ভূমিকা: স্থানীয় সরকারের মূলনীতি সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য প্রশ্নটি তৈরি করা হয়েছে। এটি বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সরকারের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তা করার জন্য করা হতে পারে। প্রশ্নটি দিয়ে তারা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন দিক ও নীতিগুলি সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করতে পারে।
স্থানীয় সরকার: স্থানীয় সরকার হলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা। এটি রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নিচের স্তরে অবস্থিত এবং স্থানীয় জনগণের চাহিদা পূরণ ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য কাজ করে।
অধ্যাপক আর. এম. জ্যাকসন (Prof. R.M. Jackson) বলেছেন, “Local government is essentially a method of getting various services for the benefit of the community.” অর্থাৎ, স্থানীন সরকার মূলত সম্প্রদায়ের কল্যাণে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালনা করার এক পদ্ধতি বিশেষ।
হেনরি ম্যাডিক (Henry Maddick) এর মতে, “Public organization authorized to decide and administer a limited range of public policies with in a relatively small territory which is a subdivision of a regional or national government.” অর্থাৎ, এটি একটি জনসংগঠন যা কেন্দ্রিয় অথবা প্রাদেশিক সরকারের কোনো একটি ক্ষুদ্র এলাকায় সীমিত পরিমাণে দায়িত্ব পালন করে। অধ্যাপক রবসন (Robson) এর মতে, “Local government is a form of evict’ self-expression per experience.”
স্থানীয় সরকারের মূলনীতি: স্থানীয় সরকারের মূলনীতি হলো সেই নীতিমালা যা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বেশ কিছু মূলনীতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
প্রধান মূলনীতিগুলো হল:
গণতন্ত্র: স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহি। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের চাহিদা অনুসারে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে।
বিকেন্দ্রীকরণ: কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ক্ষমতা ও কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিকেন্দ্রীভূত করা হয়। এর ফলে স্থানীয় জনগণের চাহিদা অনুসারে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়।
সহযোগিতা: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো, কেন্দ্রীয় সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং জনগণের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন সাধন করা হয়।
স্বায়ত্তশাসন: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নিয়ম-কানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবগত রাখে এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহি করে।
সুশাসন: ন্যায়বিচার, নীতিশাস্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের নীতি অনুসরণ করে স্থানীয় সরকার পরিচালিত হয়।
জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি : স্থানীয় সরকারের অন্যতম একটি মূলনীতি হচ্ছে জনগণের দ্বারা প্রতিনিধি নির্বাচন করা। সকল স্তরেই প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা কার্যকর করা প্রয়োজন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জনগণই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।
জনগণের অংশগ্রহণ: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
এই মূলনীতিগুলো ছাড়াও, স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯-এ আরও কিছু নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে: স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা ও কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
উপসংহার: স্থানীয় সরকারের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সরকারি কার্যক্রমের কাঠামো তৈরি করতে পারেন। এটি তাদের সরকারি কার্যক্রমের পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রতিফলিত করে, যাতে স্থানীয় সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান ও উন্নয়ন হতে পারে।