অথবা, হকিকত কী?
অথবা, হকিকত কাকে বলে?
অথবা, হকিকত বলতে কী বোঝায়?
অথবা, হকিকত সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, “হকিকত” ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : সুফিবাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খোদার সান্নিধ্য লাভ করা। পরমসত্তার সাথে মিলনে পরম পাওয়ার যে চরম পরিতৃপ্তি তাই সুফি সাধককে ক্ষণস্থায়ী পার্থিব প্রলোভন হতে মুক্ত করে তাকে পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বের সাধনায় সার্থক করে তোলে। একজন সুফি সাধকের শিক্ষার জন্য কিছু পথ অতিক্রম করতে হয়। এই পথগুলোর মধ্যে হকিকত অন্যতম।
হকিকত : মারেফতের পরবর্তী স্তর হলো হকিকত। হকিকত হলো এমন একটি বিষয় যেটির মাধ্যমে সুফি প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। হকিকতের স্তরে সুফি সত্য উপলব্ধি করেন। আল্লাহর অপার করুণার উপরই এ উপলব্ধি নির্ভর করে। এ কথা অবশ্যই সত্য যে, আল্লাহর অসীম রহমত ছাড়া কেউ তার জ্ঞানের বিন্দুমাত্রও অবহিত হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, বাহ্যিকভাবে ধর্মীয় আচার আচরণ পালনের মাধ্যমে হকিকতের জ্ঞান উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। হৃদয় বা অন্তকরণ পরিশুদ্ধতার মাধ্যমে হকিকতের জ্ঞান পাওয়া সম্ভব। পরম করুণাময় আল্লাহর পরশ ব্যতীত কেউ জ্ঞান লাভ
করতে পারে না। এ স্তরে সুফিরা খোদার ধ্যানে ও প্রেমের মাধ্যমে নিজেকে এমন সুউচ্চ স্তরে প্রতিষ্ঠিত করেন যেখানে নিজেদের অস্তিত্ব বিস্মৃত হয়ে থাকে। এ স্তরে সুফিদের নিজেদের কোন আকাঙ্ক্ষা থাকে না। আল্লাহর ইচ্ছাই তাদের ইচ্ছা সম্পর্কিত হয় । এ স্তরে সাধকের হৃদয়ে কোন রূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হৃদয় শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে হকিকতের জ্ঞান লাভ করা যায়। সুফিদের মতে, প্রবৃত্তির প্রভাব হতে হৃদয়কে মুক্ত করতে পারলেই আধ্যাত্মিক পথ পরিক্রমা সম্ভব হয়ে থাকে। প্রেম, ভক্তি, সংযম ও সততার মাধ্যমে হৃদয়কে শুদ্ধ করা যায়। সুতরাং একজন সুফি সাধক ফানা ও বাকার স্তর অতিক্রম করে হকিকতের জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়।