উত্তর : এমদাদ নামক এক আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক থাকাকালীন বিলেতি দ্রব্য বর্জন করে দেশি পণ্যের ভক্ত হয়ে পড়ে। এ আন্দোলনে শরিক হতে গিয়ে সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে এক সুফি সাহেবের সান্নিধ্যে আসে। সুফি সাহেব এমদাদের আত্মার শান্তি নিশ্চিত করার লোভ দেখিয়ে তার পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যায়। এ পীর সাহেব ছিলেন বয়সে প্রবীণ। তাঁর মুখ মেহেদি রঞ্জিত দাড়িতে ঢাকা, কথায় কথায় তিনি কুরআন হাদিসের সূরা-আয়াত আওড়ান। পীর সাহেবের চেহারা ও কথার জৌলুসে মুগ্ধ হয়ে এমদাদ তাঁর মুরিদ হয়ে গেল। প্রথম প্রথম এমদাদ পীর সাহেবের বুজরুকি ধরতে না পেরে অন্ধের মতো তাঁকে শ্রদ্ধা ভক্তি করতে লাগল। সে প্রথম লতীফা যিকরে জলী শুরু করল। দিনরাত পীর সাহেবের নির্দেশ মোতাবেক অন্ধের মতো এলহু’ ‘এলহু’ করতে লাগল। অনাহার আর অনিদ্রার কারণে তার শরীর ভেঙে পড়ল এবং চোখ মাথার মধ্যে ডুকে গেল। তার শরীর দুর্বল ও মন অস্থির হয়ে উঠল। একসময় সে মুরিদগিরিতে ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। এমন সময় দূরবর্তী গ্রামের মুরিদদের কাছ থেকে দাওয়াত এল। হুযুর কেবলা প্রচুর খাদ্যসামগ্রী সহকারে বিশাল বজরায় চড়ে মুরিদানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। এমদাদ সাগ্রহে হুযুরের কাফেলার শরিক হিসেবে সহগামী হলো। মুরিদানে পৌছানোর পর হুযুরকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হলো। ভিন্ন ভিন্ন বাড়িতে বিশাল বিশাল ভোেজ চলতে লাগল। ভালো ভালো খেয়ে এমদাদের চেহারায় পূর্বের চেকনাই ফিরে এল। হুযুরের খাওয়ার বাহার দেখে এমদাদ বুঝতে পারল যে, পীর সাহেবের রুহানি শক্তি যত বেশিই থাকুক না কেন তাঁর হজমশক্তি তার চেয়ে অনেক বেশি। মুরিদানে সন্ধ্যাবেলায় পুরুষদের মজলিস বসত। আর এশার নামাজের পর অন্দরমহলে মেয়েদের জন্য ওয়াজ হতো। হুযুর পুরুষদের মজলিসের চেয়ে মেয়েদের ওয়াজের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন। বাড়িওয়ালার ছেলে রজবের স্ত্রী কলিমনের প্রতি পীর সাহেবের আলাদা নজর লক্ষ করা গেল। একদিন হুযুর তাঁর সাগরেদ সুফি বদরুজ্জামানের সাথে গোপন পরামর্শ করে এক মোরাকেবা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। সুফি সাহেব মোরাকেবায় বসলে হুযুর তাঁর দেহে রসুলুল্লাহর আত্মাকে প্রবেশ করালেন। এমদাদের মনে ভয়ঙ্কর সন্দেহ দানা বাঁধল। হুযুর কৌশলে রসুলুল্লাহর নাম ভাঙিয়ে তার সাথে রজবের স্ত্রী কলিমনের বিবাহের আদেশ জারি করলেন। এমদাদ বাদে সকল মুরিদই সরল বিশ্বাসে এ আদেশ মেনে নিল। জোরপূর্বক রজবকে দিয়ে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কলিমনকে তালাক দেয়ানো হলো। এরপর হুযুর পরম আগ্রহে বর সেজে কলিমনকে বিবাহ করলেন। অসীম ধৈর্য্য নিয়ে এমদাদ এ প্রহসন প্রত্যক্ষ করছিল। এক সময় তার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সে বরবেশি হুযুরের উপর পরম আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সকলে তাকে পাগল আখ্যায়িত করে মারতে মারতে গ্রাম থেকে বের করে দিল। এভাবে হুযুর কেবলা লোক ঠকিয়ে নিজের কাম-লালসা চরিতার্থ করলেন। আমাদের দেশে এভাবেই ধর্মের নামে ভণ্ড পীরেরা নিজেদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করে থাকে।