উত্তর : ভূমিকা : “The reign of Nusrat Shah marked the beginning of the process of disintegration of the Husain
Shahi regime. অর্থাৎ- নসরত শাহের শাসনমালকে হুসেন শাহী শাসনের ভাঙনের শুরু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। নসরত শাহ তার
রাজ্যকে পিতার ন্যায় রক্ষা করতে পেরেছিলেন। তার রাজত্বের শেষ দিকে এসে মুঘল শাসনের সূত্রপাত হলে বাবরের নতুন যুদ্ধ কৌশল তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তবে ১৯৩০ সালে বাবরের মৃত্যু হলে তিনি কিছুটা স্বস্তি লাভ করেন।
→ হুসেন শাহী শাসনের অবসান : হুসেন শাহী শাসনের অবসানে অনেকগুলো কারণ ও প্রেক্ষাপট দায়ী ছিল। নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা হলো।
১. নসরত শাহের নীতি : নসরত শাহ তার রাজ্যে পরাজিত আফগানদের স্থান দিয়েছিলেন। পরাজিত আফগানরা বিভিন্ন উচ্চ পদেও নিয়োগ লাভ করেন। ফলে মুঘল শাসনের দৃষ্টি বাংলার হুসেন শাহী শাসনের উপর নিক্ষিপ্ত হয়।
২. উত্তরাধিকারী নিয়োগ : মুদ্রা প্রমাণে দেখা যায়, নসরত শাহ তার ভ্রাতা মাহমুদ শাহকে উত্তরাধিকারী নিয়োগ করেছিলেন । রাজবংশের নিয়ম অনুযায়ী তার জ্যেষ্ঠপুত্র এর দাবিদার। তবে তার মৃত্যুর পর তার পুত্র ফিরোজ শাহই ক্ষমতা দখল করে। এর
ফলে সিংহাসনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত ঘটে।
৩. ফিরোজ শাহের ব্যর্থতা: ফিরোজ শাহ ক্ষমতা দখল করলেও তিনি শাসনকালে তেমন কোন পরিবর্তন করেছিলেন বলে জানা যায় না। ফলে তিনি অচিরেই নিহত হন মাহমুদ শাহ
কর্তৃক। এ ঘটনার ফলে হুসেন শাহী বংশে রাজহত্যা শুরু হয় ক্ষমতা লাভের জন্য।
৪. গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহের অপরিণামদর্শিতা ভ্রাতুষ্পুত্রকে হত্যা করে গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর ৫ বছরব্যাপী শাসনকালেই হুসেন শাহী বংশের অবসান ঘটে। শের খান শুরের নেতৃত্বে আফগান শক্তির পুনরুত্থানের চাপে বাংলার হুসেন শাহী
বংশের অবসান ঘটে।
৫. অহম রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ : নসরত শাহের সময়ে অহম রাজ্যের সাথে সংঘর্ষের সূচনা হয়েছিল। এ সংঘর্ষ অনেকদিন যাবত চলেছিল। ফিরোজ শাহের সময়েও এ সংঘর্ষের কথা জানা যায়। ফলে অহম রাজ্যের সাথে দীর্ঘদিন যাবত যুদ্ধ রাজ্যের
সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে তোলে।
৬. মুঘলদের সাথে দ্বন্দ্ব : নসরত শাহ শেষ পর্যন্ত মুঘলদের সাথে যুদ্ধ এড়াতে পারেননি। মুঘলদের তুলঘুমা’ পদ্ধতিতে যুদ্ধ
করার নীতি আফগানদেরও পরাজিত করেছিল। গোগরা নদীর পূর্বতীর নসরত শাহকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
৭. শেরশাহ স্তরের বিক্রম : শেরশাহ স্তরের নেতৃত্বে আফগানরা ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মুঘল সম্রাট হুমায়ূনও তার কাছে
পরাজিত হয়। বিজয়ের ধারা অনুসরণ করে তিনি ১৫৩৮ সালে দ্বিতীয়বার গৌড় আক্রমণ করে সফলতা লাভ করেন। ফলে বাংলার
২০০ বছরের স্বাধীন সুলতানি যুগের অবসান ঘটে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, হুসেন শাহী বংশের পতনের মূল কারণ ছিল পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন শক্তির উত্থান। এ শক্তিকে মোকাবিলার জন্য মাহমুদ শাহ পর্তুগিজদের বাণিজ্যিক
ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ প্রদান করেন। তবে পর্তুগিজরা তাকে কোনো প্রকার সাহায্য করতে পারেনি।