অথবা, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের উৎসাহিত ও উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশাত্মবোধক গান, নাটক, গণসংগীত, মুক্তিযুদ্ধের খবর প্রভৃতি প্রতিনিয়ত প্রচার করে মুক্তিবাহিনীর মনোবল সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছিল।
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের বিভিন্ন পর্ব : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রকে চার পর্বে ভাগ করা যায় :
১. চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র, কালুরঘাট : ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ঘোষণা করেন।
২. স্বাধীন বাংলা বেতার বিপ্লবী বেতারকেন্দ্র : ২৬ মার্চ কয়েকজন উদ্যোগী বেতার কর্মীর প্রচেষ্টায় সন্ধ্যাবেলায় বিপ্লবী স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের জন্ম হয়। এ কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। দশজন শব্দ সৈনিক কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ভবনে রক্ষিত এক কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ট্রান্সমিটার বহন করে সীমান্তের ওপারে আগরতলায় নিয়ে আসে এবং বিক্ষিপ্তভাবে অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করে।
৩. স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার : কসবা আখাউড়া কেন্দ্র ১১ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের একটি রেকর্ডকৃত ভাষণ বারবার প্রচার করা হয়।
৪. স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র, কলকাতা : ২৫ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র কলকাতা থেকে প্রচারিত হয়। মিডিয়াম ওয়েভ ৩৬১.৪৪ মিটার ব্যান্ডে প্রতি সেকেন্ডে ৮৩০ কিলোসাইকেলে একটিমাত্র স্টুডিও থেকে দৈনিক সকাল ৭টা ও সন্ধ্যা ৭টায় মাত্র দুটো অধিবেশন দিয়ে শুরু করে যাত্রা। এ কেন্দ্র থেকে মুজিবনগর সরকারের দিকনির্দেশনা, ভাষণ প্রভৃতি প্রচার করত এবং বিভিন্ন দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠান প্রচার করত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুজিবনগর সরকার প্রতিকূল পরিবেশ থেকেও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল । মুক্তিযোদ্ধাদের রণাঙ্গনে উজ্জীবিত ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র।