উত্তর : ভূমিকা : “He (Husain Shah) is Said to hause conquered Kamrup….. অর্থাৎ বুকানন বলেছেন যে তিনি হুসেন
শাহের কামরূপ জয়ের কথা শুনেছেন। হুসেন শাহ সিংহাসনে আরোহণের অব্যবহিত পরেই রাজ্যবিস্তারে মন দেন এবং এজন্য তাকে বহু যুদ্ধ করতে হয়। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হন।
→ কামতাপুর ও কামরূপ জয় : হুসেন শাহ তার শাসনকালে রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মনোযোগী ছিলেন। তার সুদীর্ঘ রাজত্বকালে
সামরিক ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেন। নিম্নে তার কামতাপুর ও কামরূপ জয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. সময়কাল : সিংহাসনে আরোহণের এক বছরের মধ্যেই হুসেন শাহ উত্তরবঙ্গের কামতাপুর রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান করেন বলে জানা যায়। তবে আবদুল করিম এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছেন। তবে মুদ্রা অনুযায়ী ১৪৯৩-৯৪ সালেই কামতাপুর-কামরূপ রাজ্য বিজয় করেছিলেন বলে জানা যায় ।
২. অবস্থান : কামতাপুর রাজ্য আধুনিক কুচবিহার অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। বাহারস্থানী গায়বীতে লেখা আছে যে এই রাজ্যের
পূর্ব-সীমায় ছিল বনস (মনসা) নদী এবং অপরসীমায় করতোয়া নদী। কামরূপ অঞ্চল অবস্থিত ছিল আসামে। এ অঞ্চল দু’টির
অবস্থান বাংলার সীমানা বরাবর ছিল।
৩. কারণ : হুসেন শাহের সময়ে এই রাজ্যের রাজারা খুব প্রতিপত্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন। উত্তরবঙ্গের এক বিরাট অঞ্চল এবং
আসামের কামরূপ অঞ্চল দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছিল । ফলে এসকল রাজ্য বাংলার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছিল। এ কারণেই হুসেন শাহ এসকল রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন।
৪. যুদ্ধ ও ফলাফল : কামরূপ ও কামতাপুরের সাথে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সংঘর্ষের বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে সংঘর্ষে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সফলতার কথা জানা যায়। তার মুদ্রায় তাকে কামরু-কামতা বিজয়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫. কামরূপ-কামতার প্রতিরোধ : কামরূপ-কামতা রাজ্য প্রতাপরূদ্র অনেকদিন যাবত যুদ্ধ করেছিলেন। কামতাপুর রাজ্য
১২ বছর ধরে অবরোধ করে রাখার কথাও জানা যায়। পরবর্তীতে প্রতাপরূদ্রের সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। যুদ্ধের পরবর্তী প্রতাপরুদ্র নিহত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে প্রতাপরুদ্রের পালিয়ে যাবার কথাও অনেকে বলে থাকেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, হুসেন শাহ তার রাজত্বের প্রথম বছরেই কামরূপ-কামতা অভিযান করে সফলতা লাভ করেন। তার সুদীর্ঘ ২৬ বছরের রাজত্বকালে তিনি আরো অনেক সামরিক অভিযানে সফলতা লাভ করেছিলেন। দীর্ঘকাল সফলতার সাথে রাজত্ব করার পর তিনি ১৫২৯ সালে স্বাভাবিক
মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে জানা যায় ।