উত্তর : ভূমিকা : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তার শাসনামলে স্থাপত্য শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন। ইলিয়াস শাহী যুগে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশিল্প ক্ষেত্রে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল হুসেন শাহের সময়ে সেই ধারার প্রচলন ছিল। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সময়ে নির্মিত অনেক স্থাপত্য কর্ম এখনও তার মাহাত্মকে প্রকাশ করছে। হুসেন শাহের স্থাপত্য নির্মাণশৈলী মিশ্র ধরনের ছিল।
→ হুসেন শাহের স্থাপত্য কর্ম : হুসেন শাহের স্থাপত্য কর্মের বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো-
১. ছোট সোনা মসজিদ : বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ হলো ছোট সোনা মসজিদ। প্রাচীন বাংলার রাজধানী
গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে এ মসজিদটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। হুসেন শাহের শাসনামলে ওয়ালী মোহাম্মদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মসজিদটিকে বলা হতো ‘গৌড়ের রত্ন’। পুরো মসজিদের অলংকরণে মূলত পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইস ব্যবহার করা হয়েছে।
২. বড় সোনা মসজিদ : বড় সোনা মসজিদ নুসরাত শাহ তৈরি করেন। তবে বড় সোনা মসজিদের নির্মাণ কাজ হুসেন শাহ শুরু
করেছিলেন। বড় সোনা মসজিদ সাদা-মাটা ও প্রায় অলংকরণবর্জিত। তবে মসজিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত মিহরাব অন্যসব মসজিদের মতোই ব্যাপকভাবে অলংকৃত ।
৩. গুমতিদ্বার : হুসেন শাহের স্থাপত্য কীর্তির মধ্যে গুমতিদ্বার অন্যতম। নকশা ও গঠন কৌশলে ইমারতটি কিছুটা উত্তর দিকে
নির্মিত মুঘল লুকোচুরি দরওয়াজার সাথে তুলনামূলকভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। এর কার্নিশগুলোতে টেরাকোটা অলংকরণ অপেক্ষা টাইলসের অলংকরণ প্রাধান্য দেখা যায় ।
৪. মাদ্রাসা নির্মাণ : হুসেন শাহ মালদহে একটি বিরাট মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। মাদ্রাসটিতে স্থাপত্য শিল্পের দিক দিয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ। বিরাট এই মাদ্রাসাটির শৈল্পিক কর্ম মানুষকে আকৃষ্ট
করার মত। মাদ্রাসাটিতে আধুনিক বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল ।
৫. রাজধানী : সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তার রাজধানী গৌড় নগরীর সংলগ্ন একডালায় স্থানান্তরিত করেন। এটি একটি দুর্ভেদ্য নগরী ছিল। আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজধানীর বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু তার রাজধানী সম্পর্কে তেমন কোনো বর্ণনা
পাওয়া যায় না। তবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তার রাজধানীকে সুন্দরভাবে সাজিয়েছিলেন এরকম ধারণা পাওয়া যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, যে, আলাউদ্দিন হুসেন শাহের স্থাপত্য শিল্পে অবদান তার স্থাপত্য শিল্পের শৈলী
মনোভাবের স্বাক্ষর বহন করে। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ তার শাসনামলে অনেক স্থাপত্যকর্ম করেছিলেন। কিন্তু তার সম্পর্কে বিস্তারিত ঐতিহাসিক উপাদান না পাওয়ায় তার সকল স্থাপত্য কর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না।