উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগীয় বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাসে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা
প্রবর্তন করে এবং দেশের জনগণের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল চিন্তাই তাকে শ্রেষ্ঠ শাসকদের কাতারে প্রথম দিকে স্থান করে দিয়েছে। তিনি শাসক
হিসেবে উদারনীতি গ্রহণের মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষের আস্থা লাভ করতে সক্ষম হন। তার শাসন ব্যবস্থা ছিল প্ৰজা কল্যাণকামী ।
বাংলায় পর্তুগিজদের আগমন : আলাউদ্দিন হুসেন শাহ যখন বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন তখন পর্তুগিজরা এ উপমহাদেশে আগমন করেছিল। নিম্নে বাংলায় পর্তুগিজদের আগমন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. ভাস্কো-দা-গামার আগমন : দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারত উপমহাদেশে ইউরোপীয় ও আমেরিকান
দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম পর্তুগিজরা আগমন করে। ১৪৯৮ সালে ভাস্কো-দা-গামা ভারতের কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন। এ সময়ে বাংলার শাসক ছিলেন হুসেন শাহ ।
২. বাংলায় আসতে বাধা : দীর্ঘকাল ধরে পর্তুগিজরা বাংলাতে তাদের বাণিজ্য শুরু করতে পারেনি। মাঝে মাঝে দু’একজন বণিক
বাংলার সমুদ্রোপকূলে এসে অল্পস্বল্প জিনিস কেনাবেচা করত। তারা এদেশের কুটির শিল্পীদের সঙ্গে পণ্যদ্রব্য বিনিময় করে চলে যেত।
৩. আল-বুকার্কের উদ্যোগ : আল-বুকার্ক বাংলায় পর্তুগিজদের বাণিজ্য বিস্তার করতে চান। তিনি এদেশে তাদের পণ্যের চাহিদা বুঝতে পারেন। ১৫১৩ সালে তিনি পর্তুগালের
রাজাকে চিঠি লিখে জানান যে বাংলার লোকেরা পর্তুগিজদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে চায় ।
৪. ফার্না-পেরেসের ব্যর্থতা : আল-বুকার্ক ১৫১৭ সালে ফার্না পেরেসকে চারটি জাহাজ দিয়ে বাংলায় বাণিজ্য শুরু করতে এবং তার বণিকদের একচেটিয়া ব্যবসায়ের মূলোৎপাটন করতে বলেন। কিন্তু মাঝ সমুদ্রে অগ্নিকাণ্ডে প্রধান জাহাজটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফার্না পেরেস বাংলায় এসে পৌঁছাতে পারেননি। তবে
তার বার্তাবাহক বাংলায় এসেছিলেন ।
৫. সিলভেরার আবেদন : আনবুকার্কের পর সিলভেরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। সিলভেরা পর্তুগালের রাজার পক্ষ থেকে বাংলার
রাজাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান এবং বাণিজ্য করার অনুমতি চান। সেই সঙ্গে তিনি একটি কুঠি নির্মাণেরও অনুমতি প্রার্থনা করেন।
৬. চট্টগ্রামের শাসনকর্তার সাথে সংঘর্ষ : চট্টগ্রামের শাসনকর্তার এক আত্মীয়ের দুটি জাহাজ সিলভেরা দখল করেছিলেন। সিলভেরাকে জলদস্যু মনে করে চট্টগ্রামের শাসক এসময়ে যুদ্ধের আয়োজন করেন।
চট্টগ্রামের শাসক সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সন্ধি করেন। তবে পরে আবার তিনি আক্রমণ করে সিলভেরাকে তাড়িয়ে দেন।
৭. আরাকানের ষড়যন্ত্র : বাংলার মাটিতে নামতে না পেরে সিলভেরা শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে আরাকানের দিকে গেলেন। আরাকানের রাজা এই সময় বাংলার সুলতানের প্রজা ছিলেন। আরাকান রাজা জানালেন তিনি পর্তুগিজদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছুক। কিন্তু সিলভেরা জানতে পারলেন যে তিনি আরাকানে অবতরণ করলেই তাকে বিশ্বাসঘাতকতা করে বন্দি করা হবে। ফলে নিরাশ হয়ে তিনি সিংহলে চলে গেলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পর্তুগিজরা বাংলায় বাণিজ্য করতে অনেক চেষ্টা করে। তবে তারা কার্যত ব্যর্থ হয়। ব্যবসা করতে না পারলেও এসময়ে অনেক পর্যটক বাংলাতে আসে। দুয়ার্তে-বারবোসা নামে একজন পর্তুগিজ বাংলাতে ভ্রমণ করেন। তিনি এদেশ সম্পর্কে নানা বিবরণ লিখে গেছেন। এ বিবরণ
বাংলার ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।