উত্তর : ভূমিকা ঃ সমাজসেবা অধিদপ্তরের অন্যতম একটি কর্মসূচি হলো হাসপাতাল সমাজসেবা। প্রতিটি রোগীর দৈহিক আর্থিক সামাজিক সমস্যার ভিত্তিতে রোগ নির্ণয় ও তা নিরাময়ের যথাযথ ব্যবস্থা থাকে হাসপাতাল
সমাজসেবাতে। অগণিত দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্য ওষুধ, পথ্য ও ইনজেকশন সরবরাহ করা হয় হাসপাতাল সমাজসেবার মাধ্যমে। আমেরিকাতে এর সূত্রপাত ঘটলেও সমগ্র বিশ্বে হাসপাতাল সমাজসেবা সমাদৃত হয়েছে। রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়াই হাসপাতাল সমাজসেবার মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি।
হাসপাতাল সমাজসেবা ঃ হাসপাতাল সমাজসেবা সমাজের নিম্নশ্রেণির রোগব্যাধি দমনে পরিচালিত এক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। যে কর্মসূচির মাধ্যমে রোগীদের রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে সমাজে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা পর্যন্ত যাবতীয় ব্যবস্থাদি গৃহীত হয় তাকে হাসপাতাল সমাজসেবা বলে।
সাধারণ অর্থে ঃ যে পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর মনোদৈহিক আর্থ-সামাজিক বিষয়াদি সম্পর্কে জানা যায় ও রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে নিরাময়ের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয় তাকেই মূলত হাসপাতাল সমাজসেবা বলে। এটি আধুনিক
সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
শাব্দিক অর্থে ঃ Social case work method অনুযায়ী হাসপাতাল সমাজসেবা প্রত্যয়টি মূলত হাসপাতাল, চিকিৎসা ও অসুস্থতার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত বিষয়। আর Hospital Social science-এর বাংলা অর্থ হিসেবে হাসপাতাল সমাজসেবা কথাটির উদ্ভব হয়েছে।
→ প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
Skidmore এবং Thackery বলেন যে, “হাসপাতালে সমাজসেবা সমাজকর্মের মূল্যবিধি, জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির
প্রতিফলিত এক প্রচেষ্টা।” অন্যদিকে সমাজকর্ম অভিধান অনুযায়ী, “হাসপাতাল সমাজসেবা পরিচালিত হয় যেকোনো মানুষের স্বাস্থ্যগত ব্যাধি নির্ণয়ে বিভিন্ন বিষয়াদি গভীরভাবে পর্যালোচনা ও প্রয়োগ প্রচেষ্টার মাধ্যমে যা সাধারণত গরিব-দুঃখী, মানুষের স্বার্থের সাথে সম্পর্কযুক্ত।”
Richard c. cobut এর ভাষায়, “সমাজকর্মীর প্রচেষ্টায় দুঃস্থ-দুঃখী রোগীদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সংগঠিত কর্মসূচির নাম হাসপাতাল সমাজসেবা।”
→ হাসপাতাল সমাজসেবার মূল বক্তব্য ঃ ১৯১৮ সালে হাসপাতাল সমাজকর্মীদের দ্বারা নির্মিত সমিতির মাধ্যমে হাসাপাতাল সমাজসেবা পুর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে থাকে। গরিব অসহায় রোগীদের দৈহিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাদি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সার্বিকভাবে সুস্থ জীবনযাপনে আর্থিকভাবেও কিছুটা সহায়তা প্রদানের কর্মসূচিকেই মূলত
হাসপাতাল সমাজসেবা বলে। সুতরাং বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের হাসপাতালগুলোতে অসহায়-দুঃখী রোগীদের সার্বিক সুচিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী ও সমাজকর্মীর যৌথ প্রচেষ্টায় পরিচালিত সেবামূলক কর্মসূচিকে মূলত হাসপাতাল সমাজসেবা বলে গণ্য করা যায়।। যার গুরুত্ব বাংলাদেশে দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। গরিব দুঃখীদের জন্য হাসপাতাল সমাজসেবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অশেষ আশীর্বাদস্বরূপ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, অসহায়, এতিম দুঃখী মানুষের রোগ নির্ণয়, নিরাময় ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে পরিচালিত আধুনিক হাসপাতালে সমাজসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সমাজের সর্বস্তরের সার্বিক কল্যাণ আনয়নের উদ্দেশ্যে এর সেবা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে চলেছে।