহতি এবং চুক্তির নীতিগুলি সম্পর্কে একটি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি দেশকে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ বা আক্রমণ থেকে বিরত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সংবিধান বিদ্যমান।
৬.আইন শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কি কি বাহিনী গঠিত হবে, এদের ভূমিকা ও এখতিয়ার কি রকম হবে এবং নাগরিকগণ এক্ষেত্রে কি আচরণ করবে তার একটি দিকনির্দেশনা সংবিধানে উল্লেখ থাকে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোন কোন বাহিনী নিয়ে গঠিত হবে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ কিভাবে নির্ধারিত হবে, যুদ্ধকালীন সময়ে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হবে, সর্বাধিনায়ক কে হবেন ইত্যাদি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশনা সংবিধানে দেয়া থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকা শক্তি। সংবিধানের মাধ্যমেই কোন দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষিত হয় এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হয়। অতএব একটি সর্বসম্মত মৌলিক নীতিমালা তথা সংবিধান প্রণয়নের বিকল্প নেই।