উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু ব্যঙ্গসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ শিল্পী আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘আয়না’ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত ‘হুযুর কেবলা শীর্ষক গল্প হতে সংগৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ধর্মের পথে ফিরে আসার পর এমদাদের মনে যে নতুন ভাবের জন্ম হয়েছে তার তীব্রতা প্রকাশ পেয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।
বিশ্লেষণ : অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করে নাস্তিক এমদাদ ঘোর আস্তিক হয়ে পড়ল। যে এমদাদ কোলকাতায় দর্শনশাস্ত্রে অনার্স পড়ার সময় মিল, হিউম, স্পেনসার প্রমুখ দার্শনিকের ভাব চুরি করে খোদার অসরতা প্রমাণ করেছিল, সে আজ ভয়ানক নামজ পড়তে লাগল। বিশেষ করে নফল নামাযে সে একেবারে তন্ময় হয়ে পড়ল। আধুনিক জীবন যাপনের সমস্ত উপকরণ সে একে একে নষ্ট করে ফেলল। তারপর সে কোরা খদ্দরের কল্লিদার কোর্তা ও সাদা লুঙ্গি পরে মুখে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ দাড়ি নিয়ে সামনে পিছনে সমান করে চুলকাটা মাথায় গোল নেকড়ার মতো টুপি ও পায়ে চটিজুতা পরে সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করতে
লাগল । ধর্মকর্মে সে এতটাই মনোযোগী হলো যে, গোল গোল করে বাঁশের কঞ্চি কেটে সে নিজ হাতে একছড়া তসবিহ তৈরি করল। সেই তসবির উপর দিয়ে অষ্টপ্রহর আঙুল চালিয়ে সে দুটি আঙুলের মাথা ছিঁড়ে ফেলল। তাতে তার বিন্দু মাত্র আফসোস হলো না। বরং সে দ্বিগুণ উৎসাহে তসবি গণনার কাজ চালিয়ে যেতে লাগল। এতে সে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করল। কেননা তার এত দিনের সুখের দেহ কিছুটা হলেও কষ্ট পেয়েছে। ভোগবাদী জীবনে আত্মার বিকাশ সম্ভব নয়। সে তার দেহকে কষ্ট দিয়ে আত্মার বিকাশ ঘটাতে চায়। তাই সে নিজের প্রতি এমন কটাক্ষ করেছে।
মন্তব্য: ধর্মের প্রতি গভীর আবেগ এমদাদকে মনে করিয়ে দেয় ভোগবাদী জীবনে আত্মার বিকাশ ঘটে না।